২১, ৭, ৩১, ৪১ ও ২৬ রানে অলআউট—কোথা থেকে এল এরা
ফেসবুক পেজে কাউন্টডাউন চলছিল গত ১১ নভেম্বর থেকে। আর মাত্র ১২ দিন, আর মাত্র ১১ দিন, আর মাত্র ...। বহুল প্রতীক্ষার ‘মাত্র’ পেরিয়ে ‘আসল দিন’ এল ২৩ নভেম্বর। আর এল ঠিকই কিন্তু মহাসমারোহে নয়, বিভীষিকা হয়ে। প্রতিপক্ষ তুলল ১৮৯ রান, তাড়া করতে নেমে দল অলআউট ২১ রানে।
দুর্গতির সেটি শেষ নয়, শুরু। পরের দিন আবার খেলা। এবার অলআউট ৭ রানে! রীতিমতো ভূকম্পনই ঘটে গেল ক্রিকেট–বিশ্বে। ২০ ওভারের খেলায় ১১ জন মিলে মোটে ৭ রান! নতুন বিশ্ব রেকর্ড। এরপর একটা করে ম্যাচ খেলতে নামা, আর ৩১, ৪১ আর ২৬ রান নিয়ে দিন শেষ করা।
এক–দুই ম্যাচ নয়, টানা পাঁচ—এমন যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাওয়া দলটির নাম আইভরিকোস্ট। ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইয়ে আফ্রিকা অঞ্চলের ‘সি’ গ্রুপে এমন হাল হয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দলটির। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টির হালনাগাদ তথ্য–উপাত্ত বলছে, টি–টোয়েন্টির সর্বনিম্ন স্কোর তো আছেই, দলীয় সর্বনিম্ন রানের ১২টি ইনিংসের মধ্যে ৩টিই এই আইভরিকোস্টের। এমনকি এই দলটির সব কটি স্কোরই ৫০–এর নিচে।
‘সব কটি’ ইনিংস বললে যতটা বাজে বোঝায়, বাস্তবে আইভরিকোস্টের ৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়া হয়তো ততটা নয়। কারণ, দলটি আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি খেলেছেই পাঁচটি। ২০২২ সালে আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ পাওয়া আইভরিকোস্ট বিশ্বকাপ বাছাই দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছে। আর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বলেই নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেসবুক পেজে কাউন্টডাউন শুরু করেছিল ফেডারেশন আইভরি দ্য ক্রিকেট বা এফআইভিসি।
আটলান্টিক তীরে অবস্থিত আইভরিকোস্ট মূলত ফুটবল–প্রধান দেশ। দিদিয়ের দ্রগবা, ইয়াইয়া তোরে, ফ্রাঙ্ক কেসির মতো ফুটবলাররা ইউরোপে মাতিয়েছেন ও মাতাচ্ছেন। আফ্রিকান অঞ্চলে ক্রিকেটের শুরুটা হয়েছিল সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোর মাধ্যমে। যা এখন সাবেক ফ্রেঞ্চ উপনিবেশ আইভরিকোস্টেও ছড়িয়ে পড়েছে।
দেশটিতে ক্রিকেট ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০১৪ সালে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এফআইভিসির প্রেসিডেন্ট দোসো মেকরোকরো। ইমার্জিংক্রিকেট ডটকমে প্রতিবেদন অনুসারে, আইসিসির সহযোগী সদস্য পদ পাওয়ার আগে আইভরিকোস্ট ছেলেদের আটটি ক্লাব এবং মেয়েদর পাঁচটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে ক্রিকেটের চর্চা চালিয়েছে। ছিল ৯টি জুনিয়র দলও। দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া এমনকি উগান্ডায় ক্রিকেটের প্রচলন কয়েক দশকের হলেও আইভরিকোস্ট ছিল বহুদূরে।
দেশটিকে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে এফআইভিসির প্রেসিডেন্ট মেকরোকরো বলেছিলেন, ‘টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখেই আমার ভালো লেগেছিল। সঙ্গে সঙ্গেই পছন্দ হয়েছে। আমি এক তরুণকে ক্রিকেট শিখতে এক বছরের জন্য ঘানায় পাঠিয়েছিলাম। সে ফিরে আসার পর আমরা ২০১৫ সালে কোচদের জন্য একটা অনুশীলন কোর্স পরিচালনা করি। এভাবেই এ দেশে ক্রিকেটের আবির্ভাব ঘটেছে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আইভরিকোস্টের আবির্ভাব যে ভালো কিছু হয়নি, তা অভিষেক টুর্নামেন্টই বলে দিচ্ছে। প্রথম ম্যাচে সিয়েরা লিওনের কাছে ২১ রানে অলআউট হওয়ার পরের দিন নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ৭ রানে শেষ। যা আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে সর্বনিম্ন রানের নতুন বিশ্ব রেকর্ড।
২৬ নভেম্বর বসতোয়ানার বিপক্ষে অবশ্য এক অঙ্ক পেরিয়ে দুই অঙ্কে গেছে রান, অলআউট হওয়ার আগে ওঠানো গেছে ৩১ রান। পরের দিন ইসোয়াতিনির (সাবেক সোয়াজিল্যান্ড) বিপক্ষে আরও বেশি—৪১। তবে শেষ ম্যাচে সেন্ট হেলেনার বিপক্ষে আবার নিচের দিকে, অলআউট ২৬ রানে।
প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে প্রথম পাঁচ ম্যাচেই ৪১ রানের মধ্যে অলআউট—টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটকে নতুন এক মাত্রাই দিল আইভরিকোস্ট।