মোস্তাফিজ: ডট ডট ডট ডট....

মোস্তাফিজুর রহমানএএফপি

শিরোনামটা অদ্ভুত লাগতে পারে। কেউ কেউ ভাবতে পারেন, নিশ্চয়ই কোনো ভুল হয়েছে! আসলে ব্যাপারটি তেমন নয়।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটে ওঠা ৮টি দলের পেসারদের মধ্যে গ্রুপপর্বে মোস্তাফিজ ‘ডট’ বল করেছেন সবচেয়ে বেশি। ৬৭টি!

আরও পড়ুন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘ডি’ গ্রুপে ৪ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। মোস্তাফিজ এই চার ম্যাচেই খেলেছেন এবং নিজের বোলিংয়ের পুরো কোটা (৪ ওভার) শেষ করেছেন। এই চার ম্যাচে তাঁর ‘ডট’গুলো দেখে নেওয়া যাক—১৪ (শ্রীলঙ্কা), ১৬ (দক্ষিণ আফ্রিকা), ১৭ (নেদারল্যান্ডস) ও ২০ (নেপাল)। সব মিলিয়ে ৬৭টি ডট। মানে এই ৬৭টি বৈধ ডেলিভারিতে মোস্তাফিজ রান দেননি।

এই চার ম্যাচে মোস্তাফিজ মোট ১৬ ওভার বল করেছেন। অর্থাৎ ৯৬টি বৈধ ডেলিভারির মধ্যে ৬৭ বলেই মোস্তাফিজ রান দেননি। অর্থাৎ প্রায় ৭০ শতাংশ (৬৯.৭৯%) বলেই রান দেননি মোস্তাফিজ।

বাংলাদেশের সুপার এইটে ওঠার পেছনে বড় অবদান মোস্তাফিজের
আইসিসি

একটি ব্যাপার জানিয়ে রাখা উচিত। সুপার এইটে ওঠা ৮টি দলের সব পেসার কিন্তু গ্রুপপর্বে নিজ নিজ দলের হয়ে সব ম্যাচে খেলেননি। অস্ট্রেলিয়ার পেসার জশ হ্যাজলউড যেমন নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেননি। একই দলের আরেক পেসার প্যাট কামিন্স ওমান ও নামিবিয়ার বিপক্ষে খেলেননি। আবার ইংল্যান্ডের পেসার রিস টপলি খেলেননি দুটি ম্যাচে। ক্রিস জর্ডান খেলেননি দুটি ম্যাচে। আবার গ্রুপপর্বে ম্যাচ বৃষ্টিতেও ভেসে গেছে। সে কারণে কিছু পেসার নিজেদের ‘ডট’ বলসংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ পাননি। তবে গ্রুপপর্বে নিজ নিজ দলের হয়ে চারটি ম্যাচেই খেলা পেসারও কিন্তু কম নেই।

আরও পড়ুন

দক্ষিণ আফ্রিকার চার পেস ব্যাটারি মার্কো ইয়ানসেন, কাগিসো রাবাদা, ওটনিল বার্টম্যান ও আনরিখ নর্কিয়া গ্রুপপর্বে সবগুলো ম্যাচই খেলেছেন। আফগানিস্তানের ফজলহক ফারুকি ও নাভিন উল হকও গ্রুপপর্বে সব ম্যাচে খেলেছেন। কানাডা-ভারত ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও ভারতের হয়ে অন্য তিনটি ম্যাচেই খেলেছেন—মোহাম্মদ সিরাজ, যশপ্রীত বুমরা, অর্শদীপ সিং, হার্দিক পান্ডিয়া।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেলও গ্রুপপর্বে নিজ দলের সব ম্যাচ খেলেছেন। বাংলাদেশ দলে মোস্তাফিজের সতীর্থ দুই পেসার তানজিম হাসান এবং তাসকিন আহমেদও গ্রুপপর্বে সব ম্যাচ খেলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক গ্রুপপর্বে তিন ম্যাচ খেলেছেন।  সে যাকগে, মোস্তাফিজ না হয় সুপার এইটে ওঠা দলগুলোর পেসারদের মধ্যে গ্রুপপর্বে ‘ডট’ দেওয়ায় সেরা, কিন্তু দ্বিতীয় সেরা কে?

ওটনিল বার্টম্যান।

দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ওটনিল বার্টম্যান
এএফপি

মোস্তাফিজের মতোই দক্ষিণ আফ্রিকার এই পেসার ‘ডেথ ওভার’ বিশেষজ্ঞ। গ্রুপপর্বে চার ম্যাচে তিনি মোট ৬৩টি ডট দিয়েছেন—২০ (শ্রীলঙ্কা), ১৭ (নেদারল্যান্ডস), ১১ (বাংলাদেশ) ও ১৫ (নেপাল)। এই চার ম্যাচেই নিজের বোলিংয়ের কোটা (৪ ওভার) পূরণ করেছেন বার্টম্যান। অর্থাৎ মোট ১৬ ওভারে ৯৬টি বৈধ ডেলিভারির মধ্যে ৬৩টি বল ডট দিয়েছেন, শতকরা হিসাবে যা ৬৫.৬২ শতাংশ। তৃতীয় সেরাতে আছেন আরেক বাংলাদেশি পেসার!

তবে যৌথভাবে। তানজিম হাসান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার আনরিখ নর্কিয়া।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের পেসার তানজিমের ডট বলের হিসাবটা আগে দেওয়া যাক—১৪ (শ্রীলঙ্কা), ১৭ (দক্ষিণ আফ্রিকা), ৯ (নেদারল্যান্ডস) ও ২১ (নেপাল)। সব মিলিয়ে গ্রুপপর্বে ৬১টি বৈধ ডেলিভারি ডট দেন তানজিম। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার নর্কিয়াও গ্রুপপর্বে ৬১টি ডট বল করেছেন—১৮ (শ্রীলঙ্কা), ১৪ (নেদারল্যান্ডস), ১৪ (বাংলাদেশ) ও ১৫ (নেপাল)।

তবে নর্কিয়ার তুলনায় তানজিম একটি জায়গায় এগিয়ে।

ডট দেওয়ার হারে নর্কিয়ার চেয়ে এগিয়ে তানজিম। কারণ গ্রুপপর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার চার ম্যাচেই নিজের বোলিংয়ের (৪ ওভার) কোটা পূরণ করেছেন নর্কিয়া। তানজিম নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩ ওভার বল করলেও অন্য তিনটি ম্যাচে নিজের বোলিংয়ের (৪ ওভার) কোটা পূরণ করেছেন। অর্থাৎ নর্কিয়া গ্রুপপর্বে করেছেন মোট ১৬ ওভার এবং তানজিম করেছেন ১৫ ওভার। অর্থাৎ, নর্কিয়া মোট ৯৬টি বৈধ ডেলিভারির মধ্যে ৬১টি বল ডট দিয়েছেন—শতকরা হিসাবে তাঁর ডট দেওয়ার হার ৬৩.৫৪ শতাংশ।

বাংলাদেশের পেসার তানজিম দুর্দান্ত ফর্মে আছেন
আইসিসি

তানজিম যেহেতু ১৫ ওভার বোলিং করেছেন তাই তাঁর মোট বৈধ ডেলিভারির সংখ্যা ৯০টি। এই ৯০ বলের মধ্যে ৬১টি ডট দেওয়ায় শতকরা হিসাবে তাঁর হার ৬৭.৭৭%।
এবার সুপার এইটে ওঠা ৮টি দলের পেসারদের মধ্যে ডট দেওয়ায় নিজ নিজ দলে কারা শীর্ষে সেটি দেখে নেওয়া যাক।

বাংলাদেশ দলে মোস্তাফিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বার্টম্যানের কথা তো আগেই বলা হলো। অস্ট্রেলিয়া দলে পেসারদের মধ্যে মিচেল স্টার্ক গ্রুপপর্বে তিন ম্যাচ খেলায় তাঁর এগিয়ে থাকাই স্বাভাবিক। কারণ অন্য দুই পেসার হ্যাজলউড ও কামিন্স দুটি করে ম্যাচ খেলেছেন। স্টার্ক তিন ম্যাচে মোট ১০ ওভার বল করে ২৯টি ডট বল করেছেন। হ্যাজলউড দুই ম্যাচে ২২টি এবং কামিন্সও দুই ম্যাচ খেলে ২১টি ডট দিয়েছেন।

ভারতের পেসারদের মধ্যে গ্রুপপর্বে তিন ম্যাচ খেলা পেস অলরাউন্ডার পান্ডিয়া মোট ১২ ওভার বল করে ৪৫টি ডট দিয়েছেন। বুমরা ও অর্শদীপ দিয়েছেন ৪২টি ডট এবং ৩৬টি ডট দিয়েছেন সিরাজ। ইংল্যান্ডের পেসারদের মধ্যে জফরা আর্চার মোট ৯.২ ওভার বল করে সর্বোচ্চ ৩৩টি ডট দিয়েছেন। দুটি করে ম্যাচ খেলা উড ও টপলি ডট দিয়েছেন সমান ১৯টি করে।

আফগানিস্তানের পেসার ফজলহক ফারুকি
আইসিসি

আফগানিস্তানের পেসারদের মধ্যে চার ম্যাচ খেলা ফজলহক ফারুকি মোট ১৪.২ ওভার বল করে ৫৪টি ডট দিয়েছেন। সমানসংখ্যক ম্যাচ খেলা তাঁর সতীর্থ নাভিন দিয়েছেন ৪৫টি ডট। তিন ম্যাচে ২৩টি ডট আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের মধ্যে চার ম্যাচই খেলা আলজারি জোসেফের ডটসংখ্যা ১৪ ওভারে ৪৫টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯টি ডট চার ম্যাচ খেলা আন্দ্রে রাসেলের। তিন ম্যাচ খেলা রোমারিও শেফার্ড দিয়েছেন ১৮টি ডট। যুক্তরাষ্ট্রের পেসারদের মধ্যে তিন ম্যাচ (আয়ারল্যান্ড ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যায়) খেলা সৌরভ নেত্রবালকার মোট ১০ ওভারে ২৯টি ডট দিয়েছেন। সমানসংখ্যক ম্যাচ খেলে ২৭টি ডট দিয়েছেন আলি খান, ২২টি ডট জেসি সিংয়ের।

আরও পড়ুন

মোস্তাফিজের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। গ্রুপপর্বে ৪ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৭টি, গড় ১০.২৮। মোস্তাফিজের ইকোনমিও অবিশ্বাস্য (৩.৩৭)। এখন পর্যন্ত মোস্তাফিজ ডেথ ওভারে বল করেছেন ৬ ওভার, মাত্র ১০ রান দিয়েছেন রান দিয়েছেন! নেপালের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে তো ১৯তম ওভারে কোনো রান না দিয়েই নিয়েছেন উইকেট। সেই ওভারে তাঁর কাটারগুলো নেপালের ব্যাটসম্যানেরা পড়তেই পারেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পিচ এমনিতেই খানিকটা স্পিনবান্ধব, বল ‘বাইট’ পায়—যে কারণে মোস্তাফিজের কাটারও উইকেটে ভালোই ধরছে।

অর্থাৎ সুপার এইটে গ্রুপ ১-এ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের জন্যও অপেক্ষা করছে মোস্তাফিজ ‘পরীক্ষা’।