যেসব লড়াইয়ে ফয়সালা হতে পারে বিশ্বকাপ ফাইনালের ভাগ্য

আহমেদাবাদে আজ ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া

ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ২০ বছর পর আবার দেখা যাবে ভারত-অস্ট্রেলিয়া দ্বৈরথ। ভারত এবার বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য ক্রিকেট খেলছে, আর অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের সফলতম দল।

কদিন আগে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেছিলেন, দাপুটে ভারতকে যদি কেউ থামাতে পারে, তবে সেটিই অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তাই রোমাঞ্চকর এক লড়াইয়ের প্রত্যাশায় ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে এই লড়াইয়ে ভাগ্য নির্ধারিত হতে পারে ম্যাচের কিছু বিষয় ও পরিস্থিতিতে। বার্তা সংস্থা এএফপির বিশ্লেষণে সেগুলো কী কী জেনে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুন

ভালো শুরু:

ভারতের ওপেনিংয়ে দারুণ খেলছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ভারতের ব্যাটিংয়ে আগ্রাসী রূপের অন্যতম রূপকারও রোহিত। ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ভালো শুরুর ভিত গড়ে দিচ্ছেন। মুম্বাইয়ে সেমিফাইনালের কথাই ধরা যাক। বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার সেঞ্চুরি করলেও দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন রোহিত। সেটি নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট বোলারদের গুঁড়িয়ে ২৯ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে। তাতে পরের ব্যাটসম্যানদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। রোহিতের সঙ্গী হিসেবে শুবমান গিলও নিজের সেরাটা দিচ্ছেন।

ভারতের হয়ে ওপেনিংয়ে দারুণ করছেন রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল
ছবি: এএফপি

বোলিংয়েও শুরু থেকেই দুর্দান্ত ভারত। তবু কোনোভাবে যশপ্রীত বুমরা ও মোহাম্মদ সিরাজের বিরুদ্ধে টিকে গেলেও এরপরই মুখোমুখি হতে হবে মোহাম্মদ শামির। ৬ ম্যাচে ২৩ উইকেট নেওয়া শামি এই বিশ্বকাপে শুধু সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিই নয়, রীতিমতো ভয়ংকর! নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালেই ৫৭ রানে ৭ উইকেট নেন শামি। ভারতের বোলিংয়ের শুরুতে এই তিন পেসারই মূলত যেকোনো দলের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছেন। ফাইনালেও ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন।

আরও পড়ুন

ভারতের মতো অস্ট্রেলিয়াও ব্যাটিং-বোলিংয়ে ভালো শুরুর ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। জশ হ্যাজলউড ও মিচেল স্টার্ক যেমন সেমিফাইনালে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার। ২৪ রানে তুলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে তেমন কিছু করতে পারলে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে।

ব্যাটিংয়েও অস্ট্রেলিয়ার বড় ভরসা দুই ওপেনার। লো-স্কোরিং সেমিফাইনালেও ট্রাভিস হেডের ৬২ রান বড় ভূমিকা রেখেছিল অস্ট্রেলিয়ার জয়ে। সেমিফাইনালে জ্বলে উঠতে না পারলেও টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ খেলেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ৫২৮ রান করেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার।

ফিল্ডিংয়ে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে অস্ট্রেলিয়া
ছবি: এএফপি

ফিল্ডিং:

ফিল্ডিংয়ে অনেক দিন ধরেই মানদণ্ড তৈরি করে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। শুধু ক্যাচ নেওয়াই নয়, প্রতিটি রান বাঁচাতে তাদের চেষ্টা মুগ্ধতা জাগাচ্ছে। রান আউটের সুযোগগুলোও কাজে লাগাচ্ছে দারুণভাবে। ভারতের ব্যাটসম্যানদের রান তোলায় মারনাস লাবুশেন-গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা কতটা বাধা দিতে পারছেন, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।

একসময় বাজে ফিল্ডিংয়ের জন্য সমালোচনার মুখে থাকত ভারত। এটাকে তাদের দুর্বলতা হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। আউটফিল্ড ফিল্ডিংয়েও ভারতের দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ভারত ধীরে ধীরে ফিল্ডিংয়ে দারুণ উন্নতি করেছে। এখন বিশ্বের একাধিক সেরা ফিল্ডার রয়েছে এই দলে। রবীন্দ্র জাদেজা-বিরাট কোহলিরা ফিল্ডিংয়ে দুরূহ ক্যাচ নেওয়া কিংবা রান বাঁচানো—দুটিতেই সমান কার্যকর।

আরও পড়ুন

চাপ:

যেকোনো ফাইনাল মানেই চাপ। আর বিশ্বকাপ ফাইনাল হলে তো কথাই নেই! একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, অস্ট্রেলিয়াকে শেষ বলের আগপর্যন্ত হারানো যায় না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করাটা তাদের মজ্জাগত। এই বিশ্বকাপেই একাধিকবার সেই প্রমাণ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আফগানিস্তানের বিপক্ষে যেমন ৯১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল খেলেছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস। ২০১ রান করে জয় এনে দেন দলকে। সেমিফাইনালেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও চাপ সামলে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাই চাপে ভেঙে না পড়াটা ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এগিয়ে দিতে পারে অস্ট্রেলিয়াকে।

বিশ্বকাপে ভারতকে এখনো সেভাবে চাপের মুখে পড়তে হয়নি। ফাইনালে কী হতে পারে
ছবি: এএফপি

ভারতকে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সেভাবে চাপের মুখে পড়তে হয়নি। তবে লিগ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান তাড়ায় ম্যাচের শুরুতে উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছিলেন কোহলিরা। সেই চাপ সামলে ঠিকই জয় তুলে নেয় তারা। তবে ফাইনালের চাপটা অন্য রকম হবে। ভারত ২০১৩ সালের পর থেকে আইসিসি টুর্নামেন্টে নকআউট পর্বে উঠে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ফাইনালে চাপটা আরও বেশি থাকবে এবং সেই চাপ জয়ের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা ও মানসিকতাও আছে ভারতের স্কোয়াডে।