পাকিস্তান ক্রিকেটের ‘প্রিন্সেস’ ডায়না

পাকিস্তানের অনুশীলনে ডায়না বেগছবি: শামসুল হক

বয় কাট চুল, জার্সিতে লেখা ‘ডায়না’। লম্বা রান আপ, সুন্দর বোলিং অ্যাকশন। এরপর হাত থেকে যেটা ছাড়েন, সেটায় মিশে থাকে গতি আর সুইং। কথাবার্তায় ফুটে ওঠে ব্যক্তিত্বের ছাপ। স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষায় পড়াশোনা করা ডায়না পাকিস্তান নারী জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা একমাত্র খেলোয়াড়।

পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের গিলগিত-বালতিস্তানে জন্ম। সাত হাজার মিটারের বেশি উঁচু পাহাড় আর হিমবাহে ঢাকা পাকিস্তানের এ অঞ্চলে এখনো আধুনিকতার স্পর্শ লাগেনি। সেটি এতটাই যে এখনো বাড়ি গেলে বোরকা ছাড়া বাইরে যান না ডায়না।

২৬ বছর বয়সী ডায়নার উত্থান সেখান থেকেই। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ডায়না শোনালেন তাঁর জন্মস্থানের গল্প, ‘গিলগিত জায়গাটা লাহোর, করাচি বা ইসলামাবাদের মতো আধুনিক নয়। খুব রক্ষণশীল একটা সমাজ। ঘর থেকে বের হতে মেয়েদের ওড়না বাধ্যতামূলক। বোরকাও পরতে হয়। ঘরের বাইরে মেয়েদের খেলাধুলা একদম নিষেধ। ১০ বছর আগে যেমন ছিল, এখনো ঠিক তেমনই আছে। আমিও এখনো ঘরের বাইরে খেলতে পারি না।’

ফুটবলও খেলেছেন ডায়না বেগ
ছবি: শামসুল হক

তাতে স্বপ্ন থেমে থাকেনি ডায়নার। পড়াশোনা করতে লাহোর এসে তিনি ঢুকে পড়েন অ্যাথলেটিকসে। জ্যাভলিন, শট পুট, বাস্কেটবল, ফুটবল, ক্রিকেট—বিশ্ববিদ্যালয়ের সব খেলাতেই থাকত ডায়নার নাম। তবে পেশাদার খেলোয়াড় হওয়ার সুযোগটা আসে ফুটবলের হাত ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে খুব দ্রুতই তিনি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান। পাহাড়ি এলাকার মেয়ে, স্ট্যামিনা ভালো। সে জন্য সুযোগটাও এসে যায় দ্রুত। পাকিস্তানের হয়ে খেলে ফেলেন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মতো বড় আসরে।

২০১৫ সালে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ফিফা। ডায়নাও ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেটে মন দেন। তাতে হয়তো পাকিস্তান ফুটবলের ক্ষতি হয়েছে, তবে লাভ হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেটের। জ্যাভলিন ও শট পুটে দক্ষতা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাথলেটিকস কোচ ডায়নাকে পেস বোলিং করতে বলেন। ছোটবেলায় শোয়েব আখতার ছিলেন তাঁর পছন্দের পেসার। বল হাতে এবার নিজেও চাইলেন মেয়েদের ‘শোয়েব আখতার’ হয়ে উঠতে।

ডায়না বলছিলেন, ‘ফুটবলের প্রতি আমার আলাদা ঝোঁক ছিল। পরে ক্রিকেটে চলে আসি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি অনেক ধরনের খেলায় অংশ নিতাম। জ্যাভলিন, শট পুট থ্রো করতাম। পেস বোলিংয়ের শুরুটা সেখান থেকেই।’

শৈশবে পেসারদের মধ্যে শোয়েব আখতারকে পছন্দ করতেন ডায়না
ছবি: শামসুল হক

পাকিস্তানের হয়ে এখন পর্যন্ত ৮২টি ম্যাচ খেলে ৬৭ উইকেট নিয়েছেন ডায়না। এবারের এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত সেরা পেসারদের একজন তিনি। ডায়নার উঠে আসার গল্পের সঙ্গে তাঁর এই জীবন, মাঠের পারফরম্যান্স—কোনোটাই যায় না। তাঁর নিজের কাছেও এই যাত্রা স্বপ্নের মতো, ‘আমার নিজের চেষ্টা, সাধনা তো ছিলই। কিন্তু আমি যে অঞ্চলের মানুষ, সেখানে পরিবারের সমর্থন না পেলে এত দূর আসতে পারতাম না।’

স্বপ্ন দেখেছেন বলেই এতটা পথ পারি দিতে পেরেছেন ডায়না
ছবি: শামসুল হক

১৯৯৫ সালে জন্ম নেওয়া ডায়না বেগের নাম কেন ‘ডায়না’, সেটি বুঝতে কারও খুব অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। প্রিন্সেস ডায়ানার জনপ্রিয়তা দেখেই ডায়নার বাবা মেয়ের নাম রেখেছিলেন ডায়ানার মতো করে। কে জানত, একদিন সেই ডায়নাই হয়ে উঠবেন পাকিস্তানের ক্রিকেটের প্রিন্সেস!