‘পেইন-কিলার’ মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে শুভকামনা জানালেন হৃদয়

জাতীয় দলের জার্সিতে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তাওহিদ হৃদয়।তাওহিদ হৃদয়ের ফেসবুক পোস্ট থেকে

কেউ লিখেছেন ‘লিজেন্ড’, কেউ লিখেছেন ‘মিস করব’। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়া মাহমুদউল্লাহকে তার অবদানের জন্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানিয়েছেন জাতীয় দলের বর্তমান ও সাবেক সতীর্থদের অনেকেই। জাতীয় দলে মাহমুদউল্লাহকে সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে পাওয়া তাওহিদ হৃদয়ও জানিয়েছেন শুভকামনা।

আর হৃদয়ের সেই শুভকামনা-বার্তায় উঠে এসেছে ‘পেইন কিলার’ প্রসঙ্গ। ২০২৩ সালে জাতীয় দলে পা রাখা হৃদয় আজ মাহমুদউল্লাহর অবসর ঘোষণার পর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ছোটবেলায় টিভির সামনে বসে দেখা প্রত্যেকটা ব্রিলিয়ান্ট মুহূর্তের জন্য ধন্যবাদ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই। সবাই আপনাকে সাইলেন্ট কিলার ডাকলেও, আমাদের বন্ধুমহলে আপনার নাম ছিল ‘‘পেইন-কিলার’’। এমন অনেক ম্যাচ আছে যেগুলোর শেষ মুহূর্তের রিলিফ আপনার থেকে উপহার পেয়েছি।’

হৃদয়ের কথায় স্পষ্ট, ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ দলকে সংগ্রাম করতে দেখাটা দর্শক হিসেবে হৃদয়ের জন্য ছিল ‘পেইন’, যেখানে থেকে দলকে উদ্ধার করে স্বস্তি এনে দিতেন মাহমুদউল্লাহ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ছোট ছোট ইনিংস খেলে দলকে বিপদ থেকে বাঁচিয়েও ব্যাপকভাবে আলোচিত না হওয়ায় মাহমুদউল্লাহকে অনেকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ নামে ডাকতেন। তবে হৃদয়ের সংজ্ঞায় ‘সাইলেন্ট কিলার’ মাহমুদউল্লাহ আসলে ‘পেইন-কিলার’।

মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে তাওহিদ হৃদয়ের ফেসবুক পোস্ট।
স্ক্রিনশট

তবে ‘পেইন-কিলার’ শব্দটি এত দিন মাহমুদউল্লাহর সমালোচনাতেই বেশি ব্যবহৃত হয়েছে বলে অনেকে এর মধ্যে মজা খুঁজে পাচ্ছেন। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে স্কটল্যান্ডের কাছে হারের পর তুমুল সমালোচিত ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, কড়া প্রতিক্রিয়া শুনিয়েছিলেন তৎকালীন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও।

এরপর পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে বাংলাদেশ দল চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করলে সংবাদ সম্মেলনে এসে জমিয়ে রাখা ক্ষোভ উগরে দেন মাহমুদউল্লাহ। তখন টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা মাহমুদউল্লাহ সে দিন বলেছিলেন, ‘সবারই ব্যথা থাকে, কারও অনেক ইনজুরি থাকে ওইগুলা নিয়েই আমরা খেলি। দিনের পর দিন পেইন কিলার খেয়েই আমরা খেলি। হয়তো বিহাইন্ড দা সিন অনেকে এইগুলা জানে না। কাজেই নিবেদন নিয়ে কথা বলা ঠিক না।’

আরও পড়ুন

আজ মাহমুদউল্লাহর অবসরের পর সেই ‘পেইন-কিলার’ই ভিন্ন অর্থে ফিরিয়ে এনেছেন হৃদয়। শেষে লিখেছেন, ‘আমার দোয়ায় থাকবেন আপনি, যেমনটি সব সময় ছিলেন, অবসরজীবনের জন‍্য শুভকামনা।’

মাহমুদউল্লাহর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণার পর তাঁর জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন আরও অনেকেই। দীর্ঘদিনের সতীর্থ তামিম ইকবাল লিখেছেন, ‘রিয়াদ ভাই, বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সম্পূর্ণ করার জন্য অভিনন্দন। আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভ এবং মাঠে এবং মাঠের বাইরে আমাদের অনেকের অনুপ্রেরণা। ড্রেসিংরুমে আমাদের ভাগাভাগি করা স্মৃতিগুলো লালন করব। দেশের ক্রিকেটে আপনার অবদানের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং আগামী দিনগুলির জন্য শুভকামনা...।’

বাংলাদেশ দলের টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন লিখেছেন, ‘বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবদানের জন্য রিয়াদ ভাই আপনাকে ধন্যবাদ। ড্রেসিংরুমে আপনাকে অবশ্যই মিস করব এবং মাঠে ও মাঠের বাইরে আপনার কর্মকাণ্ড থেকে অনুপ্রেরণা নেব। আপনি আমাদের অনেককে অনুপ্রাণিত করেছেন এবং অনেক দিন ধরে তা করে যাবেন...। আপনার ভবিষ্যতের প্রচেষ্টার জন্য শুভকামনা...।’

আরও পড়ুন

তাসকিন আহমেদ ‘রেসপেক্ট’ ও ‘লিজেন্ড’ ট্যাগ যুক্ত করে লিখেছেন, ‘আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি বিদায় জানালেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভাই, আপনার সাথে মাঠে সময় কাটানোটা ছিল এক পরম সম্মানের। আপনার শান্ত উপস্থিতি, ম্যাচজয়ী পারফরম্যান্স এবং নেতৃত্ব কখনোই ভোলা যাবে না। আপনি আমার মতো একটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছেন। জীবনের এই নতুন অধ্যায়ে আপনার জন্য শুভকামনা। শুভ অবসর, রিয়াদ ভাই!’

তাসকিনের মতো মাহমুদউল্লাহকে এক দশক ধরে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন লিটন দাস , সৌম্য সরকার। লিটন লিখেছেন, ‘মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভাই, আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিয়েছেন। আপনার কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। আপনার অধিনায়কত্বে খেলা এবং ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করা আমার জন্য এবং আমার বিশ্বাস আমাদের অনেকের জন্যই সৌভাগ্যের ছিল। অবসর-পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা।’

আর সৌম্য লিখেছেন, ‘প্যাশন, নিষ্ঠা এবং অবিস্মরণীয় মুহূর্তের এক যাত্রা। প্রতিটি রান, প্রতিটি উইকেট এবং স্মৃতির জন্য কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ কিংবদন্তি।’

আরও পড়ুন

মাহমুদউল্লাহকে অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন জাতীয় দলের তরুণ ক্রিকেটাররা। ওপেনার তানজিদ হাসান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটে আপনার অসাধারণ প্রতিটি মুহূর্তের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই। শৈশবে ক্রিকেটে দেখা আপনার অসাধারণ সব মুহূর্তই আমার বর্তমানে ক্রিকেটার পরিচয়ের পেছনের অন্যতম অনুপ্রেরণা। পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকা, ছোটভাইয়ের মতো সবসময় আমাকে আগলে রাখা, আদর, যত্ন — সবকিছুর জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনার পরবর্তী অধ্যায় হোক আরো দুর্দান্ত...।’

বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘শুভ অবসর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই। আপনাকে জাতীয় দলে অনেক মিস করবো। আপনার পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা।’

আর লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন লিখেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। একটি যুগের সমাপ্তি।’