বিশ্বকাপ ফুটবলের মধ্যেই লিটন-রোহিতদের ক্রিকেট রোমাঞ্চ

ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি হাতে দুই অধিনায়কছবি: প্রথম আলো

বিশ্বকাপ ফুটবলের মধ্যে যখন ক্রিকেট ঢুকে পড়ে, তখন খেলাটাকে মনে হয় আগন্তুক! ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’–এর তুলনায় ক্রিকেটের বিশ্বকাপকেও যেখানে পাড়ায় পাড়ায় খেলা মনে হয়, তখন একটা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ তো ভাইয়ে ভাইয়ে খেলার মতো! যেন ব্যাপারটা এমন, ‘সবাই তো ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত, আয় আমরা ক্রিকেট খেলি...।’ সেই খেলার উত্তাপ দুই দলের ক্রিকেটারদের ছাড়িয়ে বাইরের আবহ কমই গরম করতে পারে।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ শুরু হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে আসার পর বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক সিরিজ, যে সিরিজের তিনটি ওয়ানডের তাৎপর্য শুধুই এই সিরিজে সীমাবদ্ধ থাকলেও দুই টেস্টের সিরিজটি আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। বিশ্বকাপ ফুটবলের আবহে খেলা হচ্ছে বলেই দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্য একটা অবধারিত মিল থাকতে পারে এবার—ভাগাভাগি হয়ে তাঁরা সবাই নিশ্চয়ই মেসি, রোনালদো অথবা নেইমারের ভক্ত। নিজেদের খেলার অবসরে ক্রিকেটাররা যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা তর্কে মেতে উঠবেন না, সেটাই–বা কে বলতে পারে!

আরও পড়ুন

ভালো কথা, ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ব্যতিক্রম হতেও পারেন। তাঁর প্রিয় দল যেহেতু স্পেন, ওই তিন বিশ্ব তারকার কেউ তাঁর প্রিয় ফুটবলার না হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। একসময় তো সে জায়গাটা দখল করে রেখেছিলেন সাবেক ফ্রান্স তারকা জিনেদিন জিদান।

অনুশীলনে বিরাট কোহলিরা
ছবি: প্রথম আলো

তো বিশ্বকাপ ফুটবলের ডামাডোলের মধ্যে ক্রিকেটাররাই যখন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলে আকাশি-হলুদ হয়ে উঠেছেন, সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের কতটা টানবে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ? কাল শেষ রাত পর্যন্ত আর্জেন্টিনা-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দেখার পর আজ কতজন দর্শক মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামমুখী হবেন? তবে কাল বিকেলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের টিকিট বুথ থেকে পাওয়া খবরে একটু অবাকই হতে হলো। সাধারণ দর্শকদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রথম ওয়ানডের সব টিকিট নাকি বিক্রি হয়ে গেছে! অবশ্য ‘উপহার’ কোটার টিকিট বাঁচিয়ে বিসিবি দর্শকদের জন্য ঠিক কতগুলো টিকিট বরাদ্দ রেখেছে, সেটাও একটা প্রশ্ন। যত দূর জানা গেছে সংখ্যাটা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতার (২৫০০০) অর্ধেকের কম।

আরও পড়ুন

বিশ্বকাপ–উন্মাদনার মধ্যে আজ শুরু হওয়া ক্রিকেট সিরিজ নিয়ে দর্শকদের যেটুকুই আগ্রহ, সেটি মূলত লড়াইটা বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বলেই। বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট দ্বৈরথ মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। যদিও খেলার মাঠে ভারতের আধিপত্যই বেশি থাকে, তবু যখন ২০১৫ বিশ্বকাপের কথা মনে আসে কিংবা সবচেয়ে তাজা এবারের অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচটাও সামনে চলে আসে, মনের মধ্যে ‘এই ব্যবধান তো আমরা কমাতেও পারতাম’ জাতীয় একটা আক্ষেপের ঢেউ তো ওঠেই!

কাল সিরিজ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য লিটন দাস সেই বঞ্চনার তর্কবিতর্কে গেলেন না। শুধু ভাবেসাবে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, রোহিতের ভারতের চোখে চোখ রেখেই কথা বলতে চায় তাঁর দল, ‘ভারত ভালো দল। তাদের খ্যাতি এবং ফর্ম সবই আছে। তবে আমরা ইদানীং তাদের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলছি। তারা আর আমাদের আন্ডারডগ ভাববে না, এটাই বড় ব্যাপার।’

মনের মধ্যে কী আছে কে জানে, তবে প্রকাশ্যে রোহিত যেন লিটনের কথাতেই ওপর-নিচ মাথা নাড়লেন, ‘আমিও মনে করি, এই দুই দলের লড়াইটা গত কয়েক বছরে অনেক রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে। গত সাত-আট বছরে অন্য রকম একটা দলে পরিণত হয়েছে। খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা দল, তাদের বিপক্ষে আমাদের জয়টা এখন আর সহজ হয় না। তাদের বিপক্ষে জিততে আপনাকে ভালো ক্রিকেটই খেলতে হবে।’

আরও পড়ুন

কথাগুলো বলার সময় রোহিত মনে করেছেন এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে হারানোটা যে সহজ হয়নি, সেটি। মনে করেছেন মিরপুরে ২০১৫ সালে ওয়ানডে সিরিজ হারের কথাও। ঘরের মাঠের সিরিজ, বিশেষ করে সেটা যখন হয় ওয়ানডে, তখন গ্যালারির দর্শকেরাও বাংলাদেশের বড় শক্তি হয়ে ওঠেন। ভারত অধিনায়কও মেনে নিয়েছেন, বাংলাদেশে আসা যেকোনো দলের জন্যই এটা একটা বাড়তি চাপ। অবশ্য এই চাপ বিদেশে খেলতে গেলে সব দলকেই নিতে হয়। রোহিত তাই শেষ করলেন এই বলে, ‘এত দর্শকের সামনে খেলে আমরা অভ্যস্ত।’

২০১৬ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির পর ভারতের এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে দলটা এসেছিল তার আগের বছর, যেবার বৃষ্টিতে একমাত্র টেস্টটি ড্র হওয়ার পর ওয়ানডে সিরিজটা তারা হেরেই গেল। আর দুই দলের সর্বশেষ ওয়ানডে সাক্ষাৎ ২০১৯ বিশ্বকাপে বার্মিংহামে। সেই ম্যাচে ভারত জিতলেও এর পর থেকে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের যে সর্বগ্রাসী চেহারা, সেটির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই তাদের। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ১০টি ওয়ানডে সিরিজ খেলে ৭টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের দেশে গিয়ে পাওয়া জয়ও।

ওয়ানডের বাংলাদেশকে তাই রোহিত শর্মার দলের তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই যখন অঘটনের হাওয়া বইয়ে দিচ্ছে, তখন তো আরও নয়। এখন লিটনের বাংলাদেশ যদি পারে আরেকবার দেখাতে, রোমাঞ্চ আছে ক্রিকেটেও!