মাহমুদউল্লাহ প্রমাণ করলেন, তাঁকে উপেক্ষা করা ঠিক ছিল না

ম্যাচের আগের দিন সাকিব আল হাসানের কথা শুনে মনে হচ্ছিল, টসই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে। তবে খেলায় দুই দলের শক্তির বিশাল পার্থক্যটাও ফুটে উঠেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং ও বোলিং বিভাগ যেমন করেছে, তাতে আসলে টসটা আর প্রাসঙ্গিক থাকেনি। কারণ, ব্যাটিংয়ে প্রয়োগ বাজে ছিল, বোলিংয়েও ধারাবাহিক কিছু ছিল না। ম্যাচটা যেমন একপেশে হয়েছে, তাতে বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা দলগুলোর চেয়েও অনুজ্জ্বল লেগেছে বাংলাদেশ দলকে। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।

ইংল্যান্ডের ম্যাচের সঙ্গে এ ম্যাচের উইকেটের একটু পার্থক্য দেখেছি। বোলারদের জন্যও এখানে কিছু ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের প্রথম ভাগে সেটি লক্ষ করা গেছে। কুইন্টন ডি কক ও এইডেন মার্করামের ইনিংস গঠনটা শিক্ষণীয়, বড় দলের ছাপ ছিল সেখানে। আড়াআড়ি খেলেইনি, লং অফ-লং অনে সিঙ্গেল নিয়ে ইনিংস গড়েছে, জোর করে বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করেনি। পরের দিকে উইকেট ক্রমান্বয়ে সহজ হয়ে এসেছে, অর্থাৎ পরে ব্যাটিং করা দলের জন্যও ব্যাটিংটা কঠিন ছিল না।

আরও পড়ুন

অমন ভিত পেয়ে যাওয়ার পর তাদের ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানরা যে ভয়ংকর হয়ে উঠবেন, সেটি জানাই ছিল। বাংলাদেশকে ঘন ঘন বোলিং পরিবর্তন করতে হয়েছে। একজনই যদি ১৭৪ রানের ইনিংস খেলেন, তাহলে আর কিছু করার থাকে না। আর হাইনরিখ ক্লাসেন দারুণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছেন। একটু শর্ট অব আ লেংথ বলেও ব্যাকফুটে গিয়ে মিডউইকেট দিয়ে খেলেছেন। বাংলাদেশের বোলিংয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তেমন কোনো ছাপ দেখিনি। মনে হয়েছে স্পিনাররা ছোট মাঠ দেখে ভয় পেয়ে গেছেন। অথচ দক্ষিণ আফ্রিকানরা ছক্কা মেরেছে বড় বড়। মানে মাঠের আকার তাতে প্রভাব ফেলেনি। নিজের শক্তির ওপরই তাই আস্থা রাখা উচিত। দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলের সঙ্গে লড়াইয়ের যথেষ্ট সামর্থ্য আসলে বাংলাদেশের বোলিংয়ের ছিল না। এরপর মার খেয়ে লাইন-লেংথ সবই হারিয়ে গেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলের সঙ্গে লড়াইয়ের যথেষ্ট সামর্থ্য আসলে বাংলাদেশের বোলিংয়ের ছিল না।
এএফপি

এমন রান তাড়া করার আসলে মানসিকতাই নেই বাংলাদেশ দলের। তবে উইকেট বিবেচনায় লড়াইয়ের সুযোগ ছিল। স্বাভাবিকভাবেই রাতে ইনিংসের শুরুর দিকে নতুন বলটা একটু দেখেশুনে খেলতে হয়। নাজমুল হোসেন প্রথম বলে যেভাবে ডাউন দ্য লেগে আউট হলেন, মুমিনুল হকের বাজে সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয় সেটি। সাকিব ইনিংস মেরামতের দিকে যেতে পারতেন, তাঁর আউটেই সব শেষ হয়ে গেছে আসলে। মুশফিকুর রহিম আবারও থার্ডম্যানে আউট হলেন, যেটি চোখে লেগেছে।

মাহমুদউল্লাহ ছয়ে এলেও ওপরের দিক থেকে কেউ সঙ্গ দিতে পারেননি। আরেকবার নিজের ব্যাটিং দিয়েই প্রমাণ করতে হয়েছে, তাঁকে উপেক্ষা করাটা ঠিক ছিল না। তাতে হয়তো একটু মুখরক্ষা হয়েছে, না হলে ২০-২২ ওভারেই অলআউট হয়ে যেত দল। কিন্তু তাতে দলের প্রাপ্তিতে কিছু যোগ হয়নি। তারপরও মাহমুদউল্লাহ যে সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন, এ কারণে তাঁকে ধন্যবাদ। এখন দলের বাকিরা যদি তাঁর লড়াই থেকে শিক্ষা নেন, সেটিই প্রাপ্তি হবে।

  • গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক