শুধু কোহলির সেঞ্চুরি নিয়েই যা একটু উত্তেজনা

সেঞ্চুরির পর কোহলিএএফপি

দারুণ উত্তেজনাময় এক ম্যাচের প্রত্যাশা ছিল।
তা উত্তেজনা হলো বৈকি! তবে সেটা কোন দল জিতবে, এ নিয়ে নয়। বিরাট কোহলির সেঞ্চুরি হবে কি হবে না, তা নিয়ে। ভারতের জয়ের জন্য তখন ১০ রান দরকার, কোহলির সেঞ্চুরির জন্যও। ম্যাচের তখনো ৮ ওভারের মতো বাকি, সে নিয়ে তাই কোনো চিন্তা নেই।
শেষ পর্যন্ত হিসাবটা এমন দাঁড়াল, ভারতের জিততে ২ রান লাগে, কোহলির সেঞ্চুরির জন্য ৪ রান। খুশদিল শাহকে চার মেরে কোহলি সেই সেঞ্চুরি পেলেন, ছুটে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন অক্ষর প্যাটেল, ভারতীয় ড্রেসিংরুম মেতে উঠল জয়ের উৎসবে। রোহিত শর্মার দলের হাতে তখনো বাকি ৬ উইকেট ও ৪৫ বল!

২৭০ রান করলেই এই উইকেটে লড়াই হবে ভালো। ম্যাচের আগে পিচ রিপোর্টে এ বিষয়ে মোটামুটি একমত হলেন সুনীল গাভাস্কার ও ইয়ান বিশপ। লড়াই আসলে কতটা হতো, সেটা এখন আর বোঝার উপায় নেই। কারণ, টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তান তো ২৭০ পর্যন্ত যেতেই পারল না, ২ বল বাকি থাকতে অলআউট হয়ে গেল ২৪১ রানে।

আরও পড়ুন

২৭০ লক্ষ্য হলে যেভাবে ব্যাটিং করতে হয়, ২৪২-এর জন্য সেভাবে না করলেও চলে। তাড়া করতে নামা ভারতও তাই খুব তাড়াহুড়া করল না। শুধু যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিয়ে ফর্মে ফেরার জন্য ঠিক এই ম্যাচটাকেই বেছে নিলেন কোহলি। ১১১ বলে ৭ চারে করলেন অপরাজিত ১০০ রান।

৫১তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির পথে এই সংস্করণের ইতিহাসে তৃতীয় এবং ইনিংসের হিসাবে দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৪ হাজার রানের মাইলফলকও পেরিয়ে গেছেন সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ফিফটি পেয়েছেন শ্রেয়াস আইয়ারও। পুরো ইনিংসে একটু সময়ের জন্যও মনে হয়নি ম্যাচের লাগাম ভারতের হাত থেকে ঢিলে হয়ে গেছে।

কোহলি–আইয়ারের দারুণ জুটি
এএফপি

ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় দুবাইয়ের গ্যালারিতে বসে থাকা শহীদ আফ্রিদিকে বেশ কয়েকবার ধরল টেলিভিশন ক্যামেরা। মুখ ভার করে বসে আছেন। হাসির উপলক্ষ যে আসেনি তাঁর জন্য, এমন নয়। শুবমান গিলকে যে ক্যারম বলে বোল্ড করেছেন আবরার আহমেদ, সেটা দেখে আফ্রিদি নিশ্চয়ই খুশিতে হাততালি দিয়েছেন।

গর্ব বোধ করেছেন। তখন সেটা ক্যামেরা দেখায়নি। কিংবা তাঁর জামাতা শাহিন আফ্রিদি যেভাবে বোল্ড করেছেন রোহিত শর্মাকে, সেটাও তো শ্বশুর আফ্রিদির মুখে হাসি এনে দেওয়ার কথা। তবে ছোটখাটো এমন খুশি নয়, আফ্রিদি নিশ্চয় ম্যাচ শেষেই হাসতে চেয়েছিলেন উচ্ছ্বাসে। অবিশ্বাস্য কিছু করে সেই সুযোগ তাঁকে উত্তরসূরিরা এনে দিতে পারলেন না।

আরও পড়ুন

অথচ কিছুটা একতরফা হয়ে যাওয়া এ ম্যাচ নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও কী উত্তেজনা। অন্যবারের চেয়ে এবার কিছুটা বেশিই হয়তো। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে ভারতকে পাকিস্তানে নেওয়ার চেষ্টায় নাটক তো আর কম হয়নি! শেষ পর্যন্ত ভারত অবশ্য রাজি হয়নি, ফলে হাইব্রিড মডেলেই সমাধান। যার কারণে স্বাগতিক হয়েও এই ম্যাচ খেলতে পাকিস্তানকে যেতে হয়েছে দুবাই।

সেঞ্চুরির পথে শট খেলছেন কোহলি
এএফপি

এমন একটা ম্যাচ, যেটা আবার পাকিস্তানের জন্য হয়ে গিয়েছিল বাঁচা-মরার লড়াইও। এই ম্যাচে হেরে যাওয়ায় আগামীকাল দল বেঁধে সব পাকিস্তানি বাংলাদেশের সমর্থক হয়ে যাবেন নিঃসন্দেহে। একমাত্র নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কাল বাংলাদেশের জয়ই পারে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে স্বাগতিকদের আশা কাগজে-কলমে হলেও কিছুটা বাঁচিয়ে রাখতে।

অথচ ২৭০ করার আশা একসময় ভালোই জাগিয়েছিল পাকিস্তান। ৪১ রানে বাবর-ইমামের উদ্বোধনী জুটিটা ভাঙার পর ৪৭ রানে পড়ল দ্বিতীয় উইকেট। বাবর আজম তাঁকে নিয়ে চলতে থাকা সমালোচনাটা আরও বাড়িয়ে দিয়ে খেললেন ২৬ বলে ২৩ রানের ইনিংস। ইমাম-উল-হক আত্মঘাতী রানআউট। জোড়া ওই ধাক্কার পরে অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সৌদ শাকিল মিলে বড় কিছুর আশাই দেখাচ্ছিলেন পাকিস্তানকে।

আরও পড়ুন

কিন্তু দুজনের ১৪৪ বলে ১০৪ রানের জুটিটা ভেঙে যাওয়ার পরই পথ হারাল পাকিস্তান। ৭৭ বল খেলে ৪৬ রান করা রিজওয়ানের যখন বল-রানের ব্যবধান কমিয়ে আনার কথা, তখনই তিনি বোল্ড হয়ে গেলেন অক্ষর প্যাটেলের বলে। শাকিলও তখন স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর দিকে কিছুটা মনোযোগী হয়েছেন। কিন্তু ৭৬ বলে ৬২ রানের পর তাঁকে আর এগোতে দিলেন দিলেন না হার্দিক পান্ডিয়া।

লড়াইও করতে পারল না পাকিস্তান
রয়টার্স

২৭০-৮০ তখনো অসম্ভব ছিল না পাকিস্তানের জন্য। চতুর্থ উইকেট পড়ার সময় দলের রান ১৫৯, হাতে ১৫ ওভারের মতো। কিন্তু খুশদিল শাহ ছাড়া আর কেউ যে দাঁড়াতেই পারলেন না বেশিক্ষণ। এক পাশে তিনি কিছুটা সাহসী হয়ে ৩৯ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলাতেই মূলত ২৪১ পর্যন্ত গেছে পাকিস্তানের রানটা।

কিন্তু এই রান যে জয়ের জন্য বা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জন্যও যথেষ্ট নয়, সেটা আসলে ব্যাট করতে নামার পরই বুঝিয়ে দিয়েছে ভারত।