সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানকে চান সৌরভ

ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলীছবি : টুইটার

বিশ্বকাপে ভারত যেভাবে একচেটিয়া আধিপত্য দেখাচ্ছে, সেটা দেখে কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন—রোহিত শর্মার দলকে থামাবে কারা? পরাশক্তি, বড়, ছোট—কোনো দলকেই পাত্তা দিচ্ছে না ভারত। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে একমাত্র অপরাজিত দলও স্বাগতিকেরা। টানা আট ম্যাচ জেতা দলটির প্রথম পর্বে আরেকটি ম্যাচ বাকি আছে। তবে ভারতের সমর্থক ও সাবেক ক্রিকেটারদের ভাবনা এখন শুধুই সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ নিয়ে।

১৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আছে ভারত। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আগামী রোববার যদি অঘটনের শিকারও হয়, তবু শীর্ষ দল হিসেবেই তারা সেমিফাইনালে খেলবে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, পয়েন্ট তালিকার ১ নম্বর দলের সঙ্গে ৪ নম্বর এবং দুইয়ে থাকা দলের সঙ্গে তিনে থাকা দল সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া দুইয়ে অথবা তিনে থাকা নিশ্চিত করে ফেলায় ফাইনালে ওঠার একটি লড়াইয়ে তারা মুখোমুখি হবে। কিন্তু ভারতের প্রতিপক্ষ কে হবে, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়।

পয়েন্ট তালিকার চারে থেকে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইটা এখন ত্রিমুখী। শেষ চারে ভারতের প্রতিপক্ষ হতে পারে নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান অথবা আফগানিস্তান।

তবে এই তিন দলের মধ্যে নিউজিল্যান্ড আছে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ ন্যূনতম ব্যবধানে জিতলেও সেমিতে ওঠা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে কিউইদের। কারণ, নেট রানরেটে তারা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আফগানিস্তান শুধু কাগজে–কলমেই লড়াইয়ে আছে, বাস্তবের লড়াইটা ‘প্রায় অসম্ভবের’ পর্যায়ে চলে গেছে।

২০১১ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়েই ফাইনালে উঠেছিল ভারত
ছবি : আইসিসি

সে যা–ই হোক, নিউজিল্যান্ডের মতো আফগানিস্তানেরও সেমিতে ভারতের প্রতিপক্ষ হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু সৌরভ গাঙ্গুলীর চাওয়া, নিউজিল্যান্ড–আফগানিস্তান নয়; ভারতের ফাইনালে ওঠার লড়াইটা হোক পাকিস্তানের সঙ্গে। ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ভারত। দলটির সাবেক অধিনায়ক ও বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৌরভ এবারও সেটার পুনরাবৃত্তি চাইছেন।

ক্রীড়াবিষয়ক সংবাদমাধ্যম স্পোর্টস তাককে সৌরভ বলেছেন, ‘আমি চাই, পাকিস্তান সেমিফাইনালে উঠুক এবং ভারতের বিপক্ষে খেলুক। এর চেয়ে বড় সেমিফাইনাল আর হতেই পারে না।’

সূচি অনুযায়ী, আগামী বুধবার (১৫ নভেম্বর) প্রথম সেমিফাইনাল হওয়ার কথা মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। পরদিন (১৬ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার) দ্বিতীয় সেমিফাইনাল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে। তবে ভারতের প্রতিপক্ষ কে হবে, সেটার ওপর ভিত্তি করে ম্যাচের তারিখ ও ভেন্যু বদলে যেতে পারে।

পাকিস্তান সেমিফাইনালে উঠলে দক্ষিণ আফ্রিকা–অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচটি হবে মুম্বাইয়ে
ছবি : আইসিসি

যদি নিউজিল্যান্ড অথবা আফগানিস্তান সেমিফাইনালে ওঠে, তাহলে বুধবার মুম্বাইয়ে খেলবে ভারত। আর বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচটি হবে কলকাতায়। কিন্তু পাকিস্তান যদি সেমিফাইনালে ওঠে, তাহলে তারা বৃহস্পতিবার কলকাতায় ভারতের বিপক্ষে খেলবে। এর আগের দিন মুম্বাইয়ে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া। এ ব্যাপারটি বিশ্বকাপ শুরুর আগেই জানানো হয়েছিল।

সৌরভ কেন পাকিস্তানকে সেমিফাইনালে চান, এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। কারণ, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটা যে হবে তাঁর জন্মশহর কলকাতায়। দুই দল কলকাতায় সর্বশেষ ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল। ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল আবার মুখোমুখি হলে সমর্থকদের উন্মাদনা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে, সেটা এখনই আঁচ করা যায়।

বিশ্বকাপে ভারত নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচটিও ইডেনেই খেলেছে। তবে সেই ম্যাচের টিকিট বিতরণ নিয়ে অভিযোগের অন্ত ছিল না। অনেক সমর্থক অভিযোগ করেন, বেশির ভাগ টিকিট কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে। অনেকে বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রির ওয়েবসাইট ‘বুক মাই শো’তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও টিকিট পাননি।

কলকাতায় সর্বেশষ ২০১৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ভারত–পাকিস্তান
ছবি : আইসিসি

এ নিয়ে বিসিসিআইয়ের বিরুদ্ধে মামলাও করেন এক সমর্থক। ইডেনে ভারত–পাকিস্তান সেমিফাইনাল হলে টিকিটের চাহিদা আরও বাড়বে। এবার তাই টিকিটসংশ্লিষ্টদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

ভারত যে রকম খেলছে, তাতে অনেকেই রোহিত–কোহলিদের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে পাচ্ছেন। সৌরভও ভারতকেই এগিয়ে রাখছেন। তবে ভারত বিশ্বকাপ না জিতলেও অবাক হবেন না বলে জানিয়েছেন, ‘ভারত যেভাবে খেলছে, পুরো জাতি খুব খুশি। ওদের খেলা দেখে মনে হয়েছে, বাকি দলগুলোর সঙ্গে ওদের ব্যবধান অনেক। আশা করি, ওরা এভাবেই খেলতে থাকবে। আমার মনে হয় না, হুট করে ওদের খেলার মান পড়ে যাবে এবং বাজে ক্রিকেট খেলতে শুরু করবে। তবে ওরা বিশ্বকাপ না জিতলে বিস্মিত হব না।’