সাকিবের ‘হিরো’ হবেন কে

সিডনিতে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে সাকিবছবি: শামসুল হক

সাকিব আল হাসান সংবাদ সম্মেলন করে গেলেন হাসতে হাসতে এবং হাসাতে হাসাতে। হাসলেন কখনো প্রশ্ন শুনে, কখনো উত্তর দিতে গিয়ে। তাতে হাসি সংক্রমিত হয়েছে অন্যদের মধ্যেও।

তবে হাসি-ঠাট্টার ফাঁক-ফোকরে সাকিবের কথায় যেটি বারবার ঝলক দিয়ে গেল, তার নাম আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাসী সাকিব যেন সতীর্থদের মধ্যে পরোক্ষে একটা প্রতিযোগিতাও বাঁধিয়ে দিলেন সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগামীকালের ম্যাচটা বাংলাদেশের কারও না কারও ‘হিরো’ হওয়ার সুযোগ। কে হবেন সেই ‘হিরো’?

এসসিজির এই ম্যাচে বাংলাদেশ যা-ই করবে, সেটাই হবে প্রথম। যার বলে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম উইকেট হারাবে তিনি পাবেন এসসিজিতে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম উইকেট। যিনি প্রথম বাউন্ডারি মারবেন, তাঁর হবে প্রথম বাউন্ডারি। আর যিনি সবার আগে আউট হবেন, তিনিও হবেন ১৭৪ বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষী এসসিজিতে প্রথম আউট হওয়া বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান।

আরও পড়ুন

এসসিজির ‘ওয়াক অব অনারে’ বাংলাদেশের প্রথমদের নাম উঠবে না জানা কথা। স্টেডিয়ামে ঢুকতেই সিঁড়ির দেয়ালে সাজানো মেটাল প্লেটগুলোতে খেলার মাঠের যেসব কীর্তির ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তার সবই সিডনির ক্রীড়া কিংবদন্তীদের। সেখানে বাংলাদেশ আসবেই–বা কেন! তবে অধিনায়কের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এসসিজিতে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে যদি সত্যিই নায়ক হয়ে উঠতে পারেন কেউ, মাঠ ছাড়ার সময় নিশ্চিত সতীর্থদের একটা ‘ওয়াক অব অনার’ তিনি পাবেন।

অনুশীলনে এমন চনমনে সময়ই কেটেছে সাকিব–তাসকিনদের
ছবি: শামসুল হক

সংবাদ সম্মেলনে সাকিব তাঁর আশাটা প্রকাশ করলেন হাসিমুখে, ‘আগামীকাল আমাদের জন্য আরেকটা সুযোগ। আমাদের ১১ জনে যারা খেলবে, তাদের মধ্যে একজনের হিরো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তো ওই হিরোটা কে হবে, সেটাই দেখার।’

আরও পড়ুন

টি-টোয়েন্টি ‘মোমেন্টামে’র খেলা। সাকিবের টি-টোয়েন্টি জয়ের ফর্মুলা হলো, সেই ‘মোমেন্টাম’টা ধরতে হবে এবং সেটি ধরেই রাখতে হবে। আর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ যেহেতু একজনের পারফরম্যান্স দিয়েও জেতা সম্ভব, কারও নায়ক হওয়ার সম্ভাবনাটা সেখানেই বেশি দেখেন সাকিব, ‘টি-টোয়েন্টিতে বেশি পারফরমার থাকার সুযোগ নেই। কম পারফরমার থাকবে কিন্তু ওদের পারফরম্যান্স একটু বড় হতে হয়। ওপেনারদের সুযোগ আছে ২০ ওভার ব্যাটিং করার। কেন তারা পারবে না? আমি বিশ্বাস করি, তারা করতে পারবে। কিংবা আমাদের বোলাররা আগের দিন যেভাবে বোলিং করেছে, কেন আমরা আবার ১০ উইকেট নিতে পারব না?’

সতীর্থদের ওপর আস্থা রাখছেন সাকিব
ছবি: শামসুল হক

সাকিবের এই প্রশ্ন আসলে সতীর্থদের উদ্দেশ্যেই। প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর খুঁজে পেতে তাঁদের অনুপ্রাণিত করছেন অধিনায়ক নানা ভাবে। একবার যেমন বললেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা এমন একটা ম্যাচ, যেটা আমরা যদি জিতে যাই। আমাদের যে ভালো কিছু করার সামর্থ্য আছে, আমরা সেটা প্রমাণ করার কাছাকাছি চলে যাব।’

আগের ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করে ৪ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ, মাশরাফি বিন মুর্তজার পর সাকিবের চোখে যিনি বাংলাদেশ দলের পেস বোলিংয়ের নেতা হয়ে উঠেছেন। নায়ক হওয়ার আমন্ত্রণটা সবার জন্য উম্মুক্ত থাকলেও সাকিবের আশাটা তাসকিনের মতো যারা ভালো খেলছেন, তাঁদের কাছেই বেশি।

আরও পড়ুন

তবে নতুন কেউ ‘হিরো’ হতে চাইলে তাঁদেরও আলিঙ্গন করে নেবেন অধিনায়ক, ‘দলের কেউ একজন হয়তো ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছে...সেই দলগুলোই হয়তো দীর্ঘমেয়াদে ভালো খেলে। আমরা ও রকমই পারফরম্যান্স চাই। এর ভেতরে যদি দু-একটা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্সও হয়, সেটাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করব। আমরা চাই যে প্রতি ম্যাচেই এ রকম এক-দুইটা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স হোক, যেটা খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয় অনেক বেশি।’

সিডনিতে ব্যাটিং অনুশীলনে সাকিব
ছবি: শামসুল হক

প্রায় ৬০ হাজার বাংলাদেশির শহর সিডনির মাঠে লাল-সবুজ পতাকার অভাব থাকার কথা নয়। ম্যাচটা যেন দলের সবাই উপভোগ করেন, সে জন্য সেটাকেও বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন সাকিব, ‘আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা খেলাটা কতটা উপভোগ করতে পারছি তা। সিডনিতে যেহেতু সবচেয়ে বাংলাদেশি, বেশ বড় একটা দর্শক থাকবে আমাদের পক্ষে। তাদের সমর্থন কাজে লাগিয়ে কীভাবে আরও ভালো পারফর্ম করতে পারি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সমর্থনের প্রতিদানটা যেন আমরা দিতে পারি।’

সে জন্য প্রধান শর্ত ওটাই—কারও নায়ক হয়ে উঠতে হবে। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে কে হবেন সাকিবের ‘হিরো’?