নাটকীয় জয়ে ফাইনালে পাকিস্তান, বিদায় ভারত ও আফগানিস্তানের

পাকিস্তানের জয়ের নায়ক নাসিম শাহকে (মাঝ) নিয়ে সতীর্থদের উদ্‌যাপনছবি: এএফপি

৬ বলে দরকার ১১ রান, উইকেটে শেষ দুই ব্যাটসম্যান নাসিম শাহ ও মোহাম্মদ হাসনাইন। বাজি ছিল আফগানিস্তানের পক্ষেই। কিন্তু সব সময় বাজি মিললে এটি ক্রিকেট কেন! ইনিংসের শুরুতে দারুণ এক ডেলিভারিতে বাবর আজমকে যিনি ভুলে যাওয়া গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ দিয়েছিলেন, সেই ফজলহক ফারুকী দিলেন পরপর দুই ফুলটস। দুটিই লং অফ দিয়ে বাউন্ডারির ওপারে আছড়ে ফেললেন নাসিম শাহ! হারতে হারতেও রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তির ম্যাচে পাকিস্তান জিতল ১ উইকেটে।

শারজা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের এই জয়ে ভারত ও আফগানিস্তানকে বিদায় করে পাকিস্তান উঠে গেছে এশিয়া কাপের ফাইনালে। রোববারের ফাইনালে বাবরদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ফাইনালের দুই দল পেয়ে যাওয়ায় এশিয়া কাপ সুপার ফোরের শেষ দুটি ম্যাচ এখন নিছকই আনুষ্ঠানিকতা।

দুই ছক্কা মেরে দলকে জেতানোর পর নাসিম শাহ
ছবি: এএফপি

সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গিয়েছিল আফগানিস্তান। ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে আজ জিততেই হতো পাকিস্তানের বিপক্ষে। আফগানদের দিকে তাকিয়ে ছিল ভারতও। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা, দুই দলের কাছ হেরে বিদায় একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল রোহিত শর্মাদের। তবুও কাগজে-কলমে আশা বেঁচেছিল খানিকটা।

সেই আশা বাঁচিয়ে রাখার কাজটি আফগানিস্তান শেষ পর্যন্তই করেছিল। ১২৯ রানের পুঁজি নিয়েও পৌঁছে গিয়েছিল জয়ের খুব কাছে। কিন্তু ফারুকীর ইয়র্কার-চেষ্টায় হয়ে যাওয়া সর্বনাশা ফুল টস আর হাসতে দিল কই?

১৯তম ওভারে ২ উইকেট নিয়েছেন আফগান পেসার ফরিদ আহমেদ
ছবি: এএফপি

অথচ এই বাঁহাতি পেসারের হাত ধরেই আফগানদের সম্ভাবনা জাগানোর সূচনা। দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লুতে কাটা বাবর, মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই ফিরেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ৭৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে যা তাঁর মাত্র দ্বিতীয় গোল্ডেন ডাক। এরপর চতুর্থ ওভারের শুরুতে নজিবউল্লাহ জাদরানের দারুণ এক থ্রোয়ে রানআউট ফখর জামান। ভরসা হয়ে তখনো টিকে ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। বাবরকে টপকে আজকেই টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে ওঠা এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানও অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২৬ বলে ২০ রান কের এলবিডব্লু হন রশিদ খানের বলে। ২০২০ সালের জানুয়ারির পর এই প্রথম বাবর-রিজওয়ান দুজনই ২০ রান করার আগে আউট হলেন।

টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান যখন আউট হন, পাকিস্তানের রান তখন ৪৫। বিপর্যয় রুখতে গিয়ে ইফতিখার আহমেদ-শাদাব খানরা ব্যাটে এমনই লাগাম টানেন যে, টানা ৩৮ বলে পাকিস্তান কোনো বাউন্ডারিই পায়নি। তবে ব্যাটিং অর্ডারে পদোন্নতি পাওয়া শাদাব বেশিক্ষণ চুপ থাকেনি। ইনিংসের ১২তম ওভারে আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবীকে ছয় মেরে হাত খোলা শুরু করেন। ওই ওভারে আরও ১টি চারসহ নেন মোট ১৪ রান। পরের ওভারে ছয় হাঁকান মুজিব উর রেহমানকেও।

আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মোহাম্মদ নেওয়াজ যেমন ২০ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে জয়ের দরজা খুলে দিয়ে যান, এই ম্যাচে সেই কাজটি করেন শাদাব। রশিদ খানের শিকার হওয়ার আগে ২৬ বলে ১ চার ৩ ছয়ে করে যান ৩৬ রান।

পাকিস্তান ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৬ শাদাব খানের
ছবি: এএফপি

শেষ তিন ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ২৫ রান, হাতে ছিল ৫ উইকেট। কিন্তু ১৮তম ওভারে ফারুকী ৪ রান দিয়ে ২ উইকেট আর ১৯তম ওভারে ফরিদ আহমেদ ১০ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নিলে উল্টো খাদের কিনারে চলে যায় পাকিস্তান। যেখান থেকে শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে ছয় মেরে জয় এনে দেন নাসিম।

এর আগে আফগানিস্তানের ইনিংসেও অবশ্য বোলারদেরই দাপট ছিল বেশি। হজরতউল্লাহ জাজাই আর রহমানউল্লাহ গুরবাজ মিলে শুরুটা করেছিলেন ভালো। ইনিংসের প্রথম ২০ বলেই তুলে ফেলেন ৩৫ রান। ছন্দপতনের শুরু হয় হারিস রউফের করা চতুর্থ ওভারে। ঘণ্টায় ১৪৪ কিলোমিটার গতিতে করা পঞ্চম বলটিতে উপড়ে যায় গুরবাজের স্টাম্প। পরের ওভারে মোহাম্মদ হাসনাইনের স্লোয়ার ডেলিভারিতে বোল্ড হজরতউল্লাহ। ৪৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনার আউট হওয়ার পর আফগানিস্তানের ব্যাটিং আর ওড়ার সুযোগ পায়নি। উল্টো নেওয়াজ, শাদাবদের স্পিনে মিইয়ে যেতে থাকে ব্যাটিংয়ের তেজ। তিন নম্বরে নামা ইব্রাহিম জাদরানের ৩৭ বলে ৩৫ রান ছাড়া অন্য কেউ ২৫-ও পার করতে পারেননি। ওপেনার জাজাইয়ের ১৭ বলে ২১ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, শেষদিকে রশিদের ১৫ বলে ১৮ তৃতীয় সর্বোচ্চ। পাকিস্তানের পক্ষে ২৬ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন হারিস। একটি করে উইকেট নেন নাসিম, হাসনাইন, শাদাব ও নেওয়াজ।

আফগানদের ৬ উইকেটে ১২৯ রানে থামিয়ে দেওয়া বোলাররাই শেষপর্যন্ত ব্যাট হাতেও পাকিস্তানকে জয় এনে দিলেন।

আরও পড়ুন