৮২ রানে অ্যাডিলেড টেস্ট আর ১১ দিনে অ্যাশেজ জিতল অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া: ৩৭১ ও ৩৪৯। ইংল্যান্ড: ২৮৬ ও ৩৫২। ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮২ রানে জয়ী।
ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৯৭তম ওভারের শেষ বল সেটি। স্কট বোল্যান্ডের লেগ স্টাম্পে রাখা বল ফ্লিক করে চার মারলেন ব্রাইডন কার্স। এই চারে কার্সের কোনো মাইলফলক ছোঁয়া হয়নি, দলের রানও পঞ্চাশ-এক শর মতো ঘরে পৌঁছায়নি। তবু অ্যাডিলেড গ্যালারিতে রীতিমতো উৎসবের আবহ তৈরি করে ফেললেন ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা।
করতালি, উল্লাস আর ব্যান্ড-বাদ্যির শব্দে তৈরি হওয়া ওই উৎসবের কারণ—জয়ের লক্ষ্যটা নেমে এসেছে এক শর নিচে। ইংল্যান্ডের জন্য দিনটা শুরু হয়েছিল ২২৮ রানে পিছিয়ে থেকে, সম্বল ছিল মাত্র ৪ উইকেট। টেস্টের পঞ্চম দিনে প্রায় অসম্ভব মনে হওয়া সেই সমীকরণই কার্সের ওই চারের পর হয়তো খুব নাগালে মনে করতে শুরু করেছিলেন তারা। তখনো ৩ উইকেট হাতে।
তবে ইংল্যান্ডের অসম্ভব কিছু করে ফেলার সেই উৎসবটা স্থায়ী হলো মিনিটখানেক। পরের ওভারে মিচেল স্টার্কের দ্বিতীয় বলেই উইকেটের পেছনে মারনাস লাবুশেনের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হলেন সকাল থেকে তিন ঘণ্টা ধরে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উইল জ্যাকস। সেখানেই শেষ। বাকি দুই উইকেট যেতে আর সময় লাগেনি।
ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫২ রানে অলআউট করে অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়া জিতল ৮২ রানে। যে জয়ে টানা তৃতীয় টেস্ট জিতে ৩-০ ব্যবধানে অ্যাশেজও ধরে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড শুধু সিরিজই হারেনি, হেরেছে মাত্র ১১ দিনে। অ্যাশেজ ইতিহাসে এত কম সময়ে সিরিজ নিষ্পত্তির মাত্র দ্বিতীয় ঘটনা এটি।
পার্থে ২ দিনে আর ব্রিসবেনে ৪ দিনে হেরে যাওয়া ইংল্যান্ডের সামনে অ্যাডিলেডে জেতার জন্য ৪৩৫ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বেন স্টোকসের দল সেই লক্ষ্য ‘অসম্ভব’ বানিয়ে ফেলে চতুর্থ দিনেই। ৬৩ ওভার ব্যাট করে ২০৭ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়েছিল সফরকারীরা। আজ ম্যাচের পঞ্চম দিনে শেষ ৪ উইকেট নিয়ে কতটুকু লড়াই করা যাবে তা নিয়ে ছিল সংশয়।
তবে জেমি স্মিথ ও উইল জ্যাকসের সপ্তম উইকেট জুটি শেষ দিনের সকালে ভালো অভিজ্ঞতাই উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। এর মধ্যে ২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠে নামা স্মিথ ছিলেন আক্রমণাত্মক।
নাথান লায়ন ও ক্যামেরন গ্রিনকে ছক্কা মারা স্মিথ ফিফটিতে পৌঁছান কামিন্সকে টানা দুই চার মেরে। পরের ওভারে স্টার্ককেও মেরেছেন টানা দুই চারে। তবে বাউন্ডারির হ্যাটট্রিক করতে গিয়ে মিড অনে হয়ে যান কামিন্সের ক্যাচ (৮৩ বলে ৬০ রান)।
দিনের প্রথম সেশনে ইংল্যান্ড হারিয়েছে শুধু স্মিথের উইকেটটাই। অষ্টম উইকেটে কার্সকে নিয়ে আরেকটি বড় জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন জ্যাকস। যে জুটি ইংল্যান্ডের লক্ষ্য নিয়ে যায় এক শর নিচে।
এরপর তো স্টার্কেরই আরেক শিকার হয়ে জ্যাকসের ফেরা। আগের দিন ৩১ বল খেলে জ্যাকস আজ খেলেছেন আরও ১০৬ বল। যখন ফিরেছেন, নামের পাশে ৪৭ রান।
ইংল্যান্ডের শেষ দুটি উইকেটের একটি স্টার্কের, অন্যটি বোল্যান্ডের। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩টি করে উইকেট স্টার্ক, কামিন্স ও নাথান লায়নের। তিনজনের মধ্যে লায়নের অবশ্য এবারের অ্যাশেজে আর খেলা হবে কি না সংশয় আছে। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে প্রথম সেশনে মাঠ ছেড়ে যেতে হয়েছে তাঁকে।
লায়নের চোটের বিষয়টি বাদ দিলে অস্ট্রেলিয়া আজ অ্যাডিলেড ছেড়েছে মহা উদ্যাপনের উপলক্ষ নিয়ে। এবারের আগে ২০০২–০৩ মৌসুমে ইংল্যান্ডকে ১১ দিনের মধ্যে অ্যাশেজ হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দুই দশকের বেশি সময় পর স্টিভ ওয়াহর দলের রেকর্ডের পাশে ভাগ বসিয়েছে প্যাট কামিন্সের দল (যদিও প্রথম দুই টেস্টের অধিনায়ক ছিলেন স্টিভেন স্মিথ)।
এবারের সিরিজের চতুর্থ টেস্ট শুরু হবে ২৬ ডিসেম্বর মেলবোর্নে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ৩৭১ ও ৩৪৯ (হেড ১৭০, ক্যারি ৭২; টাং ৪/৭০, কার্স ৩/৮০)। ইংল্যান্ড: ২৮৬ ও ৩৫২ (ক্রলি ৮৫, স্মিথ ৬০; কামিন্স ৩/৪৮, স্টার্ক ৩/৬২)। ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮২ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: অ্যালেক্স ক্যারি। সিরিজ: ৫ টেস্ট সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৩–০ ব্যবধানে এগিয়ে।