যে সিরিজে কে খেলবে, কেমন খেলবের চেয়েও বড় প্রশ্ন—ট্রফিটা কার নামে
১১ বছর পর এই প্রথম ভারতের টেস্ট দলে বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মার কেউ নেই। ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু হতে চলেছে নতুন অধিনায়ক শুবমান গিল-যুগ। ওদিকে আছে বাজবল ক্রিকেটের টিকে থাকা না–থাকা নিয়ে কৌতূহল। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড-ভারত পাঁচ টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে আলোচনার বিষয়ের কমতি নেই।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে বারবার আলোচনায় আসছে ট্রফির নাম। আর সেই আলোচনায় কখনো সাবেক ক্রিকেটার, কখনো ধারাভাষ্যকার, কখনোবা আবার স্বয়ং নামের সঙ্গে জড়িত পক্ষই উপস্থিত। যা এখন থেকে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি নামে পরিচিত হবে।
ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট খেলছে সেই ১৯৩২ সাল থেকে। প্রথম দিকে দুই দলের সিরিজের আলাদা কোনো নাম ছিল না। ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ড দল ভারতে খেলতে গেলে সিরিজের নাম দেওয়া হয় অ্যান্থনি ডি মেলো ট্রফি। বিসিসিআইয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাকে সম্মান জানানোর উদ্যোগ ছিল সেটি। এরপর ইংল্যান্ড দল যতবারই ভারতে গেছে, দুই দলের টেস্ট সিরিজের নাম ছিল অ্যান্থনি ডি মেলো ট্রফি।
ভারতের বোর্ড ‘হোম’ সিরিজের একটি নাম রাখলেও ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এমন কোনো উদ্যোগ নেয় বেশ দেরিতে। ২০০৭ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের দল ইংল্যান্ডে গেলে ইসিবি সিরিজের নাম করে পতৌদি ট্রফি। সেবার ট্রফি নামকরণের কারণ ছিল দুই দেশের প্রথম টেস্টের ৭৫ বছর পূর্তিকে স্মরণ। ১৯৩২ সালে প্রথমবার টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড-ভারত।
নামকরণে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল ক্রিকেটে পতৌদিদের অবদানকে স্মরণ করা। ভারতের পাঞ্জাবে জন্ম নেওয়া নবাব ইফতিখার আলী খান পতৌদি ইংল্যান্ডের হয়ে তিনটি এবং ভারতের হয়ে তিনটি টেস্ট খেলেছিলেন। তাঁর ছেলে ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা নবাব মনসুর আলী খান ভারতের হয়ে খেলেছেন ৪৬ টেস্ট। বাবা-ছেলে দুজনই ছিলেন ভারতের অধিনায়ক। ‘টাইগার পতৌদি’ নামে খ্যাত মনসুর আলী খান তো নেতৃত্ব পেয়েছিলেন মাত্র ২১ বছর বয়সেই।
২০০৭ সালের পর ২০১১, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২১ সালে ইংল্যান্ডে হওয়া ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজের নাম ‘পতৌদি ট্রফি’ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে এবার সেটি বদলে ফেলার উদ্যোগ নেয় ইসিবি ও বিসিসিআই। আগামীকাল হেডিংলি টেস্টের মাধ্যমে ২০২৫ সিরিজ শুরুর আগে আজ নতুন নামের ট্রফি উন্মোচন করা হয়েছে। উন্মোচন করেছেন যাঁদের নামে ট্রফি, সেই শচীন টেন্ডুলকার আর জিমি অ্যান্ডারসনই। ইসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে ইংল্যান্ড-ভারত সব সিরিজই ‘অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার’ ট্রফি নামে পরিচিত হবে।
আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি’ উন্মোচনের আগেই এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে ভারতের ক্রিকেটাঙ্গনে। ভারতের সাবেক অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার ‘পতৌদি ট্রফি’র নাম বদলে ফেলার বিরোধিত করে স্পোর্টস্টারের কলামে লিখেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে পতৌদি পরিবারের ইংল্যান্ড ও ভারতের ক্রিকেটে অবদানের প্রতি পুরোপুরি উদাসীনতা দেখানো হয়েছে।’
ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেবও এই দলে। বুধবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে হতবাক ও হতাশার সুরে তিনি বলেন, ‘এটা একটু অদ্ভুত লাগছে…মানে, এমনটাও সত্যি ঘটে? তবে ঠিকই আছে, ক্রিকেটে সবই চলে।’ ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলেও পতৌদি ট্রফির নাম বদলানোর পক্ষে ছিলেন না। এনডিটিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘পতৌদি ট্রফি নামটার মধ্যে দুটি দেশেরই সংযোগ ছিল। কিন্তু এখন সেটা থাকছে না। এখন থেকে ১০ বছর পরে কি আপনি সিরিজটার নাম কোহলি-রুট ট্রফি বানিয়ে ফেলবেন?’
ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজ থেকে পতৌদির নাম বাদ দেওয়া নিয়ে শেষ পর্যন্ত শচীন টেন্ডুলকারও মুখ খুলেছেন। রেভসস্পোর্টজকে তিনি জানান, পতৌদির নাম রেখে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি, ‘আমি যখন জানলাম যে ট্রফির নাম বদলানো হচ্ছে, আমি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। এরপর জয় শাহ (আইসিসি প্রেসিডেন্ট), বিসিসিআই, ইসিবির সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাঁদের বলেছি (পতৌদির) লিগাসি বজায় রাখার জন্য কিছু করা দরকার। তাঁরা আমার মতামতটা শুনেছেন। এরপরের কথোপকথনে আমাকে জানানো হয়, পতৌদির নামও সিরিজের সঙ্গে থাকছে। সিরিজজয়ী অধিনায়ককে পতৌদি মেডেল অব এক্সেলেন্স প্রদান করা হবে।’
আজ অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি উন্মোচনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইসিবিও এটিই জানিয়েছে। সিরিজজয়ী অধিনায়ক পাবেন পতৌদি পদক।