নিজেকে নিয়ে ভেবেছেন, ডায়রি লিখেছেন, এবার প্রস্তুত কনস্টাস
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪।
বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করতে নামলেন ১৯ বছরের এক তরুণ। ওটাই তাঁর অভিষেক ম্যাচ। স্যাম কনস্টাস নাম তাঁর।
ওদিকে বোলার ভারতের যশপ্রীত বুমরা। এই সময়ের বিশ্বসেরা।
তারপর যেটা হয়েছিল, ক্রিকেট বিশ্বের কেউই বোধ হয় সেটা কল্পনা করেননি। বুমরার মতো বোলারকে যেমন খুশি তেমন পেটানোর চেষ্টা করছেন কনস্টাস। মারছেন মাঠের চারদিকে। সব যে ইচ্ছেমতো করতে পেরেছিলেন এমন নয়, কিন্তু বুমরাকে যেভাবে খুশি মারার সাহস করাটা, এবং সেটা মাত্র ১৯ বছর বয়সে অভিষেকেই, টেস্ট ক্রিকেট এমন কিছু বহুদিন দেখেনি।
শেষ পর্যন্ত সেদিন মাত্র ৬৫ বলে ৬০ রান করে আউট হয়ে গিয়েছিলেন কনস্টাস। স্ট্রাইক রেট ৯২.৩০! ক্রিকেটপ্রেমীদের সব মনোযোগ কেড়ে নিতে অবশ্য ওইটুকুই যথেষ্ট ছিল। কনস্টাসের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল রাতারাতি।
তবে বাইরে থেকে দেখে যতটা সহজ মনে হয়েছিল, ভেতরের গল্পটা কিন্তু একদম উল্টো। সম্প্রতি চ্যানেল নাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কনস্টাস বলেছেন, ক্রিকেট নয়, প্রথম দিকে তাঁর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল—মাঠভর্তি দর্শকের সামনে দেশের হয়ে খেলার আবেগ সামলানো। বলেছেন, ‘সেই সময়টা ছিল আমার টেস্ট ক্যারিয়ারের একেবারে শুরু। চারপাশে এত দর্শক, এত উত্তেজনা—সব মিলিয়ে আবেগটাই হয়তো একটু বেশি চেপে বসেছিল। তবে এরপর যেই বিরতিটা পেয়েছি, সেটা আমাকে নিজের খেলা নিয়ে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে, আর মানসিকভাবে আরও শক্ত হতে সাহায্য করেছে।’
সেই কনস্টাস আছেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টেস্ট দলেও। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে তিনটি টেস্ট খেলবে অস্ট্রেলিয়া। ব্রিজটাউনে ২৫ জুন থেকে শুরু হতে হওয়া প্রথম টেস্টেও হয়তো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করবেন কনস্টাস। আরেক ওপেনার মারনাস লাবুশেনকে এই সফরে বাদ দেওয়ায় দারুণ এই সুযোগটা চলে এসেছে কনস্টাসের সামনে। ওদিকে স্টিভ স্মিথও চোটে। ফলে শুধু সুযোগ পাওয়াই নয়, বলা যায়, টপ অর্ডারে বড় দায়িত্ব এখন কনস্টাসের কাঁধে। আর সেই সুযোগ লুফে নিতে মুখিয়ে আছেন তরুণ এই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান।
মাত্র দুই টেস্টের অভিজ্ঞতা তাঁর ঝুলিতে। অভিষেকের সেই দুর্দান্ত হাফ সেঞ্চুরির পরও ২৮.২৫ গড়ে রান ১১৩। তবে প্রথম দুই টেস্ট খেলার পর যে বিরতিটা পেয়েছেন কনস্টাস, সেটা তাঁকে নিজের খেলা নিয়ে ভাবতে সাহায্য করেছে বেশ। আর সেই ভাবনাগুলো তিনি লিখে রাখেন নিজের একটা ডায়েরিতে। যখনই কোনো বিদেশ সফরে যান, সেই ডায়েরিটা বারবার দেখেন, ‘ডায়েরিটা খুব দরকারি। খেলার কথা ভাবা, সব ঠিকঠাক করছি কি না দেখা, বিশেষ করে যখন বিদেশে থাকি, তখন এটা আমাকে স্থির হতে সাহায্য করে।’
বয়স কম, অভিজ্ঞতাও নেই। তাই আরও একটা কাজ খুব মনোযোগ দিয়ে করেন কনস্টাস, ‘আমি সব সময় উজি (উসমান খাজা), মারনাস আর স্মিথের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করি। ওরা কীভাবে খেলে, সেটা দেখি। ১৯ বছর বয়সে ওদের আশপাশে থাকতে পারাটা আমার জন্য দারুণ ভাগ্যের ব্যাপার। দেশের হয়ে খেলা, সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ানো—এটা যেন একটা স্বপ্নের মতো!’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কনস্টাস অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারেন, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।