বিপিএলের ফাইনালে চিটাগংয়ের ‘ভুল’ নাকি খুলনার ‘সেরা’

দুই অধিনায়ক—চিটাগং কিংসের মোহাম্মদ মিঠুন (বাঁয়ে) ও খুলনা টাইগার্সের মেহেদী হাসান মিরাজছবি: ফেসবুক

ফাইনালে ওঠার আরেকটি সুযোগ দুই দলের সামনে। তবে চিটাগং কিংসের জন্য এমন সুযোগ কাঙ্ক্ষিত ছিল না। প্রথম কোয়ালিফায়ারে ফরচুন বরিশালের কাছে হারাতেই তারা এখন বাধ্য আরেকটি ম্যাচ খেলতে। অন্যদিকে রংপুর রাইডার্সকে লজ্জার হার উপহার দিয়ে খুলনা টাইগার্স সুযোগটা অর্জনই করেছে বলতে হবে।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ সন্ধ্যায় দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি হবে দুই রকম ‘কম্বিনেশনের’ এই দুই দল। দুটি দলের সমন্বয় দুই রকম হতেই পারে। তবে এখানে বিশেষভাবে তা উল্লেখের কারণ ওই ‘দুই রকমের’ মধ্যে থাকা একটা অস্বাভাবিকতা। খুলনা টাইগার্স তাদের ‘কম্বিনেশন’টাকে মনে করছে সেরা। আর চিটাগং কিংস নিজেদের ‘টিম কম্বিনেশন’কে নিজেরাই বলছে ‘ভুল’। ‘সেরা’ আর ‘ভুল’ কম্বিনেশনের লড়াইটা কে জিতে ফাইনালের চৌকাঠ ডিঙোবে, সেটি দেখারই উত্তেজনাপূর্ণ অপেক্ষা চলছে এখন।

ঐচ্ছিক অনুশীলনে খুলনা টাইগার্স ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। এবারের বিপিএলে নাঈমের ব্যাট তাঁর হয়ে কথা বলছে
ছবি: বিসিবি

সিলেটে খুলনা টাইগার্সের ঠিকানা ছিল নাজিমগড় রিসোর্ট। অবসর কাটানোর দারুণ জায়গা। রিসোর্টের পরিবেশটাই এমন যে যদি কাজকর্ম করতেও যান, মনে হবে অবসরই কাটাচ্ছেন!

খুলনার ‘টাইগার’দেরও সে রকম মনে হয়েছিল কি না, কে জানে! তবে তাঁরা সেখানে অবসর কাটাতে যাননি, গিয়েছিলেন বিপিএলের ক্রিকেট ম্যাচ উপলক্ষে। যদিও রিসোর্টে থাকার সময়টায় ক্রিকেটারদের চিন্তাজুড়ে ছিল ব্যাডমিন্টন। অবসরের আবহের কারণেই হয়তো।

কাল দলের সুন্দর বোঝাপড়া আর সেরা কম্বিনেশনের কথা বলতে গিয়েই পুরোনো প্রসঙ্গটা টানলেন খুলনার কোচ তালহা জুবায়ের, ‘স্থানীয় ক্রিকেটাররা আমাদের বড় শক্তি, আর আছে দারুণ টিম বন্ডিং। নাজিমগড় রিসোর্টে আমরা দলের মধ্যে একটা ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছিলাম, যেখানে বিদেশিরাও খেলেছে। এ রকম আরও কিছু বিষয় সবার মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করেছে, যেটা মাঠেও কাজে দিচ্ছে।’

খুলনা টাইগার্স দলটা যেন এক সুখী পরিবার
ছবি: ফেসবুক

দলীয় বোঝাপড়া নিশ্চয়ই চিটাগং কিংসেরও ভালো। না হলে তো আর ভুল ‘কম্বিনেশন’ নিয়েও লিগ পর্বে দ্বিতীয় হয়ে টুর্নামেন্টের এ পর্যন্ত আসা হতো না। ছয়জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান নিয়ে বিপিএলের মতো টুর্নামেন্ট খেলাটাকেই ‘ভুল টিম কম্বিনেশন’ বলছে চিটাগং কিংস।

ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে হারের পর পরশু রাতে অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন বলেছিলেন কথাটা, কাল বললেন দলের সহকারী কোচ এনামুল হকও, ‘শুরু থেকেই আমরা ভুল কম্বিনেশন নিয়ে খেলছি। ৬টা ব্যাটসম্যান নিয়ে যে এত দূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি, সেটাই বেশি। ব্যাটিং অর্ডারে শেষ চারজন শুধুই বোলার। ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানরা অসাধারণ খেলেছে বলেই আমরা এখানে।’

এবারের বিপিএলে লিগ পর্বে দুইবারের মুখোমুখি লড়াইয়ে একবার করে জিতেছে চিটাগং কিংস ও খুলনা টাইগার্স। তবে আজ যেকোনো এক দলকে বিদায় নিতে হবে, আরেক দল উঠবে ফাইনালে।

চিটাগং কিংসের হিসাবের মধ্যে ছিলেন সাকিব আল হাসান। শেষ পর্যন্ত তাঁকে পাওয়া যায়নি, জায়গাটা পূরণও করা যায়নি নতুন কাউকে নিয়ে। তবে এত দূর পর্যন্ত যখন আসা গেছে, আজ খুলনার বিপক্ষেও ‘ভুল কম্বিনেশনেই’ আস্থা রাখতে চান এনামুল, ‘সাকিবকে না পাওয়াতেই সমস্যা হয়ে গেছে। নয়তো সাতজন ব্যাটসম্যানই থাকত। তবে এ নিয়ে আর ভাবছি না। ব্যাটসম্যানরা দারুণ খেলছে, আমাদের বোলিংও ভালো। আগে ব্যাট করলে ব্যাটসম্যানরা যদি ১৭০-১৮০ রান এনে দিতে পারে, আমার বিশ্বাস, বোলাররা ম্যাচ জিতিয়ে দেবে।’

এক-দুজন করে চিটাগং কিংস এ পর্যন্ত ১০ বিদেশিকে এনেছে। এখনো দলের সঙ্গে আছেন আটজন। দুই পাকিস্তানির একজন ওয়াসিম জুনিয়র চলে গেছেন বিয়ে ঠিক হওয়ায় আর উসমান খান চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে ডাক পাওয়ায়।

দলে ব্যাটসম্যানের ঘাটতি থাকার পরও এত দূর এসেছে চিটাগং কিংস
ছবি: ফেসবুক

স্থানীয় ক্রিকেটাররা খুলনার মূল শক্তি হলেও টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ১০ জন বিদেশি ক্রিকেটার খেলিয়েছে তারাও। এর মধ্যে অবশ্য আমের জামাল খেলেছেন দুই ম্যাচ। দরবেশ রাসুলি, ডম সিবলি ও ওশান টমাস মাত্র একটি করে। লিগ পর্বে খুলনা নামে ভারী বিদেশি ক্রিকেটার আনেনি। তবে প্লে–অফের আগে যে দুই ক্যারিবিয়ানকে উড়িয়ে এনেছে, তারা মোটেও ছোট কেউ নন—শিমরন হেটমেয়ার ও জেসন হোল্ডার। সঙ্গে আছেন আগে থেকেই থাকা মোহাম্মদ নেওয়াজ আর অ্যালেক্স রস।

আরও পড়ুন

অবশ্য আজকের ম্যাচের আগে বা আজ জিতে যদি তারা ফাইনালেও যায়, খুলনার নতুন বিদেশি আনার পরিকল্পনা নেই। কোচ তালহা বলেছেন, ‘দুজনকে তো আনলাম, তারাই থাকছে। আর কাউকে আনার পরিকল্পনা নেই। আমরা যে কম্বিনেশন নিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি, সেটা ভাঙতে চাই না।’ নতুন বিদেশি আনবে না চিটাগং কিংসও। তাদেরও আস্থা দলটাকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসা কম্বিনেশনে, হোক সেটা ‘ভুল’।

‘ভুল’ আর ‘সঠিকের’ লড়াইটা জমে উঠবে বলেই মনে হচ্ছে।