মিয়াঁদাদের সেই ছক্কা থেকে সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪: আফ্রিদির স্মৃতিতে ভারত–পাকিস্তান লড়াই
সাহিবজাদা মোহাম্মদ শহীদ খান আফ্রিদি; শুধু শহীদ আফ্রিদি নামেই পরিচয়। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক, সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সেরা অলরাউন্ডারদেরও একজন। বল পেটানোর মতাদর্শে খুব কড়া বিশ্বাস বলেই যেকোনো জায়গা থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারতেন, হয়ে উঠেছিলেন ‘গেম চেঞ্জার’। ২০১৯ সালে প্রকাশিত আফ্রিদির আত্মজীবনীর নামও সেটাই—গেম চেঞ্জার। যেখানে আফ্রিদি একটা অধ্যায় লিখেছেন ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ নিয়ে তাঁর স্মৃতি। এশিয়া কাপে আজ ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের আগে আফ্রিদির সেই স্মৃতিচারণা ক্রিকেটপ্রেমী পাঠকদেরও রোমাঞ্চিত করবে দারুণভাবে।
কী লিখেছেন শহীদ আফ্রিদি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে বছর আমার অভিষেক হয়, ১৯৯৬, ওটা ছিল ঘটনাবহুল এক বছর।
লাহোরে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জেতে শ্রীলঙ্কা। একই বছরে ভারতীয় ক্রিকেটে আসেন ‘দাদা’ ও ‘দ্য ওয়াল’—সৌরভ গাঙ্গুলী ও রাহুল দ্রাবিড়, দুজনেই টেস্ট অভিষেকে করেন যথাক্রমে ১৩১ ও ৯৬ রান। সেই বছরই লর্ডসে নিজের শেষ টেস্ট পরিচালনা করেন কিংবদন্তি আম্পায়ার ডিকি বার্ড। আর নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা ওয়াসিম ভাই (ওয়াসিম আকরাম) ৩০০তম টেস্ট উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
পরের বছর, পাকিস্তানের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমি প্রথমবারের মতো ভারত সফরে যাই ‘স্বাধীনতা কাপ’ খেলতে। চার জাতির ওই ওয়ানডে টুর্নামেন্টে খেলেছিল শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও স্বাগতিক ভারত।
বছরের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়া সফরে সাফল্য, তার আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঝোড়ো অভিষেক—সব মিলিয়ে রোমাঞ্চকর সময় চলছিল আমার। ভারত সফরটা ছিল গরমের সময়। আবহাওয়া মোটেও সুবিধাজনক না। তবে বেশির ভাগ ম্যাচই ছিল দিন-রাতের। আমরাও ঠিক করে রেখেছিলাম, ভারতকে ওদের মাঠে হারানোর চেষ্টায় আবহাওয়াকে কোনোভাবেই বাধা হতে দেব না।
সিরিজের শুরুতেই ভারত ধাক্কা খায়। কিউইদের একটা ম্যাচে হারালেও শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের কাছে তারা বিধ্বস্ত হয়। আমাদের দলে তখন ওয়াসিম ভাই, ওয়াকার ভাই (ওয়াকার ইউনিস) এবং মুশতাক আহমেদের মতো বোলার ছিলেন না। সবাই ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলছিলেন। সেরা এই তিন বোলারকে ছাড়া কাগজে-কলমে আমাদের বোলিংকে দুর্বল দেখাচ্ছিল, কিন্তু মনোবল ছিল দৃঢ়।
অধিনায়ক ছিলেন রমিজ ভাই (রমিজ রাজা)। আমরা খেলছিলাম বিখ্যাত হালকা সবুজ জার্সিতে—যেটা আমার সব সময়ের প্রিয়। টুর্নামেন্ট ঘিরে উন্মাদনা ছিল অবিশ্বাস্য। আমি নিজেও চেয়েছিলাম ভারতীয় অভিজ্ঞতা নিতে—সিনেমার তারকা দেখা, তাজমহল ঘোরা, ভেলপুরি খাওয়া। তবে সবচেয়ে বড় ইচ্ছা ছিল—ভারতকে হারানো।
ভারতে পৌঁছে যে অভ্যর্থনা পেলাম, তা কল্পনার বাইরে। সাংবাদিকেরা আমাদের পিছু নিতেন, ভক্তরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হোটেলের লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। বুঝলাম, ভারতই আধুনিক ক্রিকেটের কেন্দ্র। এখানে ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, ধর্ম, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা। আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম, মুগ্ধতা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল!
তবে ভুলও হয়েছিল। মোহালিতে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে আমরা ভুল করে কিউইদের প্রথমে ব্যাট করতে পাঠাই। ভেবেছিলাম, তারা হয়তো এত গরম সহ্য করতে পারবে না। সিদ্ধান্তটা ভালো ছিল না। ডানহাতি ওপেনার ও মিডিয়াম পেসার নাথান অ্যাস্টল আমার বলে স্টাম্পড হওয়ার আগে করে ফেলল ১১৭ রান। ২৮৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আমরা খুব চেষ্টা করি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২২ রানে হেরে যাই। ওপেনার হিসেবে আমি যে গতি তৈরি করেছিলাম (৪৬ বলে ৫৯, ৪টি চার, ২টি ছক্কা), সেটা দলের কাজে লাগেনি।
পরের ম্যাচটা ছিল গোয়ালিয়রে, যে শহর একসময় পাঠানদের শাসনে ছিল। সেদিন সাঈদ আনোয়ার আর আমি ওপেনিংয়ে ঝড় তুলি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমরা ২৮৯ রান তুললাম। সাঈদ ছিল ধীরস্থির ৩২ (৬০ বলে), আমি ঝোড়ো ৫২ (২৯ বলে, ৯ চার, ২ ছক্কা)। লঙ্কানরা তখন দুর্দান্ত রান তাড়া করত, কিন্তু সেদিন ৩০ রানে হেরে যায়। অবশেষে, উত্তর ভারতের প্রচণ্ড গরমে পাকিস্তান সিরিজে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিল।
এরপর এল ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচ। আমি সেই মুহূর্তটার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করেছিলাম।
আমার কাছে, ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের আসল শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে, শারজায় জাভেদ মিয়াঁদাদের সেই বিখ্যাত ছক্কা দিয়ে। চেতন শর্মার শেষ বলে মারা সেই শট শুধু পাকিস্তানকে ম্যাচই জেতায়নি, দুই দেশের কোটি কোটি মানুষের মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। পাকিস্তানের জন্য সেটা হয়ে উঠেছিল মানসিক শক্তির প্রতীক। এটা কোনো সাধারণ শট ছিল না।
যখনই ভারত আর পাকিস্তানের তুলনা হতো, তখন সেই শটটি বুঝিয়ে দিত যে পাকিস্তানই ছিল তুলনামূলকভাবে ভালো দল। ব্যস! জাভেদ ভাইয়ের সেই ছক্কাটি এতটাই স্মরণীয় যে আজও যখন পাকিস্তান দল সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলে, সেটি আমাদের বাড়তি প্রেরণা জোগায়। সেই ছক্কার প্রভাব ও আবেশ এমনই ছিল যে এটা নিয়ে একটা কবিতাও লেখা হয়েছিল, যা স্কুলে পড়ানো হতো—
মরুভূমি দাউদাউ জ্বলছিল
আর বল ছিল চেতনের হাতে
ব্যাট করছিল জাভেদ
রান প্রয়োজন চার
এমনটা কখনো হয়নি আগে
চেতন করল অদ্ভুত এক বল
মাটিতে পড়লই না
জানো তো বলটার কী হলো?
সোজা চলে গেল ভিআইপি গ্যালারিতে!
এর পর থেকে শারজার প্রতিটি টুর্নামেন্টেই পাকিস্তান হয়ে উঠল ভারতের দুঃস্বপ্ন। টেলিভিশনে বসে আমি সেই ম্যাচগুলোর একটিও মিস করিনি।
তবে কিছু কষ্টও ছিল। বিশেষ করে ১৯৯৬ সালের বেঙ্গালুরুতে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হারের স্মৃতি। তখনো জাতীয় দলে ডাক পাইনি, তবে টেলিভিশনে দেখেছি কীভাবে আমাদের ব্যাটিং ধসে পড়েছিল। ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ের চার বছর পরের এমন বিদায় পাকিস্তানের জন্য ছিল বেদনাদায়ক। ওটা ছিল ভারতের কাছে বিশ্বকাপে আমাদের আরও একটি বাজে হার।
যখনই আইসিসি টুর্নামেন্টে দুই দল মুখোমুখি হয়, এই দুর্ভাগ্য এখন টেলিভিশন বিজ্ঞাপনেও উঠে আসে। এটা এখন পাকিস্তানের জন্য ‘কার্স অব দ্য বাম্বিনো’ হয়ে গেছে যেন। যদিও আমার বিশ্বাস, বোস্টন রেড সক্স-এর সেই অভিশাপ ভাঙতে যত সময় লেগেছিল, আমাদের ক্ষেত্রে ততটা সময় লাগবে না।
তাই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই ছিল উন্মাদনা। তখনকার দিনে এই লড়াই ছিল খাঁটি, মাঠের ভেতরের। এখনকার মতো বাণিজ্যিক বা মিডিয়া-চালিত নয়। খেলোয়াড়রা মাঠে নামলেই বোঝা যেত প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা তীব্র।
নিজের প্রথম ভারত–ম্যাচে অবশ্য আমি খুবই হতাশ করেছি। আমার নামের পাশে ছিল এক অঙ্কের স্কোর। বল হাতেও তেমন কিছু করতে পারিনি, শুধু আকিব জাভেদের বলে রাহুল দ্রাবিড়ের ক্যাচটি ধরা ছাড়া।
কিন্তু আমার সবকিছু পরিষ্কার মনে আছে। ম্যাচটা ছিল চেন্নাইয়ে। সাঈদ আনোয়ারের সঙ্গে আমি ওপেন করতে নামলাম। দর্শকের গর্জন ছিল আমার শোনা সবচেয়ে তীব্র। মনে হচ্ছিল যেন মাটি কেঁপে উঠছে। আমি যেন ব্যাটটাও ঠিকমতো অনুভব করতে পারছিলাম না। বোলারের দিকেও সম্ভবত ঠিকভাবে তাকাতে পারিনি। সত্যি বলতে, আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এবং আশা করছিলাম প্রথম বলটা যেন কোনোভাবে বেরিয়ে যায়, ব্যাটে না লাগে।
মোটে ৯ মিনিট টিকেছিলাম। করেছিলাম ৬ বলে ৫ রান। তাড়াতাড়ি আউট হওয়ায় খুব একটা অবাক হইনি (আবে কুরুভিলার বলে সৌরভ গাঙ্গুলীর হাতে ক্যাচ)। মনে আছে, পুরোটা সময় আমার মাথা ভনভন করছিল আর বুক ধড়ফড় করছিল। গরমের কারণে, গর্জনের কারণে। ওহ, সেই শব্দ! পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতার শব্দ।
তবে তাড়াতাড়ি আউট হওয়া সত্ত্বেও আমি কিন্তু খেলার মধ্যেই ছিলাম। অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটল, যা পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। এটি এমন এক ঘটনা, যার কারণে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ খেলাধুলার ইতিহাসে অন্যতম সেরা ম্যাচের মর্যাদা পায়। আর সেই ঘটনার কেন্দ্রে ছিলাম আমি।
আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার কয়েক মিনিট পর আমাকে আবার মাঠে নামতে বলা হলো। সাঈদ আনোয়ার তখনো ব্যাট করছিলেন, কিন্তু প্রচণ্ড গরম আর আর্দ্রতায় পানিশূন্য হয়ে পড়েছিলেন। পঞ্চাশ-ষাটে পৌঁছাতেই শুরু হলো ক্র্যাম্প। তখন থেকে আমি তাঁর রানার। সেদিন পাকিস্তানের জন্য, সাঈদ ভাইয়ের জন্য আমি দৌড়েছি প্রায় তিন ঘণ্টা। কল্পনাও করতে পারি না, তাঁর জন্য সেটা কতটা কঠিন ছিল। তিনি টিকে ছিলেন ২০৬ মিনিট। গরম আর আর্দ্রতা ছিল অসহনীয়। কিন্তু ব্যাটে ছিলেন দুর্দান্ত ছন্দে। একের পর এক শট খেলছিলেন।
সাঈদ আনোয়ার যখন নিজের ইনিংসের মাঝপথে, তখনই বোঝা যাচ্ছিল ইতিহাস লেখা হচ্ছে। ভিভ রিচার্ডসের তেরো বছরের পুরোনো বিশ্বরেকর্ড (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১৮৯) ভাঙছেন। ভারতীয় গ্যালারিতে নেমে এল নীরবতা। সেঞ্চুরির পরই বোঝা গেল, তাঁর ছাড়ার কোনো ইচ্ছাই নেই। পুরো মাঠে শুধু আমার ডাকই শোনা যাচ্ছিল—‘ইয়েস’, ‘নো’, ‘ওয়েট’, ‘ডাবল’।
কী দারুণ একটি দিন! কী অসাধারণ এক ইনিংস! সাঈদ আনোয়ারের সেরা রূপ দেখা গিয়েছিল সেদিন। ১৪৬ বলে ১৯৪ রান। ২২টি চার, ৫টি ছক্কা। ইনিংসের সেরা মুহূর্তটা ছিল অনিল কুম্বলেকে পরপর ছক্কা-চারে উড়িয়ে দেওয়া—২, ২, ৬, ৬, ৬, ৪।
আমরা তুললাম ৩২৮। ভারতের হয়ে দ্রাবিড়ও সেঞ্চুরি করলেন। তিনিও রানার নিলেন শচীনকে, কোনো কারণ ছাড়াই। আমরা আপত্তি জানালাম, সেটা গৃহীতও হলো। কিন্তু তাঁর সেঞ্চুরিও ভারতকে জেতাতে পারল না। পাকিস্তান জিতল ৩৫ রানে। আকিব জাভেদ নিলেন ৫ উইকেট।
আর ইতিহাসে প্রথমবার, প্রায় ৫০ হাজার ভারতীয় দর্শক দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাল পাকিস্তান দলকে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এমন দৃশ্য আগে দেখা যায়নি।
প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে, সফরকারী দল হিসেবে আর দেশ হিসেবে—ক্রিকেটারদের প্রতি ভালোবাসা-সম্মানে ভারতের তুলনা হয় না। তাদের ভক্তি ক্রিকেটকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। হ্যাঁ, রাজনীতি নোংরা—মনে আছে মুম্বাইয়ে শিব সেনা পিচ খুঁড়ে ফেলেছিল। সংবাদমাধ্যমও নোংরা খেলে, কথার বিকৃতি ঘটিয়ে বাড়তি উত্তেজনা তৈরি করে। আমি মনে করি, ভারতের গণমাধ্যমই দুই দেশের দূরত্ব বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে। অথচ দুই দেশের সাধারণ মানুষ চায় শান্তি, চায় আরও বেশি ক্রিকেট।
চেন্নাইয়ের সেই ম্যাচের পর আরও কয়েকবার ভারতের বিপক্ষে খেলেছি। ১৯৯৮-এ ঢাকায় স্বাধীনতা কাপের ফাইনাল। ২০০৪-এ পাকিস্তান ‘এ’ দলের অধিনায়ক হয়ে। ২০০৫-এ ইনজির (ইনজামাম উল হক) নেতৃত্বে ব্যাঙ্গালুরু টেস্ট ড্র, আর কানপুরে আমার বিখ্যাত সেঞ্চুরি—৪৬ বলে ১০২ (১০ চার, ৯ ছক্কা)। এরপর ২০০৭–০৮ সফর, ২০১১ বিশ্বকাপ, ২০১২-র টি-টোয়েন্টি। কী দারুণ এক যাত্রা—ভারতে, আর ভারতের সঙ্গে।
তবে সময়ের সঙ্গে পাকিস্তানের ভারত সফর জটিল হয়ে উঠেছে। ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট কারণে নয়, বাইরের নানা কারণে। আমি সব সময় বিশ্বাস করি, এখনো করি, ক্রিকেট হলো ভারত-পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সেতু। ক্রিকেটই দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শ্রেষ্ঠ উপায়। খেলোয়াড়েরা শুধু খেলার নন, কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন, অনুপ্রেরণা দেন।
ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে তীব্র। কিন্তু তবু আমি বিশ্বাস করি, শান্তির একমাত্র সমাধান ক্রিকেট। পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কে আমার এক লাইনের উত্তর—আরও ক্রিকেট। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ভারতীয় সরকার কিংবা তাদের গণমাধ্যম, কেউই এতে রাজি নয়।
তবে এটুকু মানতেই হবে, কষ্ট হলেও বলতে হবে—আমরা যে মানসিক দাপট একসময় ভারতের বিপক্ষে ধরে রেখেছিলাম, আশির দশক থেকে নব্বইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত, সেটা এখন আর নেই। জাভেদ মিয়াদাদের শারজার সেই বিখ্যাত ছক্কার জাদু মিলিয়ে গেছে।
আমার সময়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ ছিল আধুনিক ক্রিকেটের সেরা। শচীন, দ্রাবিড়, গাঙ্গুলী, শেবাগ, যুবরাজ সিং। আর এখন আছে বিরাট কোহলি।
আমার কাছে ভারতই ছিল সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ, সবচেয়ে ভয়ংকর দল, যাদের বিপক্ষে বোলিং করা ছিল সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। তাই এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা অপরিহার্য। এটাই শেষ কথা।
পাঠকের জন্য তথ্য
১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর ২২ বছরের ক্যারিয়ারে শহীদ আফ্রিদি জিতেছেন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ। দলীয় এ সাফল্যের বাইরে গড়েছেন অসংখ্য রেকর্ড। ওয়ানডেতে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে সেঞ্চুরি ও সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড তাঁর। ২০০৭ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট–সেরাও হয়েছেন।
কয়েক দফা অবসর ঘোষণা এবং বয়স নিয়ে বিতর্ক ছড়ালেও ব্যাটিংয়ে ভরপুর বিনোদন দিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে ওয়ানডেতে প্রথম ব্যাটিংয়ে নেমেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর ৩৭ বলে সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড টিকে ছিল পরের ১৮ বছর।