‘বাজবল’ নিয়ে নির্মম অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম: ‘শব দাহ করা হবে, ছাইভস্ম হিথরোয় পাঠানো হবে’
অস্ট্রেলিয়াকে দোষ দেওয়া যায় না। ইংল্যান্ডের প্রতি তাদের ক্রিকেট অঙ্গন কোনো দয়ামায়া দেখায়নি।
পার্থে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে গত শনিবার দুই দিনের মধ্যে ৮ উইকেটে হারে ইংল্যান্ড। তারপর ইংল্যান্ডকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমে। হাস্য-রসাত্মক নির্মম সমালোচনাই করা হয়েছে ইংল্যান্ডের প্রতি।
ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্ট জয় ১৮৮২ সালে। ওভালে সেই টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ইংল্যান্ডের হারের পর লন্ডনের তরুণ সাংবাদিক রেজিনাল্ড শার্লি ব্রুকস পরদিন স্পোর্টিং টাইমস-এ ব্যঙ্গ করে লিখেছিলেন ইংলিশ ক্রিকেটের ‘শেষকৃত্য’। লেখার নিচে বিশেষ দ্রষ্টব্যে ব্রুকস লিখেছিলেন, ‘শবদেহ দাহ করে ছাই নিয়ে যাওয়া হবে অস্ট্রেলিয়ায়।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, পার্থে জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্র দ্য অস্ট্রেলিয়ান ১৪৩ বছর আগে স্পোর্টিং টাইমস–এর ব্যঙ্গের অনুকরণে ‘বাজবলে’র ‘শেষকৃত্য’ প্রকাশ করেছে। কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকসের অধীনে ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক খেলার ধরনকে ‘বাজবল’ বলা হয়।
দ্য অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্র বাজবলের ব্যঙ্গাত্মক শোকবার্তায় লিখেছে, ‘বাজবলের স্নেহপূর্ণ স্মরণে, যা ২০২৫ সালের ২২ নভেম্বর পার্থ স্টেডিয়ামে পরলোকগমন করেছে। গভীর শোক জানাচ্ছে অসংখ্য বন্ধু-স্বজন এবং তৃতীয় দিনের টিকিট কিনেছিলেন যাঁরা। শান্তিতে ঘুমাও।’
‘বিশেষ দ্রষ্টব্য—শব দাহ করা হবে এবং ছাইভস্ম প্রথম ফ্লাইটে হিথরোয় পাঠানো হবে।’
সংবাদপত্রটিতে আরও লেখা হয়, ‘এখন ইংল্যান্ড কী করবে? বাজবল নিজের ফাঁদেই নিজে আটকেছে। হেরেছে নিজেদের খেলাতেই… বাজবল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়েরা চোখ ফিরিয়ে নেয়, কারণ চিরকাল অস্ট্রেলিয়া যেভাবে খেলেছে, এটা সেভাবে খেলারই চেষ্টা। আক্রমণাত্মকভাবে জয়ের পিছু ছোটা। অস্ট্রেলিয়ায় ইংল্যান্ড আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠতে বাজবলের জন্ম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রথম টেস্টে তারা (এর আগে) কখনো এত দ্রুত হারেনি।’
একই প্রতিবেদনে অন্য জায়গায় প্রতিবেদক উইল সোয়ানটন ট্রাভিস হেডের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ইংল্যান্ডের ২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৮৩ বলে ১২৩ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেন হেড। এই পথে ৬৯ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। সোয়ানটন তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদনে লেখেন, ‘আমার মাথা ঘুরছে। পেট ব্যথা করছে। অতিরিক্ত হাসিতে পেশি ফেটে যাওয়ার দশা। একটুও ঘুমাইনি...বাজবল অনেকটাই বোকামি। পরিস্থিতি কিংবা পিচ বুঝতে পারে না। এটা অনেকটাই বোকার ভাবনা যে ভাবে উচ্চ স্বরে কথা বলা দারুণ ব্যাপার। দারুণ বার্তাটা হলো ট্রাভবল ১, বোজোবল ০।’
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্র ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়ান সামনের পাতায় হেড এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের বড় ছবি ছাপিয়ে শিরোনাম করেছে ‘ইংল্যান্ডস ড্যাডি’। অ্যাডিলেডের সংবাদপত্র দ্য অ্যাডভার্টাইজার সাময়িকভাবে তাদের নাম পাল্টে ফেলে, ‘দ্য ট্রাভের্টাইজার’। অ্যাডিলেড ওভালের বাইরে হেডের একটি ভাস্কর্য স্থাপনের দাবিও তুলেছে সংবাদপত্রটি।
পার্থ টেস্ট ৮৪৭ বল স্থায়ী হয়েছে। ১৮৮৮ সালের পর অ্যাশেজে যা সবচেয়ে কম বলের ম্যাচ। দুই দিনের মধ্যে ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। বার্তা সংস্থা অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এএপি) খবরে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড পার্থ টেস্টে তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে শুধু টিকিট বিক্রি থেকেই ৩০ লাখ ডলারের বেশি আয় হওয়ার কথা। কিন্তু দুই দিনের মধ্যেই টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় ৩০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ)।
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম দ্য এজ এক অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকের সঙ্গে কথা বলেছে এ নিয়ে। সেই সমর্থক জার্মানি থেকে উড়ে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। বাবার সঙ্গে পার্থ টেস্টে তৃতীয় দিনের খেলা দেখার ইচ্ছা ছিল তাঁর। বাবার বসবাস সিডনিতে। পার্থের অপ্টাস স্টেডিয়ামের পাশে এক পানশালায় বাবা ও ছেলের সাক্ষাৎ হয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে।
তৃতীয় দিনের খেলা দেখার সুযোগ না পাওয়ায় অ্যালেক্স আর্লি নামের সেই সমর্থক সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে একটি বল না দেখেই আমি জার্মানিতে ফিরে যাব। অপ্টাস স্টেডিয়াম থেকে আইরিশ পানশালাটি পাঁচ মিনিটের পথ। সেখানে বসে অস্ট্রেলিয়ার জয় দেখা একটু অদ্ভুতই। পানশালার জানালা দিয়ে স্টেডিয়াম দেখা যায়।’
ব্রিসবেনে আগামী ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া।