আয়ারল্যান্ডকে অভিনন্দন। বিশ্বকাপের বেশ আগে থেকেই ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলার উপহার পেল তারা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজকের এ জয়কে অঘটন বললে অন্যায় করা হবে। তারা খুব ভালো খেলেছে।
আজ আইরিশদের ঐতিহাসিক জয়ে একবারও মনে হয়নি তারা ইংল্যান্ডের তুলনায় ছোট দল। তাদের উন্নতিটা একদম পরিষ্কার চোখে পড়ছে। খেলার মানের মধ্যে একসময় যে দূরত্বটা ছিল, সেটা এখন আর অন্তত এই ফরম্যাটে সেভাবে নেই। আয়ারল্যান্ডের আজকের এ জয় তুলনামূলক সব ছোট দলের জন্যই একটা বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
এবারের বিশ্বকাপে যে কটি দলকে ফেবারিট মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে ওপরের দিকেই আছে ইংল্যান্ড। অথচ দ্বিতীয় ম্যাচেই তাদের পরাজয়ের মুখ দেখতে হলো। বৃষ্টি আইনে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হলেও বলতে দ্বিধা নেই, যোগ্য দল হিসেবেই আয়ারল্যান্ড এ ম্যাচে বিজয়ী হয়েছে।
অন্যদিকে ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও তেমন আহামরি ব্যাটিং দেখাতে পারেনি। ধারণা করেছিলাম, সেটা হয়তো একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু আজকের ব্যাটিং দেখে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংকে বেশ আস্থাহীন মনে হয়েছে। দ্রুত এর থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সামনের দিনগুলো ইংল্যান্ডের জন্য আরও কঠিন হতে পারে।
মার্ক উডের গতিময় বোলিং প্রথম দিকে কিছুটা চাপের মুখে ফেললেও সেটা কাটিয়ে উঠে আয়ারল্যন্ড দারুণ শুরু পেয়ে যায়। সেটাই তারা প্রায় ১৫ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। ভিত্তি পেয়ে যাওয়ায় আইরিশরা একটা বড় সংগ্রহেরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। ইংল্যান্ডের অতি আক্রমণাত্মক শর্ট পিচ বোলিং কৌশল ভালোই কাজে লাগিয়েছে আয়ারল্যান্ড। সেই অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও ইংল্যান্ডকে রক্ষা করেছেন লিয়াম লিভিংস্টোন।
লিভিংস্টোনকে দেখেছি কিছুটা ওপরে বল করতে। এতেই দেখলাম, ৩ উইকেট পেয়ে গেল লিভিংস্টোন। এটাই বোধ হয় এই কন্ডিশনের জন্য আদর্শ লেংথ, যা কাল শ্রীলঙ্কার লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে করতে দেখিনি।
১৫৭ রান অবশ্য বেশি মনে হয়নি। বিশেষ করে ইংল্যান্ড দলের বড় রান করার খ্যাতির কাছে রানটাকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ না হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যাটিংয়ের মতো আয়ারল্যান্ডের বোলিংয়ের সূচনাটাও হয়েছিল দারুণ। ইংল্যান্ডের মতো শর্ট পিচ বোলিং কৌশল অবলম্বন না করে তারা ওপরে বল করেছে। কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে সুইং করিয়েছে। দ্রুতই জস বাটলার, অ্যালেক্স হেলস, বেন স্টোকসকে হারিয়ে বেশ শঙ্কিত মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ডকে।
বড় ক্ষতিটা তখনই হয়ে গেছে। ডেভিড মালান চেষ্টা করেছে। এরপর মঈন আলীর আগ্রাসী ব্যাটিং ইংল্যান্ডকে কিছুটা হলেও ফিরিয়ে এনেছিল ম্যাচে। কিন্তু যে ভয়টা সব সময়ই ছিল, সেই বৃষ্টিই বাদ সাধল। তাতে পুনরাবৃত্তি ঘটল ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড ম্যাচের।
যেহেতু মেলবোর্নেই খেলা, নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের ম্যাচেও বৃষ্টির ব্যাঘাত অনুমেয়ই ছিল। পুরো ম্যাচটাই ভেসে গেল বৃষ্টিতে এবং দুই দলের পয়েন্ট ভাগাভাগি হলো। এই ম্যাচের পর অস্ট্রেলিয়া নিশ্চয়ই কিছু স্বস্তি পাবে। প্রথম ম্যাচ হেরে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও অস্ট্রেলিয়া থেকে বেশি দূর যেতে পারেনি বাকি দলগুলো।
নিউজিল্যান্ডেরও ক্ষতি হলো। প্রথম ম্যাচে বড় জয়ের পর তারা নিরাপদ বোধ করছিল। কিন্তু এখন সে পরিস্থিতি থাকছে না। পরের ম্যাচে যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যায়, তাহলে হয়তো নিউজিল্যান্ডই পিছিয়ে পড়বে।
আগামীকাল সিডনিতে বাংলাদেশের ম্যাচে অবশ্য বৃষ্টির ভয় তুলনামূলক কম থাকার কথা। আশা করি, পুরো ম্যাচটাই হবে। সিডনিতে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে ২০০ রান হয়েছে। আশা করি, কালও ভালো রান হবে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের ভালো করতে হবে। বাংলাদেশের পেসাররা এর মধ্যেই দেখিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে তারা মানিয়ে নিয়েছে। এবার ব্যাটসম্যানদের পালা। আমরা চাইব ব্যাটিংয়ে উন্নতি। প্রথম ম্যাচে আমরা কিছু ক্ষেত্রে ভালো করেছি।
শুরু ও শেষটা ভালো হলেও মাঝে তেমন ভালো করিনি। শুধু আফিফ হোসেন রান করেছেন। আমাদের মূল ব্যাটিং-স্তম্ভ—লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানের দিকে তাকিয়ে থাকবে দল। ইয়াসির আলীর কাছেও ভালো কিছুর আশা থাকবে। সব মিলিয়ে ১৬০-১৭০ রানের একটা ব্যাটিং পারফরম্যান্স প্রত্যাশা করব।
প্রথম ম্যাচে জয়ের মানসিকতাটা ধরে রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন আমরা চারজন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলেছি। আজ দল কোন পথে যাবে, সেটা দেখতে চাইব। ম্যানেজমেন্ট একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান খেলানোর কথা ভাবতেও পারে। সেটা করতে গেলে আমাদের চারজন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলতে হবে। সেটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে, তা-ও আবার ভেবে দেখার বিষয়। তবে আমার বিশ্বাস, ম্যানেজম্যান্ট সেরা সিদ্ধান্তটাই নেবে।