ক্ষুব্ধ লিটন বললেন, ‘বোর্ড বলেছে, যে দল দেবে, সেটা নিয়েই কাজ করতে হবে’

ক্ষুব্ধ লিটন দাসপ্রথম আলো

সংবাদ সম্মেলন শেষ। বেরিয়ে যাচ্ছিলেন লিটন দাস।

এক সাংবাদিক লিটনকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য শুভকামনা জানালেন। স্বাভাবিক সময়ে লিটন এমন শুভকামনার উত্তর হাসিমুখে দেন। কিন্তু আজ? আজ তিনি একদমই চুপ! সোজা হাঁটা ধরলেন ড্রেসিংরুমের পথে।

‘স্বাভাবিক সময়’ কথাটা ব্যবহার করতে হচ্ছে, কারণ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগের সংবাদ সম্মেলনে লিটন যা বলে গেলেন, তা একরকম অস্বাভাবিক। এতটা সোজাসাপটাভাবে বোর্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে সচরাচর কোনো অধিনায়ককে দেখা যায় না।

লিটনের ক্ষোভ প্রকাশের শুরুটা ছিল টি-টোয়েন্টি দল থেকে শামীম হোসেনের বাদ পড়াকে ঘিরে করা একটি প্রশ্নে। শামীমের পারফরম্যান্স অবশ্য আহামরি ভালো ছিল না। সর্বশেষ তিন টি-টোয়েন্টিতে তাঁর স্কোর ০, ১, ১। তাই এই সিরিজে তিনি দলে না থাকায় কেউই খুব একটা অবাক হননি। কিন্তু এই বাদ পড়ার বিষয়ে অধিনায়কের দৃষ্টিভঙ্গি কী, তা জানতে চাইতেই জ্বলে উঠলেন লিটন। সোজাসাপটা বললেন, ‘দেখেন, (শামীম) থাকলে অবশ্যই ভালো হতো। এটা আমার কল (সিদ্ধান্ত) না, পুরোপুরি নির্বাচকদের কল। আমি জানি না কেন, কিন্তু নির্বাচকেরা আমাকে কোনো কিছু নোটিশ করা ছাড়াই শামীমকে বাদ দিয়ে দিয়েছে দল থেকে, উইদাউট অ্যানি নোটিশ।’

আরও পড়ুন

এটুকু বলেই থামলেন না; রীতিমতো প্রশ্ন তুললেন দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে, ‘আমি এত দিন জানতাম যে একটা দল যখন মানুষ হ্যান্ডল করে, অন্তত অধিনায়ক জানে যে কোন খেলোয়াড়টা ঢুকবে, কোন খেলোয়াড়টা আউট হবে।’

শামীম হোসেনকে দলে চেয়েছিলেন লিটন
প্রথম আলো

না জানিয়ে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি লিটনের ক্ষোভের আরও একটা কারণ পাওয়া গেল সংবাদ সম্মেলনের পরের অংশে। শামীমের জায়গায় দলে এসেছেন মাহিদুল ইসলাম। মিডল অর্ডারে তাঁর সঙ্গে আছেন সাইফ হাসান, তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী ও নুরুল হাসান। তাঁরা সবাই–ই ডানহাতি ব্যাটসম্যান!

আমাকে পুরোপুরি বলা হয়েছে নির্বাচক প্যানেল ও বোর্ড থেকে, আমাকে যে দলটা দেওয়া হবে, সেই দল নিয়েই কাজ করতে হবে। আমার এখানে কথা থাকবে না যে আমি কোন খেলোয়াড়কে চাই, কোন খেলোয়াড়কে না চাই।
চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস

এমন ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা করাটা সহজ হয়ে যায় কি না—এমন প্রশ্নে লিটনের উত্তর, ‘গুড পয়েন্ট! আমার মনে হয় এটা আমাদের ভাবা উচিত। আপনার (সাংবাদিকের) মাথায় যে বুদ্ধিটা এসেছে, সেই বুদ্ধি যদি আমাদের ওপর থেকে আসত, খুব ভালো হতো। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনাকে রাইট হ্যান্ড-লেফট হ্যান্ড (ব্যাটিংয়ে) করতে হবে।’

শামীদের জায়গায় দলে এসেছেন মাহিদুল ইসলাম
শামসুল হক

লিটন মনে করেন, সব খেলোয়াড়ের কাছে সব সিরিজে পারফরম্যান্স আশা করা ঠিক নয়, ‘আমরা চেষ্টা করেছি এত দিন ধরে দলটা গোছানোর জন্য। শামীম কিন্তু একটা সময় ছিল, যে দু-তিনটা সিরিজে এক্সট্রা অর্ডিনারি ক্রিকেট খেলেছে, যেটা আমাদের দরকার ছিল। সেখান থেকে যদি শামীম বাদ পড়ে, শামীমের জন্য হতাশাজনক।’

অধিনায়ক হিসেবে নিজের অক্ষমতার কথাও জানান লিটন, ‘অধিনায়ক হিসেবেও আমি সরি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না তাকে। কারণ, আমি এক্সপেক্ট করি না কখনোই আমাকে ১৫টা খেলোয়াড়ই প্রতিদিন পারফর্ম করে দেবে। দু-তিনটা সিরিজে যখন পারফর্ম করবে না, তাকে আমার সমর্থন দেওয়াটা উচিত। আমি সত্যিই সরি যে আমি তাকে সমর্থন দিতে পারিনি।’

আমি এত দিন জানতাম, যখন অধিনায়ক হয় মানুষ, তার দল গোছানোর একটা পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু সম্প্রতি জানতে পারলাম, যে দলটা আমাকে দেওয়া হবে, আমার কাজ হচ্ছে সেই দলটাকে নিয়ে ভালো কিছু দেওয়া মাঠে।
চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস

অধিনায়ক হিসেবে বোর্ডের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন কি না—জানতে চাওয়ায় লিটনের ক্ষোভের আগুনের আঁচ আরও বাড়ল। বোর্ড বা নির্বাচকদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে লিটন যেন সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেললেন, ‘আমাকে পুরোপুরি বলা হয়েছে নির্বাচক প্যানেল ও বোর্ড থেকে, আমাকে যে দলটা দেওয়া হবে, সেই দল নিয়েই কাজ করতে হবে। আমার এখানে কথা থাকবে না যে আমি কোন খেলোয়াড়কে চাই, কোন খেলোয়াড়কে না চাই।’

অধিনায়ক হওয়ার আগে পুরোনো ধারণার সঙ্গে বর্তমান অবস্থার ফারাকটাও লিটন তুলে ধরলেন এভাবে, ‘আমি এত দিন জানতাম, যখন অধিনায়ক হয় মানুষ, তার দল গোছানোর একটা পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু সম্প্রতি জানতে পারলাম, যে দলটা আমাকে দেওয়া হবে, আমার কাজ হচ্ছে সেই দলটাকে নিয়ে ভালো কিছু দেওয়া মাঠে।’

টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে এখন চট্টগ্রামে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা
বিসিবি

দল নির্বাচনে অধিনায়ক ও কোচের ভূমিকা থাকা উচিত বলে মনে করেন লিটন। বিশ্বকাপেও একই ঘটনা ঘটলে কী করবেন—এমন প্রশ্নে লিটন কেবল বললেন, ‘আমাকে যে দলটা দেওয়া হবে, আমি সেই দল নিয়ে চেষ্টা করব একাদশ খেলানোর।’

এমন চলতে থাকলে অধিনায়ক হিসেবে তিনি থাকবেন কি না—জানতে চাইলে লিটন শুধু বলেন, ‘ওটা পরে দেখা যাবে।’

চট্টগ্রামে আগামীকাল টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।