যে ৭টি কারণে ধোনিকে আপনার মনে রাখতেই হবে

আজ ধোনির ৪৪তম জন্মদিন। এই দিনে ধোনিকে মানুষ কেন মনে রাখবে, এমন সাতটি কারণ খোঁজার চেষ্টা করা যেতে পারে।

মহেন্দ্র সিং ধোনিকে আপনি কেন মনে রাখবেন?

কেউ এই প্রশ্ন করলে আপনিও একটা পাল্টা প্রশ্নও ছুড়ে দিতে পারেন—তাঁকে ভুলব কীভাবে? কাউকে ভালোবাসলে সমর্থকেরা তাঁকে কারণে বা অকারণে মনে করবেনই! তবে কিছু ক্রিকেটার এমন, যাঁদের আপনি মনে করতে বাধ্য। হতে পারে সেটি রেকর্ডের কারণে কিংবা তিনি এক বর্ণাঢ্য চরিত্র বলে।

ধোনি আসলে কোন শ্রেণির? নাকি এসব মিলে যা দাঁড়ায়, সেটাই ধোনি। যাঁকে মানুষ ভালোবাসে, যিনি মাঠে ব্যাটসম্যান বা অধিনায়ক হিসেবে একের পর এক কীর্তি আর রেকর্ড গড়েন...সব মিলিয়ে হয়ে ওঠেন দুর্দান্ত একটা চরিত্র।

তবু ধোনিকে মানুষ কেন মনে রাখবে, এমন সাতটি কারণ খোঁজার চেষ্টা করা যেতে পারে। সংখ্যাটা কেন ৭, সেটি নিশ্চয়ই জানেন! ধোনির জন্ম ৭ তারিখ, সেটি ছিল সপ্তাহের সপ্তম দিন। মাসের সিরিয়ালে জুলাইও সপ্তম। সালটা ছিল ১৯৮১। ৮ থেকে ১ বিয়োগ করলে হয় ৭। এসব কারণেই ধোনি ‘সাতাচ্ছন্ন।’ জার্সি নম্বর ৭। আর সেটি অন্য কেউ পরতেও পারবেন না।  তিনি অবসর নেওয়ার পর ভারত ৭ নম্বর জার্সি অবসরে পাঠিয়েছে। তাই কারণ খুঁজতে গিয়ে সাতকে আর দূরে সরিয়ে রেখে কী হবে!

যিনি সব জিতিয়েছেন

২০০৭ সালে তরুণ দল নিয়ে জিতেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এরপর ২০১১ সালে ঘরের মাঠে পাহাড়সম চাপ নিয়ে ধোনি ভারতকে ওয়ানডে বিশ্বকাপও জেতান। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাচসেরাও হন ক্যাপ্টেন কুল।

২০০৭ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানোর পর ধোনি
এএফপি

ক্লাইভ লয়েড ও রিকি পন্টিংয়ের পর তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনাল-সেরা হন ধোনি। এরপর ২০১৩ সালে দলকে জেতান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। তখন আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ থাকলে হয়তো পরীক্ষায় এটিও যোগ হতো! ছিল না, তাতে ধোনির তো দায় নেই।

থালাপতি নয়, থালা

চেন্নাই সুপার কিংস সমর্থকেরা ধোনিকে কী নামে ডাকে, জানেন তো? থালা, যার মানে নেতা। থালাপতি নয়। এটি দক্ষিণ ভারতের অধিনায়ক বিজয়ের উপাধি। তামিলনাড়ুর ৯ থেকে ৯০ বছর বয়সী সবাই ধোনিকে নেতাই মানেন। সে কারণেই তো ৪৩ বছর বয়সেও চেন্নাইয়ের হয়ে আইপিএল খেলে যাচ্ছেন। চেন্নাইয়ে ধোনির খেলা প্রতিটি ম্যাচই যেন একেকটা সিনেমা।

এটা এমনি এমনি হয়নি। অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান হিসেবে ধোনি যা চেন্নাইকে দিয়েছেন, তাতেই হয়েছে। সব মিলিয়ে ধোনি চেন্নাইকে ২৪৪টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা আইপিএলে সর্বোচ্চ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ড। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৩১৪ রান করেছেন ধোনি। তবে আইপিএলে চেন্নাইয়ের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৪৮৬৫ রান ধোনিই করেছেন।

দলকে জিতিয়েছেন ৫টি শিরোপা, যা রোহিত শর্মার সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। বলে রাখা ভালো, রোহিতের সঙ্গে ধোনির একটা পার্থক্য আছে। রোহিত মুম্বাইকে শুধু অধিনায়ক হিসেবে দলকে জিতিয়েছেন। আর ধোনি? তিনি চেন্নাইয়ের মেন্টর থেকে অধিনায়ক সব। বলা যায় ফ্র্যাঞ্চাইজিটি তাঁর বুদ্ধিতেই চলে।

আরও পড়ুন

অধিনায়কত্বের রেকর্ড

ধোনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেতৃত্বের এক অনন্য রেকর্ডের মালিক। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৩২টি ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি—২০০টি ওয়ানডে, ৬০টি টেস্ট ও ৭২টি টি-টোয়েন্টি।

তিন সংস্করণ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন ধোনি
এএফপি

ক্রিকেট ইতিহাসে ধোনিই একমাত্র অধিনায়ক, যিনি তিন সংস্করণেই ৫০টির বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ধোনির পরের অবস্থানে আছেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক রিকি পন্টিং। ৩২৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন পন্টিং। ধোনিই একমাত্র অধিনায়ক, যিনি ৬টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

উইকেটের পেছনের ধোনি

ধোনি স্টাম্পের পেছনে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য সব তৎপরতায় আউট করেন ব্যাটসম্যানদের। এক-দুইবার নয়, অজস্রবার। এই সর্বশেষ আইপিএলেও তাঁর কয়েকটি স্টাম্পিং সবাইকে অবাক করেছে। এই বয়সেও কীভাবে এত ভালো রিফ্লেক্স তাঁর!

উইকেটের পেছনের ধোনি আরও অবিশ্বাস্য
এক্স

তিন সংস্করণ মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৯৫টি স্টাম্পিং করেছেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কুমার সাঙ্গাকারার, ১৩৯টি। আর এই উইকেটের পেছনে বসেই অধিনায়ক হিসেবে দাবার চাল চালেন ধোনি। তাই ধোনির কথা মনে পড়লে গ্লাভস হাতে থাকা ধোনির চেহারাই ভেসে ওঠে।

আরও পড়ুন

ধোনি নট আউট

৩৫০টি ওয়ানডের মধ্যে ৮৪টি ম্যাচে নট আউট থেকেছেন ধোনি, যা ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ‘ব্যাটসম্যান’দের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি নট আউট ধোনিই থেকেছেন।

১৪২ বার সব মিলিয়ে নট আউট ছিলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। তাঁর চেয়ে ১৮ বার বেশি নট আউট ছিলেন জেমস অ্যান্ডারসন। ইংলিশ এই পেসারের নট আউট থাকার সঙ্গে ধোনির নট আউট থাকার পার্থক্য যে আছে, সেটা তো বুঝতেই পারছেন!

হরভজন সিং নাকি যোগিন্দর শর্মা

এক ওভারে প্রতিপক্ষের দরকার ১৩ রান। আপনি কার হাতে বল তুলে দেবেন? বেশির ভাগই অধিনায়কই হরভজনের হাতে বল দিতেন। কারণ, নামে ভারে কোনো কিছুতেই হরভজনের পাশেও বসতে পারবেন না যোগিন্দর। কিন্তু ধোনি এই যোগিন্দরে বাজি ধরেই ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত পরবর্তী সময়ে অধিনায়কদের জন্য রেফারেন্স হিসেবে পরিণত হয়।

ধোনি সেদিন যা ভেবেছিলেন, জানিয়েছিলেন ম্যাচের পর, ‘ভাজ্জি (হরভজন সিং) ডেথ ওভারে ইয়র্কার মারার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল না। আমি ভেবেছিলাম, এমন কাউকে বল দেওয়া উচিত, যে সত্যিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে চায়।’ এই ঝুঁকিটি কতজন নিতে পারবেন? একবার ভাবুন তো সেদিন ভারত বিশ্বকাপ না জিতলে কী হতো!

দ্য হেলিকপ্টার শট

চাইলে ধোনি এই শটটির স্বত্বও নিয়ে নিতে পারেন। কারণ, ক্রিকেটে হেলিকপ্টার শটের কথা উঠলেই যে ধোনির কথাই মনে পড়ে। শোনা যায়, ভারতীয় ক্রিকেটে এই শটটি প্রথম খেলেছিলেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। তবে ধোনি এটি নিয়মিত খেলায় এটি তাঁর নামের সঙ্গেই জুড়ে গেছে।

ধোনির হেলিকপ্টার শট
বিসিসিআই

এই শটেই ইয়র্কার বলগুলোকে অনেকবার মাঠের বাইরে পাঠিয়েছেন ধোনি। এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হেলিকপ্টার শট শিখেছিলেন তাঁর বন্ধু সন্তোষের কাছ থেকে। টেপ টেনিস ক্রিকেটে এই শটটি নিয়মিত খেলতেন ধোনির সেই বন্ধু।

আরও পড়ুন