আম্বানিদের ট্রফি ক্যাবিনেটে ‘লাকি নম্বর ১৩’

সাফল্যের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে যখন ১৩–তে গিয়ে পৌঁছায়, তখন সেটিও হয়ে যায় ‘লাকি নম্বর’। এশিয়া মহাদেশের শীর্ষ ধনী আম্বানি পরিবারের জন্য ব্যাপারটি এখন তেমনই।

যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে কাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আম্বানির পরিবারের মালিকানাধীন দল এমআই নিউইয়র্কছবি: ফেসবুক

বদ্ধমূল বিশ্বাস হোক কিংবা অযৌক্তিক ধারণা—১৩ সংখ্যাটিকে অনেকেই দুর্ভাগ্যজনক বা অপয়া মনে করেন। এ কারণে ১৩–কে ‘আনলাকি থার্টিন’ বলা হয়।

কিন্তু সাফল্যের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে যখন ১৩–তে গিয়ে পৌঁছায়, তখন সেটিও হয়ে যায় ‘লাকি নম্বর’। আম্বানিদের জন্য ব্যাপারটি এখন তেমনই। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটের (এমএলসি) তৃতীয় আসরে গতকাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এমআই নিউইয়র্ক, যা এশিয়া মহাদেশের শীর্ষ ধনী এই পরিবারের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ১৩তম ট্রফি।

টেক্সাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে ফাইনালে ওয়াশিংটন ফ্রিডমকে ৫ রানে হারিয়েছে এমআই নিউইয়র্ক। কাইরন পোলার্ড, নিকোলাস পুরান, কুইন্টন ডি ককদের নিউইয়র্ক আগে ব্যাটিংয়ে নেমে করে ১৮০ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রবীন্দ্রদের ওয়াশিংটন থামে ১৭৫ রানে।  

এমআই নিউইয়র্কের শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাস
ছবি: এমএলসি

অথচ এমএলসির লিগ পর্বে ৭ ম্যাচ হেরে খাদের কিনারে পৌঁছে গিয়েছিল এমআই নিউইয়র্ক। শুধু নেট রানরেটে কিছুটা এগিয়ে থাকার কারণে টেনেটুনে প্লে–অফ পর্ব উঠেছিল।

তবে আসল জায়গায় গিয়ে কাজের কাজটা করতে পেরেছে পুরানের নেতৃত্বাধীন দল। এলিমিনেটর, দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের পর ফাইনাল শেষেও জয়ের উচ্ছ্বাস নিয়ে মাঠ ছেড়েছে এমআই নিউইয়র্ক।

এ বছর এটি আম্বানি পরিবারের তৃতীয় ট্রফি। ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০–তে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাদের মালিকানাধীন দল এমআই কেপটাউন, মার্চে ডব্লুপিএলের (মেয়েদের আইপিএল নামে পরিচিত) শিরোপা জিতেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ট্রফি জয়ের রেকর্ডটা অনেক আগে থেকেই আম্বানি পরিবারের মালিকানাধীন ইন্ডিয়াউইন স্পোর্টস লিমিটেডের। কাল সংখ্যাটা বাড়িয়ে ১৩–তে নিয়ে গেছে তারা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাতটি করে ট্রফি জিতেছে শাহরুখ খানের নাইট রাইডার্স গ্রুপ এবং সুপার কিংস ক্রিকেট লিমিটেড।

ইন্ডিয়াউইন স্পোর্টস লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে আইপিএল দিয়ে। কিন্তু নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় বলে মূল মালিক মুকেশ আম্বানি ক্রিকেটে খুব বেশি সময় দিতে পারেন না। এ কারণে তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের এই দিকটা দেখেন স্ত্রী নিতা আম্বানি ও দুই ছেলে আকাশ আম্বানি ও অন্তত আম্বানি।

আরও পড়ুন

মা ও দুই ছেলে মিলে নিজেদের রিলায়েন্স গ্রুপের ইন্ডিয়াউইন স্পোর্টস লিমিটেডকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আইপিএলের পর টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনেছেন ডব্লুপিএল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি২০ (আইএলটি২০), দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০ ও যুক্তরাষ্ট্রের এমএলসিতে। এসব লিগে শুধু অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে দল কেনেনি আম্বানি পরিবার, সম্ভাব্য সব প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতে বৃত্তপূরণও করে ফেলেছে।

বিশ্বজুড়ে ইন্ডিয়াউইন স্পোর্টস লিমিটেডের পাঁচটি দল আছে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

অথচ আম্বানি পরিবারকে প্রথম শিরোপার স্বাদ পেতে ৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়। ২০০৮ সালে আইপিএল দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস প্রথম ট্রফির দেখা পায় ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ টি-টোয়েন্টি জিতে। ২০১৩ সালে জেতে আরেকটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। ওই বছরই আইপিএলে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি।

এরপর ২০১৫, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২০ সালেও আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গে যৌথভাবে পাঁচটি করে ট্রফি জিতে তারাও আইপিএল ইতিহাসের সফলতম দল।

গত পাঁচ বছর ধরে আইপিএলে আম্বানি পরিবারের শিরোপা–খরা চললেও অন্য টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে তাদের দল সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছে। ২০২৩ সালে ডব্লুপিএলের উদ্বোধনী আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস নারী দল। একই বছর এমএলসির প্রথম আসরেরও শিরোপা জেতে এমআই নিউইয়র্ক।

২০২৪ সালে আরব আমিরাতের আইএল টি–টোয়েন্টিতে এমআই এমিরেটস নামের দলটিও চ্যাম্পিয়ন হয়। আর এ বছর এসএ২০, ডব্লুপিএল এবং আবার এমএলসির শিরোপা জিতল এমআই কেপটাউন, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও এমআই নিউইয়র্ক।