‘ছোট’ ব্যাট, ‘মাসল মেমরি’, আরও যেভাবে মিরপুরে ‘স্পিন–স্বর্গে’ ভালো করার পথ খুঁজছে বাংলাদেশ
সাধারণত ম্যাচের আগে ব্যাটসম্যানদের ‘রেঞ্জ হিটিং’ করতে দেখা যায়—বড় শটের অনুশীলন। কিন্তু আজ দৃশ্যটা ছিল একটু আলাদা।
সকালের অনুশীলনটা শুরু হয়েছিল অন্য দিনের মতোই। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এসে টিম মিটিং, তারপর ওয়ার্মআপ। এরপর ফিল্ডিং অনুশীলন। সবকিছুই যেন নিয়মমাফিক চলছিল।
কিন্তু পরে চেনা দৃশ্যটায় হঠাৎ একটু ভিন্নতা। ইনডোরে ব্যাট–বলের অনুশীলনে যাওয়ার কথা থাকলেও সবাই থেমে গেলেন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের এক পাশে, নেট দিয়ে ঘেরা একটি সেন্টার উইকেটের সামনে।
ফিল্ডিং অনুশীলন শেষে ব্যাটসম্যানরা তখন ব্যাট–প্যাড পরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেই সময়েই প্রধান কোচ ফিল সিমন্স গিয়ে স্টাম্প গেড়ে দেন সেখানে। ইনডোরে যাওয়ার পথে তাঁকে ঘিরে তৈরি হয় ছোট্ট জটলা।
একটু পরেই সেখানে যোগ দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে থাকা সব ব্যাটসম্যান। আলাপ শুরু হয়ে গেছে দেখে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও ছুটে এলেন। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলা সেই আলোচনায় বক্তা তিনজন—প্রধান কোচ সিমন্স, সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন এবং শেষে মিরাজ।
তাঁরা কী বলছিলেন, অনুমান করা কঠিন নয়। নিজেদের জয়ের স্বার্থে মিরপুরের উইকেটে টিকে থাকার কৌশল নিয়েই হয়তো আলাপ চলছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে জিতে সিরিজে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। আগামীকাল পরের ম্যাচটা সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলার, তাই স্পিন সামলানোর প্রস্তুতিতেও ত্রুটি রাখেননি কেউ।
সাধারণত ম্যাচের আগে ব্যাটসম্যানদের ‘রেঞ্জ হিটিং’ করতে দেখা যায়—বড় শটের অনুশীলন। কিন্তু আজ দৃশ্যটা ছিল একটু আলাদা। সেন্টার উইকেটের নেটের পাশে ফিল্ডার সাজিয়ে নাসুম আহমেদ ও রিশাদ হোসেনদের বল খেলেছেন প্রায় সব ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে দলীয় অনুশীলনে ভিন্নতার এই ছাপ নিয়েই আজ মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ। তাঁর কথায়, ‘আমরা অনুশীলনটাকে ম্যাচের আবহের খুব কাছাকাছি রাখতে চেয়েছি। কারণ, ক্রিকেটারদের মাসল মেমরি যেন ম্যাচের বাস্তব পরিস্থিতির মতো থাকে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, কাল আমরা খেলব—পরিস্থিতিটা এ রকম, খেলার মাঝের সময়গুলো এমন হতে পারে।’
এরপর আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘মাঝের ওভারগুলোয় কীভাবে দৌড়ে রান নিতে হবে, সেটা আলাদা করে বলা হয়েছে। স্পিনাররা নিজেদের ফিল্ড পজিশনও সেভাবে সাজিয়েছে। আজকের অনুশীলনটা আসলেই ছিল ম্যাচ আবহের মতো। ’
ব্যাটসম্যানরা পরে ইনডোরে ব্যাটিং অনুশীলন করলেও স্পিনারদের পুরো সেশন হয়েছে সেন্টার উইকেটে। রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ ও তানভীর ইসলাম নিজেদের মতো ফিল্ড সাজিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের। পাশে ছিলেন কোচ সিমন্স আর মুশতাক।
স্পিনারদের ‘গুরু’ মুশতাক বললেন, ‘ফিল্ড পজিশনের ক্ষেত্রে আপনাকে খুবই চতুর হতে হবে। কখনো কখনো শুধু ফিল্ডার ঠিক জায়গায় রাখলেই ব্যাটসম্যানকে আউট করা যায়। কোনো ব্যাটসম্যান সামনে পায়ে বেশি খেলে, নাকি পেছনে, সেটা বুঝে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। ৮৫ কিলোমিটারে বল করবেন, নাকি ৯০–এর ওপরে—এসব তথ্য আমরা দিয়েছি, বাকিটা ওদের কাজ।’
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে স্পিনারদের এই অনুশীলনে আরেকটি বিষয় নজর কেড়েছে। সাধারণ ব্যাটের সঙ্গে ছোট ব্লেড আর বড় হ্যান্ডেলের ‘মঙ্গুজ’ ব্যাট দিয়ে অনুশীলন করেছেন তানজিদ হাসান ও সৌম্য সরকার। সাধারণত টি–টোয়েন্টিতে বড় হিটিংয়ের সময় ব্যবহার করা হয় এই ব্যাট। কিন্তু আজ সেটাই কেন?
ব্যাখ্যা দিলেন মুশতাক, ‘ছোট ব্যাট দিয়ে অনুশীলন করলে ব্যাটসম্যান তার গ্র্যাভিটি লেভেল নিচে নামাতে পারে। টার্নিং উইকেটে খেলতে হলে মাথা বলের কাছাকাছি রাখতে হয়। পায়ের মুভমেন্ট অলস হলে স্পিনার সহজেই আউট করতে পারে। ছোট ব্যাটের অনুশীলন নিশ্চিত করে যে ফ্রন্টফুটে বা ব্যাকফুটে, যেভাবেই খেলুন না কেন, মাথা বলের কাছেই থাকবে, আর বলটা দেরিতে খেলবেন।’