ক্যাচ মিসের কারণেই হৃদয় ভাঙার গল্প

ভালো ব্যাটিং আর বোলিং করেও বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে জিততে পারেনি বাংলাদেশআইসিসি

স্বর্ণা আক্তারের চোখেমুখে হতাশা। অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে ছিলেন রাবেয়া আক্তার। নিগার সুলতানার চোখে যেন প্রশ্ন—এটা কী হলো! রাবেয়ার বলে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দেওয়া স্বর্ণা আক্তার ছাড়লেন নাদিন ডি ক্লার্কের ক্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ ভরসা ডি ক্লার্ক ‘জীবন’ পাওয়ার সময় জয়ের জন্য তাঁদের ১০ বলে দরকার ছিল ৯ রান।

সেই ডি ক্লার্কই শেষ ওভারে প্রথম তিন বলে একটি করে চার ও ছক্কা মেরে ৩ উইকেটে জিতিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। টানটান উত্তেজনা আর রোমাঞ্চে ঠাসা ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য লেখা হলো হৃদয় ভাঙার গল্প। বাংলাদেশের হৃদয় ভেঙেছে মূলত ক্যাচ মিসের কারণে। বাংলাদেশের ফিল্ডাররা ম্যাচের শেষ দিকে যে শুধু ডি ক্লার্ককেই জীবন দান করেছেন, তা নয়। ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার ক্লোয়ি ট্রায়োনকেও দুবার ‘জীবন’ দিয়েছেন!  

৩৫ বলে অপরাজিত ৫১ রান করেছেন স্বর্ণা আক্তার
আইসিসি

টসে জিতে বাংলাদেশকে প্রায় আড়াই শর কাছাকাছি রান তোলার ভিত গড়ে দেন ওপেনাররা। শুরুর ১০ ওভার দেখেশুনে পার করে দিয়ে দুই ওপেনার ফারজানা হক ও রুবাইয়া হায়দার তোলেন ২৮ রান। ধীরগতির হলেও ভালো শুরু এনে দেওয়া উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ৫৩ রানে। ৭৬ বলে ৩০ রান করে আউট হন ফারজানা। আরেক ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ৫২ বলে ২৫ রানের বেশি করতে পারেননি।

তবে দুই ওপেনারের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ইনিংসটা টেনে নিয়ে যান শারমিন আক্তার ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা। দুজনের ৯১ বলের জুটিতে আসে ৭৭ রান। ৪২ বলে ৩২ রান করে নিগার আউট হয়ে গেলে উইকেটে আসেন স্বর্ণা। এর মধ্যেই শারমিন ফিফটি পেয়ে যান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি পাওয়া এই ব্যাটার অবশ্য রানআউট হয়ে যান মাইলফলকটা ছুঁয়েই। স্বর্ণা শুরু থেকেই ছিলেন মারমুখী। নিজের খেলা দ্বিতীয় বলেই সুইপ শটে বাউন্ডারি মেরে ভালো কিছুর বার্তা দিয়ে রাখা স্বর্ণা ৩ ছক্কা আর সমান চারে ৩৫ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন।

তাতে বাংলাদেশ নারী দলের হয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডটা নিজের করে নেন স্বর্ণা। এত দিন রেকর্ডটি ছিল নিগার সুলতানার। গত এপ্রিলে লাহোরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯ বলে ফিফটি করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। স্বর্ণা গতকাল নিগারের আরও একটি রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন। এর আগে মেয়েদের ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ দুটি ছক্কা মেরেছিলেন নিগার সুলতানা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে সেটি ছাড়িয়ে গেছেন স্বর্ণা।

আরও পড়ুন
দক্ষিণ আফ্রিকাকে ম্যাচ জেতাতে ৬২ রান করেছেন ক্লোয়ি ট্রায়োন
আইসিসি

ব্যাটারদের এনে দেওয়া পুঁজি নিয়ে বোলিংয়েও ভালো শুরু হয় বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ফিরতি ক্যাচ নিয়ে তাজমিন ব্রিটসকে ফেরান নাহিদা আক্তার। এরপর রাবেয়া ছাড়েন ভলভার্টের ফিরতি ক্যাচ। ভলভার্টের সঙ্গে আনেকে বশের জুটি ভয় ধরাচ্ছিল। তবে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি হয়ে আসে ভলভার্টের রানআউট। ৮৩ বলে ৫৫ রানের জুটিটা ভাঙতে প্রোটিয়ারাও দিশাহারা হয়ে যায়। ২০ রানের ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ।

হুট করে উইকেট হারালেও মারিজান কাপ আর ক্লোয়ি ট্রায়োনের জুটিতে আবারও ম্যাচে ফেরে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাঁদের ৮৫ রানের জুটির সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জয়ের সুযোগ বুঝি শেষই হয়ে যাচ্ছে। তবে দুশ্চিন্তাটা আরও বেশি বাড়ার আগে নাহিদার বলে স্বর্ণার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কাপ। কিন্তু অস্বস্তিটা আর দূর হলো কই! ৪০ ও ৪৬ রানে দুবার বেঁচে গিয়ে ট্রায়োন ফিরেছেন ৬২ রান করে। এরপর ডি ক্লার্কের ২৯ বলে অপরাজিত ৩৭ রানের ইনিংস ম্লান করে দিয়েছে সবকিছু।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৩২/৬ (স্বর্ণা ৫১, শারমিন ৫০, নিগার ৩২; এমলাবা ২/৪২, ডি ক্লার্ক ১/৩৯)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.৩ ওভারে ২৩৫/৭ (ট্রায়োন ৬২, কাপ ৫৬, ডি ক্লার্ক ৩৭* ভলভার্ট ৩২; নাহিদা ২/৪৪, ঋতু ১/২৯, রাবেয়া ১/৪৮, ফাহিমা ১/৫১)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেটে জয়ী।

আরও পড়ুন