মঞ্চ থেকে নামতে নামতেই মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম আলোর আলোকচিত্রী শামসুল হককে অনুরোধ জানালেন, ‘ভাই, ছবিগুলো কিন্তু পাঠিয়ে দেবেন…।’ চেয়ারে রেখে যাওয়া ফোনে ততক্ষণ কল চলে এসেছিল স্ত্রী রাবেয়া প্রীতির। সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারে বর্ষসেরা রানারআপ হওয়ার খবরটি তাঁকেই আগে জানালেন মিরাজ।
বাংলাদেশ দলের অলরাউন্ডার মিরাজ পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বললেন, ‘আগেও দুবার রানারআপ হয়েছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়া হলো না! তবে খুব ভালো লাগছে। এখানে এলে সব সময়ই ভালো লাগে।’ তাহলে কি পরেরবার বর্ষসেরা হতে চাইবেন? প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসি দিলেও কিছু বলেননি। মাঠে পারফরম্যান্স করেই হয়তো সেই দাবি জানিয়ে রাখবেন।
সতীর্থ তাসকিন আহমেদের সঙ্গেই অনুষ্ঠানের পুরো সময় বসেছিলেন মিরাজ। তাঁদের মধ্য থেকে আগে মিরাজকে মঞ্চ ডেকে নেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারে দুজন রানারআপ হন, একজন যে মিরাজ, তা জানা হয়ে গেছে ততক্ষণে। কিন্তু অন্যজন কে?
হাবিবুলের কাছ থেকে মিরাজই পান পরের নামটি ঘোষণার দায়িত্ব। একটু নাটকীয়তা করে তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘আমার পাশেই বসা ছিল…। তাসকিন।’ সতীর্থ মঞ্চে আসার পর অনুভূতিটা শুরুতে জানাতে হলো মিরাজকেই। পুরস্কার পাবেন কি না, ওই দ্বিধা নিয়েই তিনি এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। কাল রাতেও যখন পুনরায় নিমন্ত্রণ পান, তখনো নাকি বারবার জানতে চাইছিলেন পুরস্কার পাবেন কি না।
সংশয় শেষ হয়েছে গতকাল পুরস্কার পাওয়ার পর। তবে শুরুতে তিনি নিজেও নাকি মনে করতে পারছিলেন না কেন পেয়েছেন এই পুরস্কার, ‘২০২৪ সালে কী করেছি মনে নেই!’ একটু পরই অবশ্য গত বছরের কথা মনে পড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি পারফরম্যান্সকে তো স্বীকৃতি দিয়েছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা হিসেবেই, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলাম। এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয় ছিল না বাংলাদেশের। গত বছর তাঁদের মাটিতেই দুই টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশ পায় ধবলধোলাই করার স্বাদ। ব্যাট হাতে ১৫৫ রান ও বল হাতে ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজ-সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন মিরাজ। পুরো বছরটাই আসলে তাঁর রঙিন কেটেছে। ২০২৪ সালে তিন সংস্করণ মিলিয়ে হাজারের বেশি রান (১০২৫) করা একমাত্র বাংলাদেশি তিনি। টেস্ট সংস্করণে ১০ ম্যাচে ৬১৪ রানের সঙ্গে নিয়েছেন ৩১ উইকেট। তিন সংস্করণ মিলিয়ে গত বছর তাঁর উইকেট ছিল ৪০টি।
পুরস্কার নেওয়ার আগে পুরোটা সময়ই মিরাজ মনোযোগী দর্শক হয়ে দেখেছেন সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার। এমন বর্ণাঢ্য আয়োজনের জন্য পৃষ্ঠপোষক সিটি গ্রুপ ও প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অন্য খেলার সবাইকেও অনুপ্রেরণা দেওয়া হয় এই অনুষ্ঠানে। এটা অনেক ভালো লেগেছে।’ আর স্বীকৃতি পেলে সেটা হয়ে যায় নিজের জন্যও একটা অনুপ্রেরণা, ‘এমন পুরস্কার পেলে নতুন করে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়, মাঠের পারফরম্যান্সে আরও বেশি অনুপ্রেরণা জোগায়।’