আইপিএলের সেই চড়ের ভিডিও সামনে এল ১৭ বছর পর
আইপিএলের সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি শ্রীশান্তকে হরভজন সিংয়ের চড়। ২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম আসরে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব-মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ম্যাচে ঘটেছিল সেই ঘটনা। প্রায় দেড় যুগ ধরে চড়ের ঘটনা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়ে এলেও একটা বিষয় ছিল অজানা—ঘটনার সময় ঠিক কী ঘটেছিল?
২৫ এপ্রিল মোহালির সেই ঘটনার সময় সরাসরি সম্প্রচারে চলছিল বিজ্ঞাপন। লাইভে ফিরতেই দেখা গেল শ্রীশান্ত কাঁদছেন, আর সেটাই নাড়িয়ে দিয়েছিল আইপিএল। হরভজন ও শ্রীশান্ত তখন ভারত জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলেন। হঠাৎ এমন কী হয়েছিল যে অভিজ্ঞ হরভজনকে তরুণ সতীর্থর গায়ে হাত তুলতে হলো? যার জেরে আইপিএলে পরের ম্যাচগুলোতে নিষিদ্ধও করা হয় তাঁকে। সেদিনের সেই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দীর্ঘ ১৭ বছর আড়ালে থাকার পর এবার প্রকাশ্যে এসেছে।
হরভজন-শ্রীশান্তের চড়–কাণ্ডের সেই ভিডিও সামনে এনেছেন আইপিএলের তখনকার চেয়ারম্যান ললিত মোদি। সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের ‘বিয়ন্ড২৩’ পডকাস্টে এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন, ভিডিওটি দেখিয়েছেন। এ বিষয়ে ললিত মোদি বলেন, ‘আমি বলছি কী ঘটেছিল। ভিডিওটাও আমি দেব। আমি এত দিন এটা রেখে দিয়েছিলাম। ভাজ্জি (হরভজন) আমার খুব প্রিয় বন্ধু। আমি তাকে পছন্দ করি। ঘটনা ঘটেছিল মাঠেই, আর আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। খেলা শেষ হয়ে গেছে, ক্যামেরা বন্ধ। শুধু নিরাপত্তা ক্যামেরাগুলো চালু ছিল। খেলোয়াড়েরা হাত মেলাচ্ছিলেন, হাই-ফাইভ করছিলেন। শ্রীশান্তের কাছে আসতেই ভাজ্জি শুধু বলল, “এদিকে আয়”, তারপরই দিল একটা ব্যাকহ্যান্ড চড়।’
ভিডিওতে দেখা যায়, ম্যাচের শেষে সাধারণত যেভাবে ক্রিকেটাররা সৌজন্য বিনিময় করেন, সেভাবেই সারি বেঁধে শুভেচ্ছা বিনিময় চলছিল। শ্রীশান্ত সামনে এলে হরভজন করমর্দন না করে টেবিল টেনিসের ব্যাকহ্যান্ড শটের মতো করে তাঁর ডান গালে সপাটে চড় কষিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রীশান্ত তাঁর দিকে তেড়ে যান। এগিয়ে যান হরভজনও। প্রায় হাতাহাতির উপক্রম হয়। সৌভাগ্যক্রমে তখনই শ্রীশান্তকে ধরে ফেলেন ইরফান পাঠান ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। ইরফান পাঠান পরে হরভজনের দিকেও যান, কিন্তু তিনি তখন উত্তেজিত, মাঠের বাইরে দেখা করার ইঙ্গিত দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। পুরো ঘটনা ছিল নিয়ন্ত্রণহীন।
পরে জানা যায়, শ্রীশান্তের কিছু আচরণে হরভজন ক্ষুব্ধ ছিলেন। হরভজন ছিলেন মুম্বাই অধিনায়ক। তাঁর দল হেরে যাওয়ার পর শ্রীশান্ত এগিয়ে এসে বলেছিলেন, ‘হার্ড লাক’। এর আগে ম্যাচের মধ্যে শ্রীশান্ত মুম্বাইয়ের শন পোলককে আউট করে রবিন উথাপ্পার সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছিলেন। সব মিলিয়ে হরভজন ছিলেন ক্ষুব্ধ। তবে ঘটনার পর হরভজন ড্রেসিংরুমে ফিরে শ্রীশান্তের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।
শ্রীশান্তের দলের অধিনায়ক যুবরাজ সিং হরভজনের চড়ের ঘটনাকে ‘কুৎসিত ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে নিন্দা করেছিলেন। বিসিসিআই হরভজনকে সেই মৌসুমের বাকি ম্যাচগুলো থেকে নিষিদ্ধ করে।
হরভজন সিংয়ের অনুশোচনা
সম্প্রতি রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ইউটিউব পডকাস্টে হাজির হয়ে ৪৫ বছর বয়সী হরভজন অকপটভাবে নিজের ক্রিকেট-যাত্রার নানা দিক তুলে ধরেন। যার মধ্যে আলোচনায় আসে শ্রীশান্তের সঙ্গে সেই বিতর্কিত ঘটনাও। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে একটা জিনিস বদলাতে চাইলে সেটা হবে শ্রীশান্তের সঙ্গে ওই ঘটনা। আমি চাই আমার ক্যারিয়ার থেকে ওই অধ্যায় মুছে ফেলতে। ওটা ভুল ছিল, আমার করা উচিত হয়নি। আমি অন্তত ২০০ বার দুঃখ প্রকাশ করেছি।’
কত বেশি অনুশোচনায় ভুগেছেন ও এখনো ভোগেন, সেটা জানিয়ে হরভজন বলেন, ‘ঘটনার বহু বছর পরও আমি যখনই সুযোগ পেয়েছি, ওর কাছে ক্ষমা চেয়েছি। ওটা ভুল ছিল। ও ছিল আমার সতীর্থ, আমরা একসঙ্গে খেলেছি। হ্যাঁ, ওই ম্যাচে আমরা প্রতিপক্ষ ছিলাম। কিন্তু ঘটনাটা ওই স্তরে যাওয়া উচিত হয়নি। ওর একমাত্র দোষ ছিল, আমাকে উসকানি দেওয়া, তবে সেটা আসলে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু আমার কাজটা গ্রহণযোগ্য ছিল না।’
এমনকি শ্রীশান্তের মেয়ের মুখোমুখি হয়েও অপরাধবোধে ভুগেছেন বলে জানান হরভজন, ‘আমার সবচেয়ে খারাপ লেগেছিল যখন শ্রীশান্তের মেয়ের সঙ্গে দেখা হলো। আমি ওর সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলছিলাম। কিন্তু সে বলল, ‘‘আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই না। তুমি আমার বাবাকে মেরেছিলে।’’ তখন আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল, প্রায় কেঁদে ফেলেছিলাম। নিজেকে জিজ্ঞেস করছিলাম—কী ভাবছে ও আমার ব্যাপারে? নিশ্চয়ই খারাপভাবে দেখছে। ও আমাকে বাবার গায়ে হাত তোলা মানুষ হিসেবেই দেখছে। আমার ভীষণ খারাপ লাগছিল।’