বিপিএল–অভিজ্ঞতার কথাই বললেন ম্যালান

সংবাদ সম্মেলনে ইংলিশ ওপেনার ডেভিড ম্যালান। আজ ধর্মশালায়ছবি : আইসিসি

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে বাজেভাবে হেরেছিল ইংল্যান্ড। শুরুতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বড় ধাক্কা খাওয়াটা আরও চোখে লাগছিল পয়েন্ট তালিকার দিকে চেয়ে। আজ সকাল পর্যন্তও যে তারা ছিল পয়েন্ট তালিকার তলানিতে!

তবে ধর্মশালায় বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই যেন পাল্টে গেল দৃশ্যপট। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে গেল ইংল্যান্ডের হাতে। উদ্বোধনী জুটিতে ইংলিশদের রান–পাহাড়ের ভিত গড়ে দেন জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড ম্যালান।

বেয়ারস্টো ফিফটি করে আউট হলেও ম্যালান থামেননি। জো রুটকে নিয়ে আরেকটি বড় জুটি গড়ার পথে তুলে নেন সেঞ্চুরি, যেটি এ বছর ওয়ানডেতে তাঁর চতুর্থ আর বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়।

ম্যালানের সেঞ্চুরি উদ্‌যাপন। আজ ধর্মশালায়
ছবি : এএফপি

মিরপুরে গত মার্চে বিপর্যয় থেকে ইংল্যান্ডকে টেনে তুলে জিতিয়েছিলেন ম্যালান। সে ম্যাচে সাকিব–মিরাজদের সামলে সেঞ্চুরি করার রহস্য জানাতে গিয়ে সামনে এনেছিলেন বিপিএল ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) খেলার অভিজ্ঞতার কথা।

ধর্মশালায় আজ ম্যাচসেরা হওয়া ম্যালান সংবাদ সম্মেলনে ইংলিশদের প্রতিনিধি হয়ে এসে সেই কথাই নতুন করে বললেন, ‘আমি সৌভাগ্যবান যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বেশ কয়েকবার খেলেছি। ওদের বিপক্ষে আলাদা কন্ডিশনে অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছি। চট্টগ্রামের মতো ভালো উইকেট যেমন ছিল, ঢাকার মতো কঠিন উইকেটও তেমনি ছিল। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলে আমি নানাভাবে শিখেছি। আমার মনে হয়েছে, বছরের শুরুতে ওদের বিপক্ষে যে ইনিংসটি খেলেছি, সেটা এ ধরনের কন্ডিশনে আমার সেরা। আপনি যতই ওদের বিপক্ষে খেলবেন, ওরা আপনাকে নিয়ে ততই পরিকল্পনা করবে। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে অভিজ্ঞতাই আপনাকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাবে।’

বিপিএলে সর্বশেষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে খেলেছেন ম্যালান
ছবি : শামসুল হক

ধর্মশালায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরে ব্যাট করে জিতেছিল বাংলাদেশ। একই মাঠে আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও একই পথে হেঁটেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু আজকের কন্ডিশন আলাদা হওয়ায় বাংলাদেশ দল পিচ পড়তে ভুল করেছে কি না, এমন প্রশ্নে ম্যালানের উত্তর, ‘আমার তেমনটা মনে হয় না। টস জিতলে আমরাও আগে বোলিং নিতাম। গত রাতে বৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো অধিনায়কই আগে ফিল্ডিং নিত। আমার ধারণা, ভারতে দিনের ম্যাচগুলোতে উইকেট মন্থর হতে থাকে। বিশেষ করে যখন খুব গরম পড়ে। আজকের উইকেট আমাদের জন্য সহায়ক ছিল। মন্থর হয়ে পড়ার আগেই বড় জুটি গড়তে পেরেছি। তবে ওরা যদি শুরুতে কিছু উইকেট তুলে নিতে পারত, পরিস্থিতি পুরোপুরি আলাদা হতো।’

আগের ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ৮২ বল বাকি রেখে জিতে যাওয়ায় নেট রানরেটে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল ইংল্যান্ড। আজ বাংলাদেশকে ১৩৭ রানে হারিয়ে সেটা একটু ‘ভদ্রস্থ’ হওয়ায় খুব খুশি ম্যালান, ‘আমরা যখনই চাপে পড়ি, তখনই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে থাকি। এটিই এই দলটার রীতি। ভালো লাগছে যে আজ আমরা ব্যাটে-বলে সেটা করে দেখাতে পেরেছি। আজকের জয়ে আমাদের নেট রানরেট কিছুটা ভালো হয়েছে। শেষে গিয়ে এটাই দলকে সহায়তা করবে। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে আসাটা আমার জন্য ছিল এক দীর্ঘ যাত্রা। দলে সুযোগ পাওয়া, পারফর্ম করা ও জয়ে অবদান রাখা—সব মিলিয়ে খুব খুশি। আশা করি ছন্দটা ধরে রাখতে পারব।’

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের বিপক্ষে আজ সেঞ্চুরি করে একটা বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেছেন ম্যালান। ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম ইনিংস (২৩) খেলে প্রথম ছয়টি সেঞ্চুরির মালিক এখন তিনি। এ বছর ১১ ইনিংসে ৭৪.৫০ গড়ে করে ফেলেছেন ৭৪৫ রান। ফিফটির চেয়ে সেঞ্চুরিই বেশি। অবিশ্বাস্য রূপান্তরের কারণ জানাতে গিয়ে ৩৬ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বললেন, ‘কারণ একটাই—ক্ষুধার্ত। খেলতে, ভালো করতে, রান করতে ও জেতার জন্য আমি ক্ষুধার্ত। আমি এত দিন ধরে এই দলটার অংশ হতে চেয়েছিলাম, সুযোগগুলো নিতে চেয়েছিলাম। যত দিন সম্ভব খেলাটা উপভোগ করে যেতে চাই। আমি যা চেষ্টা করি, সেটাই করি।’

রান–ক্ষুধাই ম্যালানের ইনিংস বড় করার রহস্য
ছবি : এএফপি

ম্যালান নানা সময়ে সমালোচিত হয়েছেন। সমালোচকদের থামাতেই কি নিজেকে এতটা বদলে ফেলেছেন? ম্যালানের জবাব, ‘যদি বলি “হ্যাঁ”, তাহলে আরেকটা শিরোনাম হতে পারে (হাসি...)। আমার মনে হয়, প্রতিটি সিরিজেই আমি চাপে থাকি। তাই লোকেদের মুখ বন্ধ রাখার মতো করেই আমাকে খেলতে হয়। কখনো আমি ভালো শট খেলি, কখনো বাজে শট। এটাই ক্রিকেট। তবে নিজের দিনে আমি সব ধরনের বোলারের বিপক্ষে ভালো করার চেষ্টা করি। তিন নম্বরে রুটের মতো ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান থাকলে আরেকটু স্বাধীনভাবে খেলা যায়। আমি এই সংস্করণে (ওয়ানডে) ভালো করতে, আরও ম্যাচ জিততে, নিজেকে সঠিক ও মানুষকে ভুল প্রমাণ করতে মরিয়া। ব্যাটিংয়ে নামলে উইকেট ছুড়ে আসা পছন্দ করি না। আশা করি, আমার সম্পর্কে মানুষের ধারণা পরিবর্তন হবে।’