হঠাৎ আইপিএলে ব্যাট নিয়ে তোলপাড় কেন
আইপিএলে হঠাৎ করেই আলোচনায় ক্রিকেট ব্যাট। এ টুর্নামেন্টে মাঠেই ব্যাটসম্যানের ব্যাটের আকার পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ কেন এ পদক্ষেপ?
আইপিএল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে শুরুতে কিছু জানায়নি। তাই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ আইপিএল চেয়ারম্যান অরুণ ধুমালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
ধুমাল বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি যেন কারোরই মনে না হয় যে কেউ অযৌক্তিক সুবিধা পাচ্ছে। ক্রিকেটীয় চেতনা ও খেলার ন্যায্যতা বজায় রাখতে বিসিসিআই ও আইপিএল সব সময় এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা সবচেয়ে উন্নত মানের প্রযুক্তি ব্যবহার করছি যেন সব সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা যায় এবং ম্যাচগুলো অন্যায্যভাবে প্রভাবিত না হয়।’
ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, ব্যাট ও বলের ভারসাম্য আনতেই আইপিএল কর্তৃপক্ষ এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাটসম্যানরা যেন ভারী ব্যাট ব্যবহার করে বাড়তি সুবিধা না পান, সেটা নিশ্চিত করতেই গেজ দিয়ে ব্যাট পরীক্ষা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, এ পদক্ষেপ শুরু করতে আইপিএলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে। এরপর পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়ে ১৩ এপ্রিল থেকে নিয়মটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়।
এ নিয়ম এখন কেন?
ব্যাট পরীক্ষা কিন্তু এবারই প্রথম নয়। আগের মৌসুমগুলোতেও হয়েছে। তবে তখন ব্যাট পরীক্ষা করা হতো সীমিত পরিসরে ও দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে। সাধারণত চতুর্থ আম্পায়ার ম্যাচের আগের দিন খেলোয়াড়দের ব্যাট থেকে কয়েকটি বেছে নিয়ে পরিমাপ করতেন। কিন্তু সেই ব্যাটসম্যান হয়তো পরের ম্যাচে খেলেননি। এমনকি একজন ব্যাটসম্যানের সব ব্যাট পরীক্ষা করা হতো না। ফলে খেলোয়াড়েরা অনায়াসেই পরীক্ষিত ব্যাট দেখিয়ে পরে অন্য ব্যাট নিয়ে মাঠে নামতে পারতেন।
এটা দূর করতেই ২০২৫ মৌসুমের শুরুতে ম্যাচ চলাকালে ব্যাট পরীক্ষার বিষয় আলোচনায় আসে। জানা গেছে, কয়েকজন আম্পায়ার ম্যাচ চলাকালে কিছু ব্যাটের আকার দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ব্যাটের গঠন নিয়ে এমন সন্দেহ-সংশয়ের বদলে একটি নিরপেক্ষ পদ্ধতি অনুসরণ করাকেই ভালো মনে করেছে আইপিএল কর্তৃপক্ষ।
ব্যাট পরীক্ষার ঘটনা আইপিএলেই কি প্রথম?
না। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এ নিয়ম চালু করেছিল। তখন তারা ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মে এমসিসির আইন ‘৫’ অনুযায়ী ব্যাটের মাপ নির্ধারণ করে ব্যাট পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে। সে নিয়মই এখন আইপিএলে প্লেয়িং কন্ডিশনের অংশ।
গেজ দিয়ে কীভাবে আকার মাপা হয়
গেজ একটি আয়তাকার যন্ত্র, যার একটি বাড়ির আকারের কাটআউট আছে। এর মধ্যে ব্যাটের নিচের অংশ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই কাটআউট এমসিসির আইন ‘৫’ অনুযায়ী অনুমোদিত ব্যাট পরিমাপ অনুসরণ করে বানানো। যদি ব্যাটটি গেজের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো যায়, তাহলে বুঝতে হবে ব্যাটের আকার ঠিক আছে।
ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, ১৩ এপ্রিল থেকে ব্যাট পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার আগে আইপিএল সব দলকে জানিয়ে দেয়। দলগুলোকে ব্যাট গেজও দেওয়া হয় যেন তাদের খেলোয়াড়েরা নিজেরাই ম্যাচের আগে ব্যাট পরীক্ষা করতে পারে।
ম্যাচের দিন মাঠে থাকা আম্পায়াররা ব্যাট গেজ সঙ্গে রাখেন যেন প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের ব্যাট পরীক্ষা করা যায়। চতুর্থ আম্পায়ার প্রতি ইনিংসের শুরুতে দুই ওপেনারের ব্যাট চেক করেন। কোনো ব্যাট যদি নির্ধারিত মাপের বেশি হয়, তাহলে সেটি চিহ্নিত করা হয় এবং ম্যাচে সেটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় না। ব্যাটসম্যান নতুন ব্যাট নিতে চাইলে সেটিও পরীক্ষা করা হয়।
নিয়ম ভাঙলে শাস্তি কী?
২০২৪ সালের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে অবৈধ ব্যাট ব্যবহারের কারণে এসেক্সের ১২ পয়েন্ট কাটা হয়েছিল। তবে আইপিএলে নিয়ম ভাঙলে কোনো শাস্তি নেই। ইসিবির ওই নিয়মের সঙ্গে আইপিএলের পার্থক্য হচ্ছে—ইসিবি দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে ব্যাট পরীক্ষা করে। আইপিএলে প্রতিটি ব্যাট পরীক্ষা করা হয়।
খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়া কী?
অনেক ব্যাটসম্যানই এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন। আইপিএল জেতা একটি দলের এক ব্যাটসম্যানের কোনো ব্যাটই পরীক্ষায় উতরে যেতে পারেনি। বিদেশিদের জন্য সমস্যা আরও বেশি। কারণ, তাদের ব্যাট প্রস্তুতকারক কোম্পানি ভারতের বাইরে অবস্থিত। দ্রুত বিকল্প ব্যাট আনা সম্ভব নয়।
অনেক ব্যাটসম্যান তাঁদের ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী ব্যাট বানিয়ে থাকেন, যেগুলোর আকার সাধারণ সীমার চেয়ে একটু এদিক-সেদিক হতে পারে। আগের নিয়মে এ ধরনের ব্যাট হয়তো নজর এড়িয়ে যেত। কিন্তু এখন আইপিএলে এমন ব্যাট আর ব্যবহারের সুযোগ নেই।