ফখর জামান ব্যাটিং করতে থাকলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৫০ রানও তাড়া করতে পারত পাকিস্তান, অধিনায়ক বাবর আজমের বিশ্বাস এমন। বেঙ্গালুরুতে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ৪০২ রানের লক্ষ্য ছুঁতে বিশ্বকাপে নিজেদের গড়া এবারের রেকর্ডই ভাঙতে হতো পাকিস্তানকে, ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিততে হতো তাদের। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে সে পর্যন্ত যেতে হয়নি, ২৫.৩ ওভারে ১ উইকেটে ২০০ রান তুলেই ডিএলএস পদ্ধতিতে ২১ রানের জয়ে সেমিফাইনালের আশা টিকিয়ে রেখেছে পাকিস্তান।
রান তাড়ায় ওপেনিংয়ে নামা ফখর অপরাজিত ছিলেন ৮১ বলে ১২৬ রানে। ৩৯ বলে অর্ধশতক করার পর ৬৩ বলেই শতক ছুঁয়ে ফেলেন এ বাঁহাতি। দ্বিতীয় উইকেটে বাবরের সঙ্গে তাঁর জুটি অবিচ্ছিন্ন ছিল ১৪১ বলে ১৯৪ রান তুলে। পাকিস্তান ক্রিকেটের এক ভিডিওতে বাবর বলেন তাঁর বিশ্বাসের কথা, ‘আমি ব্যাপারটা এভাবে দেখেছি, যতক্ষণ ফখর ছিল, আমরা এমনকি ৪৫০ রানও তাড়া করতে পারতাম।’
গতকাল ১১টি ছক্কা মারা ফখরের ওপর এমন বিশ্বাসের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক, ‘যখন সে এমন ইনিংস খেলে, আমরা ৯০ শতাংশ ম্যাচই জিতি। প্রতিটি ছয়ের পরই আমি তাকে বলেছি, “জোর করার দরকার নেই”। সে বলেছে ঠিক আছে, কিন্তু এরপরই আমাকে উপেক্ষা করে যে করেই হোক আবার ছক্কা মারা শুরু করেছে। এরপর তাই আমি তাকে বলেছি, “যা ইচ্ছা করো, শুধু আউট হয়ো না।” আমার দেখা অন্যতম সেরা ইনিংস।’
বেঙ্গালুরুতে গতকাল বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল প্রায় পুরো দিনই। যদিও প্রথম ইনিংসে বৃষ্টি বাগড়া দেয়নি। দ্বিতীয় ইনিংসেও একবার বৃষ্টি-বিরতির পর পরিবর্তিত লক্ষ্যে ব্যাটিং শুরু করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু বাবর বলছেন, পুরো ম্যাচ খেলতে হবে ভেবেই ব্যাটিং করেছেন তাঁরা, ‘আমাদের ভাবনায় বৃষ্টি একেবারেই ছিল না (শুরুতে)। হুট করেই মেঘ হাজির হয়েছে, এরপরই আমরা ডিএলএসের হিসাব করা শুরু করেছি। পুরোটা সময় এটির নাগালের মধ্যে রাখতে চেয়েছি। উইকেটও হাতে রাখতে চেয়েছি, আমি চেষ্টা করছিলাম ইনিংসের শেষ দিকে নিয়ে যেতে। ফখর ছোট বাউন্ডারির সুবিধা কাজে লাগাচ্ছিল, আমি এক প্রান্ত ধরে রেখেছিলাম। রানরেট যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সেটিও নিশ্চিত করেছি।’
এই এক ইনিংসেই ফখর এবারের বিশ্বকাপে অন্য যেকোনো পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের চেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন। তাঁর অমন ইনিংসেই নিশ্চিত হয়েছে, কোনো ম্যাচে ৪০০ রান দেওয়ার পরও ওয়ানডে জেতা দ্বিতীয় দল হচ্ছে পাকিস্তান। ফখর তাঁর ইনিংস নিয়ে বলেছেন, ‘এটা বিশ্বকাপে বলে আমার অন্যতম প্রিয়। ওয়ান্ডারার্সে (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০২১ সালে) ১৯৩ রানের ইনিংসকে হয়তো ছাড়িয়ে যাবে না। কারণ, সেটি দ্রুতগতির উইকেট ছিল, যেখানে এশিয়ার খেলোয়াড়েরা ভোগে। কিন্তু এই ইনিংস, আর যেভাবে আমি রান করেছি, তাতে অনেক খুশি।’
দলে ফিরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলা ফখর বেঙ্গালুরুর উইকেটের দারুণ প্রশংসাই করেছেন, ‘এবারের বিশ্বকাপে যেসব উইকেট খেলেছি, তার মধ্যে এটি সেরা। দ্বিতীয় ওভার থেকেই বোঝা গেছে, ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ উইকেট। (টিম) সাউদি ও (ট্রেন্ট) বোল্ট যদি সুইং করাতে না পারে, তাহলে জানবেন যে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ। চার ওভারের পর যেটুকু সুইং ছিল, সেটিও উড়ে গেছে। সেটি আমাকে আরও হাত খুলে খেলার স্বাধীনতা দিয়েছে।’