‘অনেকে হয়তো আমাকে এখন পাগল বলবে’

ম্যাচসেরার স্বীকৃতি হাতে মিরাজছবি: শামসুল হক

১২৮ রানে ৪ উইকেট থেকে ১৩৬ রানেই ৯ উইকেট নেই। একটু আগেও জয় দেখতে পাওয়া বাংলাদেশকে হুট করেই হার চোখ রাঙাতে শুরু করল ওই নাটকীয় ধস। দ্রুত অমন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ফাঁকা হতে শুরু করল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিও, প্রায় অর্ধেক দর্শক চলেও গেলেন। কিন্তু যাঁরা থাকলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হলেন তাঁরা।

ম্যাচ শেষে জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বলছেন, নিজের ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। এখন এমন শুনে তাঁকে ‘পাগল’ মনে করতে পারেন কেউ, তবে তাঁর আত্মবিশ্বাস এমন উঁচুতেই ছিল বলে জানিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। শেষ উইকেট জুটিতে সঙ্গী মোস্তাফিজুর রহমানকেও দিয়েছেন কৃতিত্ব।

মিরাজ আজ নেমেছিলেন আট নম্বরে, মুশফিকুর রহিম আউট হওয়ার পর। শেষ স্বীকৃত জুটি ছিল তাঁর ও আফিফের। তবে আফিফও দ্রুত ফিরে যান। মিরাজের এরপরের পরিকল্পনা ছিল, টেল-এন্ডারদের নিয়েই ধাপে ধাপে এগোবেন।

আরও পড়ুন

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন সে কথাই, ‘হাসানকেও (মাহমুদ) একই কথা বলেছি, “চার-পাঁচটা বল যদি তুমি খেলতে পারো, তাহলে আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে।” কিন্তু আমি চিন্তা করছিলাম, হয়তো ইবাদতকে (হোসেন) নিয়ে ১৫ রান করব, হাসানকে নিয়ে ২০ রান করব। মোস্তাফিজকে নিয়ে শেষে ১৫-২০ রান, যা লাগে করব। এভাবেই আমার চিন্তা ছিল।’

৩৯ বলে ৩৮ রানের পথে ২টি ছয় ও ৪টি চার হাঁকান মিরাজ
ছবি: শামসুল হক

শেষ ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজ ক্রিজে আসার সময়ও বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৫১ রান। তবে তখনো মনোবল হারাননি মিরাজ, ‘সত্যি কথা বলতে আমার বিশ্বাস ছিল। অনেকে শুনলে হয়তো বলবে—পাগল। হয়তো মনে করবে যে কিছু...। সত্যি বলতে আমি বিশ্বাস করছিলাম। আমার বিশ্বাস খুব ভালো ছিল। আমার কাছে একবারও মনে হয়নি ম্যাচটা হারব। শুধু একটা কথা বারবার বলছিলাম, আমার মনে যেটা চলছিল, আমি পারব। বারবার নিজেকে বলেছি—আমি পারব, আমি পারব।’

শুরুতে ওভারের পঞ্চম বলে গিয়ে এক রান নিয়ে মোস্তাফিজের ওপর ভরসা রাখছিলেন মিরাজ শেষ বলটি খেলতে।

আরও পড়ুন

প্রায়ই মোস্তাফিজের কাছে গিয়ে কথাও বলতে দেখা গেছে তাঁকে। তবে মিরাজ বলছেন, মোস্তাফিজই তাঁকে ভরসা জুগিয়েছেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা মোস্তাফিজ খুব ভালো সমর্থন দিয়েছে। একটা জিনিস আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে, ও খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল। একটা কথা আমাকে বারবার বলছিল, “আমাকে নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই। আমি ঠেকিয়ে দিচ্ছি। আমি আউট হব না, গায়ে বল লাগলেও সমস্যা নাই।” ওর এই বিশ্বাস দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমারও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে ওর আত্মবিশ্বাস দেখে।’

জয়ের পর মিরাজকে কাঁধে তুলে নেন সতীর্থরা
ছবি: শামসুল হক

নিজের ইনিংসেও ধাপে ধাপে এগিয়েছেন বলে জানান মিরাজ, ‘শুরুতে ঝুঁকি নিয়েছি। ১৪ রান বা ১০ রানের সময় একটু বেশি এক্সাইটেড ছিলাম, এত কাছে এসে যদি হেরে যাই। এর আগে এমন হয়েছে আমাদের সাথে। (তবে) মোস্তাফিজ বলেছে, ওপর দিয়ে খেলার দরকার নাই। (আর) নিজের গেমপ্ল্যান আমি নিজে সাজিয়েছি, কোন বোলারকে মারব, কোন দিক দিয়ে মারব। যেগুলো জায়গামতো পেয়েছি, সেগুলো আক্রমণ করেছি। ২-৩টা ওপরে মেরেছি, সুযোগও দিয়েছি, ওরা নিতে পারেনি। “ক্যালকুলেটিভ রিস্ক” নিয়ে খেললে খুব ভালো হয়।’