ফারুক আহমেদের ২৫০ কোটি টাকা ‘সরানো’ নিয়ে বিসিবির ব্যাখ্যা

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।শামসুল হক

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এফডিআরের বিপুল অঙ্কের অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক তুলে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর নিয়ে আলোচনা চলছিল কদিন ধরে। এই স্থানান্তর বিষয়ে আজ ব্যাখ্যা দিয়েছে বিসিবি। সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়েছে, বোর্ডের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক থেকে তুলে অন্য ব্যাংকে পুনরায় বিনিয়োগ করা হয়েছে।

বিসিবি বলছে, এমন উদ্যোগের কারণে স্থায়ী আমানত থেকে মুনাফা বেড়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, বোর্ড ও এর সভাপতি ফারুক আহমেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই পরিকল্পিতভাবে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছিল।

গত আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিসিবির পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আসে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক পরিচালক মনোনীত হয়ে সভাপতি হন সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ।

বিসিবির বিবৃতিতে বলা হয়, আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানের অংশ হিসেবে বোর্ড তার ব্যাংকিং সম্পর্কগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে এবং শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ‘গ্রিন’ ও ‘ইয়েলো’ তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই লেনদেনে জড়িত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দেশের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া সংস্থা।
প্রথম আলো

বিসিবি অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার ব্যাংকগুলো থেকে ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে ২৩৮ কোটি টাকা ‘গ্রিন’ ও ‘ইয়েলো’ তালিকার ব্যাংকগুলোতে পুনর্বিনিয়োগ করে। বাকি ১২ কোটি বিসিবির পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্ধারিত ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়।

সংবাদমাধ্যম ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ফারুক আহমেদ নিজের সিদ্ধান্তে টাকা স্থানান্তর করেছেন বলে যে কথা বলা হয়েছে, সেটিও খণ্ডন করেছে বিসিবি।

এ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বোর্ড সভাপতি কোনো একক সিদ্ধান্তবলে বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের অজ্ঞাতে ব্যাংক পরিবর্তনের অথবা লেনদেনসংক্রান্ত নির্দেশ প্রদান করেন না। পার্টনার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বিসিবির আর্থিকবিষয়ক লেনদেনে স্বাক্ষর প্রদানকারী হিসেবে দুজন বোর্ড পরিচালক আছেন—বোর্ডের ফিন্যান্স কমিটি চেয়ারম্যান ফাহিম সিনহা ও টেন্ডার ও পারচেজ কমিটি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আনাম। বিসিবি সভাপতি এ–সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাক্ষরদাতা নন।’

২০২৪ সালের ২১ আগস্ট বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ।
সংগৃহীত

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বিসিবি তাঁর অর্থ ও স্থায়ী আমানত সংরক্ষণের দায়িত্ব ১৩টি ব্যাংকের হাতে দিয়েছে জানিয়ে বলা হয়, এর ফলে আগের তুলনায় বিসিবির স্থায়ী আমানত থেকে ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মুনাফা হয়েছে।

এ ছাড়া গত ছয় মাসে বিসিবি তাঁর বর্তমান তিনটি ব্যাংকিং অংশীদারের কাছ থেকে আনুমানিক ১২ কোটি টাকার আর্থিক স্পনসরশিপ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আরও প্রায় ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশ্বাস পেয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতির সঙ্গে সরবরাহ করা নথি অনুসারে, বিসিবি বেসরকারি খাতের মিডল্যান্ড, আইএফআইসি, আল আরাফা ইসলামী, এক্সিম, ইউসিবি ও সরকারি জনতা, বেসিক ও অগ্রণী ব্যাংক থেকে এফডিআরের টাকা তুলে নিয়েছে, যা রাখা হয়েছে মধুমতি, ইস্টার্ন, ব্র্যাক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, প্রাইম, পূবালী, মেঘনা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল, সিটিজেনস ও সিটি ব্যাংকে। অগ্রণী ব্যাংক থেকে উত্তোলন ও পুনরায় বিনিয়োগ দুটিই করা হয়েছে।

এর আগে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘(আমি এটা) সংবাদমাধ্যম থেকেই জেনেছি। স্থায়ী আমানত তিনি এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন। কিন্তু যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে মনে হয় টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আসলে তা নয়। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিয়ম–কানুন আছে। বিসিবির আর্থিক বিষয়ে যিনি দায়িত্বে রয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে...সেখানে যদি মতামত নেওয়ার বিষয় থাকে, ফারুক আহমেদ যদি না নিয়ে থাকেন, তাহলে তো নিয়মের বাত্যয় হয়েছে। আমরা সেটা দেখব। তবে টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, বলা যায় না। কারণ এটা রুটিন কাজ। আমাদের মন্ত্রণালয়েও আমরা এটা করি। কারণ এখন নতুন করে স্থায়ী আমানত রাখলে সুদের হার বেশি পাওয়া যায়।’

আরও পড়ুন