সুযোগ কাজে লাগিয়ে যেভাবে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিতে হয়

ঈশান কিষানছবি: শামসুল হক

মোস্তাফিজুর রহমানের ইয়র্কার লেংথের বলটি মিড অফে ঠেলেই ঈশান কিষান দৌড় দিলেন। মুহূর্তেই ২২ গজ পার হয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমের দিকে। অন্য প্রান্তে থাকা বিরাট কোহলি ততক্ষণে ব্যাট উঁচিয়ে উদ্‌যাপন শুরু করে দিয়েছেন। দৌড়ে প্রান্ত বদল করতে না করতেই কোহলির দুই হাত আকাশে।

কোহলির এই উদ্‌যাপনের উপলক্ষ নিজের কোনো অর্জন নয়। কিষান দৌড়ে ১ রান নিয়ে পৌঁছে গেছেন ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরিতে। মাত্র ১২৬ বলে ডাবল সেঞ্চুরি করে ভেঙেছেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ক্রিস গেইলের রেকর্ড। ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গেইলের ব্যাট থেকে এসেছিল ১৩৮ বলের ডাবল সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে নবম ডাবল সেঞ্চুরিটি করলেন কিষান।

এটি কিষানের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিও। শেষ পর্যন্ত তাসকিন আহমেদের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে থামে কিষানের ইনিংস। ব্যাট উঁচিয়ে মাঠ ছাড়ার সময়ের কিষানের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ১৩১ বলে ২৪টি চার ও ১০টি ছক্কায় সাজানো ২১০ রানের ইনিংসটি।

তাঁর অবিশ্বাস্য ইনিংসে ভর করেই সাগরিকার ব্যাটিং স্বর্গে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারত গড়েছে ৮ উইকেটে ৪০৯ রানের পাহাড়। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই প্রথম চার শ রান।

ইশান কিষান
ছবি: শামসুল হক

এতে অবদান ছিল কোহলিরও। কিন্তু সাগরিকায় বয়ে যাওয়া কিষান-ঝড়ে কোহলির ক্যারিয়ারের ৪৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাই হলো না! অথচ ৮৫ বলের সেঞ্চুরিটি ২০১৯ সালের পর ওয়ানডে ক্রিকেটে কোহলির প্রথম। ৯১ বলে ১১৩ রানের ইনিংস খেলে সাকিব আল হাসানের বলে আউট হন।

কোহলির ওয়ানডে সেঞ্চুরির খরা কাটানোর দিনে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনাটা হচ্ছে কিষানকে নিয়ে। তারকায় ঠাসা ভারতীয় টপ অর্ডারে জায়গা করে নেওয়া যেকোনো তরুণ ব্যাটসম্যানের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মার চোটের কারণে কিষান সে সুযোগটা পেয়েছেন। সুযোগ পাওয়া এক কথা, সেটি কাজে লাগিয়ে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি করা আরেক কথা।

ভারতীয় টপ অর্ডারে যে প্রতিযোগিতা, শুধু সেঞ্চুরি করলেও হয়তো পরের ম্যাচে রোহিতের জন্য জায়গা ছাড়তে হতো কিষানকে। অবিশ্বাস্য কিছু না করলে হয়তো ভারতের পরবর্তী ওয়ানডে ম্যাচে কিষানের উদ্বোধনে নামা হতো না। এক বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ভারতীয় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা কিষান নিশ্চয়ই সেটা জানতেন।

ভাগ্যও ভালো। ব্যাটিংয়ের জন্য কিষান সেরা কন্ডিশনই পেয়েছেন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটে খেলার স্মৃতির বোঝাও ছিল না কিষানের মনে। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হাতছাড়া হওয়ায় আজকের ম্যাচ থেকে অর্জনের তেমন কিছু ছিল না ভারতের। সে জন্য হাত খুলে খেলার পূর্ণ স্বাধীনতাও ছিল কিষানের। সে স্বাধীনতাটা কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে।

‘ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে’তে কিষান রয়েসয়ে খেলেছেন। মাত্র ৪৯ বলে ফিফটি করেন এই বাঁহাতি। রানের গতি বেড়েছে এরপর থেকেই। কে বোলিং করছেন, সেদিকে আর তাকাননি। বাজে বল তো বটেই, ভালো বলেও তিনি ব্যাট চালিয়েছেন। প্রথম সেঞ্চুরি করতে ৮৫ বল খেলেছেন। কিষানের সেঞ্চুরির পর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে কিছুক্ষণ পরপরই সাদা কুকাবুরা উড়ে গিয়েছে। দেড় শ রানে যেতে কিষান বল খেলেছেন মাত্র ১০৩টি, ডাবল সেঞ্চুরি করতে মাত্র ১২৬ বল।

বাংলাদেশ দল তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি জেতায় ট্রফিটা ঘরে তোলার ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছে। সিরিজটা আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের অংশও নয়। তাই আজ জয়-পরাজয় যে দলকেই আলিঙ্গন করুক, তাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু ভারতের জন্য ম্যাচটা ছিল ধবলধোলাই এড়ানোর সুযোগ। ম্যাচের ফলাফল শেষ পর্যন্ত যা–ই হোক, কিষান-কোহলিদের সৌজন্যে অন্তত জয়ের মঞ্চটা প্রথম ইনিংসেই পেয়ে গেছে ভারত।