ডেভিড মিলারকে তো আর এমনি এমনি ‘কিলার মিলার’ বলা হয় না। যেদিন ব্যাট হাতে রুদ্ররূপ ধারণ করেন, সেদিন প্রতিপক্ষ বোলারদের কচুকাটা করে ছাড়েন।
মিলারের জন্য আজকের রাতটা তেমনই ছিল। এক প্রান্তে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট পড়ছে তো পড়তেই। কিন্তু অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে মিলার বাউন্ডারির বৃষ্টি বইয়ে দিলেন। ৪ চার ও ৮ ছক্কায় তাঁর ৪০ বলে ৮২ রানের বিস্ফোরক ইনিংসের পরও অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকা পাকিস্তানকে বড় লক্ষ্য ছুড়ে দিতে পারে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা জেগেছিল।
কিন্তু নিমেষেই সব শঙ্কা দূর করেছেন জর্জ লিন্ডা। ৩ বছরেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ফেরা এই অলরাউন্ডার উপহার দিলেন ২৪ বলে ৪৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস। তাতেই প্রোটিয়াদের রান ১৮০ পার। এরপর বল হাতেও কাজের কাজটা করলেন লিন্ডা। ১৮তম ওভারে ৩ উইকেটসহ নিলেন ৪ উইকেট। তাঁর অলরাউন্ড নৈপুণ্য শেষ পর্যন্ত গড়ে দিল ম্যাচের ব্যবধান। পাকিস্তানকে ১১ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
ডারবানের কিংসমিডে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ১৮৩ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে পাকিস্তান ৮ উইকেট হারিয়ে থামে ১৭২ রানে। পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানের একার লড়াই (৬২ বলে ৭৪ রান) মিলার–লিন্ডার সামনে ম্লান হয়ে গেছে।
দুই দলের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে আরেকটি বিষয়—মিস্টার এক্সট্রা! পাকিস্তানের বোলাররা যেখানে অতিরিক্ত রান দিয়েছেন ২৩, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা দিয়েছেন মাত্র ২।
গেবেখায় আগের দিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে ডারবানে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের প্রথম টি–টোয়েন্টি। স্বাভাবিকভাবে প্রোটিয়া ক্রিকেট বোর্ডকে (সিএসএ) আলাদা দল গঠন করতে হয়েছে।
নিয়মিত টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক এইডেন মার্করাম, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ট্রিস্টান স্টাবস, স্পিনার কেশব মহারাজ, পেসার কাগিসো রাবাদাসহ মূল দলের অনেকেই পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজে নেই। মার্করামের অনুপস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাইনরিখ ক্লাসেন। মজার ব্যাপার হলো, এখন পর্যন্ত ক্লাসেন যে ৮ ম্যাচে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সবকটিই পাকিস্তানের বিপক্ষে।
আজ টসও জিতেছিলেন ক্লাসেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো হয়নি। শাহিন আফ্রিদির গতি আর আবরার আহমেদের ঘূর্ণিতে পাওয়ারপ্লেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকেরা। এরপর ক্লাসেনের সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেন মিলার।
ক্লাসেনের পর ডোনোভান ফেরেইরাও আউট হয়ে যান। তবু মিলারের ঝোড়ো ব্যাটিং করা থামাননি। তবে শাহিন আফ্রিদি তাঁকে ফেরানোর পর আন্দিলে সিমেলেন ও নাকাবা পিটারও দ্রুত আউট হয়ে যান। এক পর্যায়ে ১৪১ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এরপরেই শুরু ‘লিন্ডা শো’। টেলএন্ডার কিউনা মাফাকাকে নিয়ে নবম উইকেটে মহামূল্যবান ৪২ রান যোগ করেন লিন্ডে। এতেই পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুড়ে দেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের শুরুটাও ভালো হয়নি। দলে ফেরা বাবর আজম তৃতীয় ওভারে আউট হন ০ রানে। এরপর দারুণ ফর্মে থাকা সাইম আইয়ুব পাওয়ারপ্লের সুবিধা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। কিন্তু আরেক প্রান্তে অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান খেলেছেন কচ্ছপ গতিতে। নিজের খেলা প্রথম ৪০ বলে মাত্র ৩৩ রান করেন রিজওয়ান।
প্রয়োজনীয় রানরেট তরতরিয়ে বাড়তে থাকায় চাপ পড়ে অন্য ব্যাটসম্যানদের ওপর। দ্রুত রান তোলার তাড়নায় মারতে গিয়েই ক্যাচ দেন আইয়ুব, উসমান খান, তৈয়ব তাহিররা। রিজওয়ান পরে হাত খুলে খেলতে থাকলে জয়ের কিছুটা সম্ভাবনা জাগে পাকিস্তানের। কিন্তু ১৮তম ওভারে নিজের বোলিং কোটা পূর্ণ করতে এসে ৩ উইকেট নেন লিন্ডা। এতেই ম্যাচ ঝুঁকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৯ রান। কিন্তু তরুণ মাফাকা দ্বিতীয় বলে রিজওয়ানকে শিকার করেন। ওই ওভারে দেন মাত্র ৭ রান। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ জেতে ১১ রানে।
সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আগামী শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৮৩/৯
(মিলার ৮২, লিন্ডা ৪৮, মাফাকা ১২*, ক্লাসেন ১২; আফ্রিদি ৩/২২, আবরার ৩/৩৭, আব্বাস ২/৩০, মুকিম ১/৫৩)।
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭২/৮
(রিজওয়ান ৭৪, আইয়ুব ৩১, তাহির ১৮; লিন্ডা ৪/২১, মাফাকা ২/৩৯, বার্টম্যান ১/২৬, সিমেলেন ১/৪৪)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জর্জ লিন্ডা।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।