আয়ারল্যান্ড কি ইচ্ছা করেই আজ মুশফিককে সেঞ্চুরি করতে দেয়নি

প্রথম দিন শেষে ৯৯ রানে অপরাজিত মুশফিকুর রহিমপ্রথম আলো

নাজমুল হোসেন আউট হয়ে যাওয়ার পর ড্রেসিংরুম থেকে বের হতে একটু দেরিই করলেন মুশফিকুর রহিম। গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শকদের প্রায় সবার ফোনের ক্যামেরাই তখন বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের দরজায় তাক করা। মুশফিকের শততম টেস্টে ব্যাটিং করতে যাওয়ার মুহূর্তটাকে ফ্রেমবন্দী করে রাখতে চান তাঁরা।

আজ মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পুরো দিনই যেন সাজিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁর জন্য। সকালে ম্যাচ শুরুর আগে মিনিট দশেকের অনুষ্ঠানে তাঁর জন্য স্মারক বিশেষ ক্যাপ ছিল। মাঠের একপ্রান্তে টানানো হয়েছিল বড় ব্যানার। গ্যালারির দর্শকদের গায়ে ছিল শততম টেস্টে তাঁকে শুভেচ্ছা জানানো জার্সি।

এত সব আয়োজন আরও রঙিন করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন মুশফিক। শততম টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়ার বিরল কীর্তিতে নাম লেখাতে তাঁর দরকার আর মাত্র ১ রান। সেই অপেক্ষাটা যেন না করতে হয়, সেজন্য শেরেবাংলার গ্যালারিতে একটা বাড়তি উন্মাদনাই তৈরি হয়েছিল।

একটা দৃশ্যের বর্ণনা করলে ঘটনাটা বুঝতে সহজ হবে— আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের শেষ ওভারে তাঁর দরকার ছিল ৩ রান। গ্যাবিন হোইয়ের সেই ওভারে স্ট্রাইকে ছিলেন মুশফিকই। তৃতীয় বলে গিয়ে প্রথম রান নেন তিনি। স্ট্রাইকে আসেন লিটন দাস।

সঙ্গে সঙ্গেই গ্যালারি থেকে আওয়াজ উঠতে থাকে ‘সিঙ্গেল’, ‘সিঙ্গেল’। লিটন তা নিয়ে পঞ্চম বলে মুশফিককে স্ট্রাইক দেন। এবার গ্যালারি থেকে ভেসে আসে ‘মুশফিক’, ‘মুশফিক’ স্লোগান। কিন্তু এক রানের বেশি নিতে পারেননি তিনি।

শেষ ওভারে ৩ রান দরকার হলেও মুশফিক নিতে পেরেছেন ১
প্রথম আলো

শেষ বল করার আগে প্রায় মিনিট দুয়েক ধরে আয়ারল্যান্ড নতুন করে সাজাতে শুরু করে ফিল্ডিং। ম্যাচের শেষ আধঘণ্টার বেশিরভাগ সময়ই দৃশ্যটা দেখা যাচ্ছিল। নানা অজুহাতে সময় পার করছিল আইরিশরা।

দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে আসা মুমিনুল হকও জানালেন তাঁরা একটি বাড়তি ওভার খেলতে চেয়েছিলেন শেষদিকে, ‘দুজন ব্যাটসম্যানের সামনেই মাইলফলক ছিল। অবশ্যই যে কেউ চাইবে এই সময় (১ ওভার) করার জন্য। ওরা অনেক স্লো ছিল।’

চতুর্থ উইকেটে মুশফিক–মুমিনুল গড়েন ১০৭ রানের জুটি
প্রথম আলো

আয়ারল্যান্ডের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা স্পিন বোলিং কোচ ক্রিস ব্রাউনের দাবি অবশ্য ভিন্ন, ‘আমার মনে হয় না এটা ইচ্ছেকৃত। আমরা ভিন্ন ফিল্ড সেট আপ সাজানোর চিন্তা করছিলাম।’

বাড়তি সেই এক ওভার না হওয়ায় আজ আর সেঞ্চুরিটা পাওয়া হয়নি মুশফিকের। নাটকীয়তা রেখে ৯৯ রানে অপরাজিত থেকেই ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয়েছে।  
তবে এ নিয়ে দলের খুব একটা চিন্তা নেই বলেই দাবি মুমিনুলের, ‘উনার সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি করার অভ্যাস আছে ৯০ এর ঘরে গিয়ে প্যানিক হয় না। অন্য কেউ হলে হয়তো প্যানিক থাকতাম। উনি যেহেতু আছে আমরা কেউ প্যানিক না।’

আরও পড়ুন

মুশফিকের শততম টেস্ট ঘিরে আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট সাক্ষী হয়েছে ভিন্ন এক আবহেরই। চারদিকে উৎসবের রঙই লেগেছিল যেন। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে এত আগ্রহ এমনিতে খুব একটা দেখা যায় না। টেস্টে লম্বা একটা ক্যারিয়ার আছে মুমিনেলরও।
মুশফিকের পর বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫ টেস্ট খেলেছেন তিনি। আর কয়েক বছর ক্যারিয়ারটা লম্বা করে তাঁর সামনেও হাতছানি আছে শততম টেস্ট খেলার। সেসব অবশ্য আপাতত সময়ের হাতেই তুলে রাখতে চাইলেন মুমিনুল, ‘ভাই আমি কালকে বাঁচব কি না আমি জানি না। পরেরটা পরে দেখা যাবে।’

মুশফিককে শততম টেস্টের জন্য স্মারক জার্সি উপহার দেন তাঁর বর্তমান সতীর্থ ও প্রথম টেস্টের সতীর্থরা
প্রথম আলো

তবে মুশফিককে ঘিরে যে উদ্যাপন তা নিয়ে শুরুতে একটু মজাই করলেন মুমিনুল, ‘এই পরিবেশ তো এর আগে কখনো দেখিনি, সত্যি কথা। এমনকি অবসরের সময়ও দেখিনি। একটা সময় মনে হচ্ছিল অবসরের দিকে যাচ্ছে, পরে দেখলাম যে না ১০০ টেস্টের জন্য (এত আয়োজন)।’

তবে এমন আয়োজন তরুণ প্রজন্মকে টেস্টের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে বলেও বিশ্বাস তাঁর, ‘দেখে আমার অনেক ভালো লাগল। আমার কাছে মনে হয় এই সংস্কৃতি যদি সবসময় থাকে বাংলাদেশে, তরুণ প্রজন্মের যাঁরা আছে, তারাও টেস্ট খেলার জন্য, অথবা ১০০ টেস্ট খেলতে অনুপ্রাণিত হবে।’

৪ উইকেটে ২৯২ নিয়ে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন