উইকেট চাই? হয় কামিন্সকে ডাকুন নয় রাবাদাকে

প্যাট কামিন্স ও কাগিসো রাবাদাএএফপি

উইকেট প্রয়োজন? প্যাট কামিন্সকে ডাকুন। বাকি দায়িত্বটা তাঁর। গতকাল শেষ হওয়া মেলবোর্ন টেস্টে পাকিস্তানকে অনেকটা একাই টেনে ধরেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার। দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ১০ উইকেট নিয়ে জিতিয়েছেন দলকে। মেলবোর্নে যে কাজটা কামিন্স করেছেন, সেঞ্চুরিয়নে সেই কাজটাই করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা। কামিন্স করেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে আর প্রোটিয়া পেসারের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে উইকেট নিয়েছেন ৭টি।

মেলবোর্ন টেস্টে দ্বিতীয় দিনে ফিরুন। ৩ উইকেটে ১৮৭ রানে দিন শুরু করা অস্ট্রেলিয়ার স্কোরবোর্ডে আরও ১৩১ রান যোগ হতেই ৭ উইকেট তুলে নেন পাকিস্তানের পেসাররা। বোলিংয়ে দারুণ পারফরম্যান্সের পর ব্যাটিংয়েও দারুণ শুরু করেছিল পাকিস্তান—১ উইকেটে তুলেছে ১২৪। চাপে ছিল অস্ট্রেলিয়া। এমন সময়ে কামিন্স ফেরান সেট ব্যাটসম্যান আবদুল্লাহ শফিককে। এরপর পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজমকে। ম্যাচে ফিরল অস্ট্রেলিয়া।

আরও পড়ুন

সে ইনিংসে ৪ উইকেট পড়ার পর মোহাম্মদ রিজওয়ান ও আগা সালমান জুটি গড়ার চেষ্টা করলেন। কিছুটা জমেও উঠল। এরপর ২০ বলে ১৯ রানের সে জুটিও ভাঙেন কামিন্স। সালমানের বিদায় রিজওয়ান জুটি গড়েন আমের জামালের সঙ্গে। ৮৫ বলে ৪৫ রানের সে জুটিও ভাঙেন কামিন্স। সেটা রিজওয়ানকেই ফিরিয়ে।

দ্বিতীয় ইনিংসে আবদুল্লাহ শফিক আউট হওয়ার পর ৪১ রানের জুটি গড়েন ইমাম-উল-হক ও শান মাসুদ। ইমামকে ফেরান কামিন্স। বাবরকে সঙ্গে নিয়ে এরপর ইতিবাচক ক্রিকেটে ৭২ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন মাসুদ। এ সময়েই ৩১৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করা সম্ভব বলে মনে হয়েছে পাকিস্তানের সমর্থকদের। ঠিক তখনই ৬০ রানে ব্যাট করা মাসুদকে আউট করেন কামিন্স।

বাবরকে ফিরিয়ে কামিন্সের উদ্‌যাপন
এক্স

অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক এরপর আউট করেন রিজওয়ানকেও। রিজওয়ান-সালমানের ৫৭ রানের জুটি যখন অস্ট্রেলিয়াকে পরাজয়ের চোখরাঙানি দিচ্ছিল, তখন রিজওয়ানকে আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন কামিন্স। পুরো টেস্টে যখনই মনে হয়েছে পাকিস্তানের সুযোগ আছে, তখনই সেই সুযোগের দরজাটা তিনি এসে বন্ধ করেছেন।

সেঞ্চুরিয়নে ভারতের ইনিংস ব্যবধানে হারা টেস্টে ফলের ফয়সালা হয়ে যায় মূলত প্রথম ইনিংসে। সেই ইনিংসে বাউন্সারে শুরুতেই রাবাদা ফেরান রোহিত শর্মাকে। এরপর ২৪ রানে ৩ উইকেট হারানো ভারত বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায়। দুজনে গড়েন ৬৮ রানের জুটি।

আরও পড়ুন

লাঞ্চের পর এসে এই জুটিও ভাঙেন রাবাদা। যার শুরুটা আইয়ারকে দিয়ে। আইয়ার ফেরায় জুটি ভাঙে ঠিক, কিন্তু ভারতের ছোট সংগ্রহ তখনো নিশ্চিত হয়নি। ক্রিজে ছিলেন অর্ধশতক করা কোহলি। এরপর কোহলিকে ফিরিয়ে রাবাদা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। শুধু কোহলিই নয় রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও শার্দূল ঠাকুরকেও আউট করেন এই পেসার। তাতে লোকেশ রাহুলের শতকের পরও ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৪৫-এ। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা বড় সংগ্রহ গড়লে ম্যাচটা কার্যত সেখানেই শেষ হয়।

কামিন্স ও রাবাদা দুজনেই প্রজন্মের অন্যতম সেরা দুই পেসার। কামিন্সের অভিষেক যদিও রাবাদার চেয়ে ৪ বছর আগে। কামিন্সের অভিষেক ২০১১ সালের নভেম্বরে। তবে অভিষেক টেস্টের পর কামিন্স দ্বিতীয় টেস্ট খেলেছেন ২০১৭ সালের মার্চে। এরপর থেকেই অস্ট্রেলিয়া দলে তিনি নিয়মিত। অন্যদিকে রাবাদার অভিষেক ২০১৫ সালের নভেম্বরে।  

ভারতের বিপক্ষে টেস্ট জিততে বড় ভূমিকা রেখেছেন কাগিসো রাবাদা
এএফপি

দুজনের রেকর্ডও অনেকটা কাছাকাছিই বলা যায়। রাবাদা টেস্ট খেলেছেন ৬১টি আর কামিন্স ৫৭টি। টেস্টে রাবাদার উইকেট ২৮৭টি। আর কামিন্সের ২৫২। ২৫০ উইকেট নিয়েছেন এমন টেস্ট বোলারদের সেরা স্ট্রাইক রেটে শীর্ষ পাঁচে আছেন দুজনই। যেখানে শীর্ষে রাবাদা আর পাঁচে কামিন্স। রাবাদা টেস্টে প্রতি ৩৯.৪ বল পর উইকেট নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

কামিন্স উইকেট নিয়েছেন ৪৬.৭ বল পরপর। শীর্ষ পাঁচে বাকি তিনজন হচ্ছেন ডেল স্টেইন, ওয়াকার ইউনিস ও ম্যালকম মার্শাল। ৪৩৯ উইকেট নেওয়া স্টেইন ৪২.৩ বল পরপর উইকেট নিয়েছেন। ৩৭৩ উইকেট শিকার করা ওয়াকার উইকেট নিয়েছেন ৪৩.৪ বলে। কামিন্সের মতো মার্শালও উইকেট নিয়েছেন প্রতি ৪৬.৭ বলে। টেস্টে এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির উইকেট ৩৭৬টি।

কামিন্সের বয়স ৩০ আর রাবাদার ২৮। প্রত্যাশিতভাবেই দুজন ক্যারিয়ারে আরও অনেক টেস্ট খেলবেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ভিড়ে দুজনের মনোযোগ এখনো টেস্ট ক্রিকেটেই আছে। এখন দেখা যাক, এই দুই পেসার উইকেটসংখ্যাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারেন।