গলে যা হয়নি, কলম্বোতে তা চান সিমন্স
—নাজমুল হোসেনের আঙুলের চোটের কী অবস্থা?
—সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠের উইকেট দেখে কেমন মনে হচ্ছে বাংলাদেশের?
—কলম্বো টেস্টে মেহেদী হাসান মিরাজ খেললে বোলিং কম্বিনেশন কেমন হবে? নাঈম হাসান কি থাকবেন দলে?
কাল থেকে শুরু কলম্বো টেস্টের আগে বাংলাদেশ দলের কোচ ফিল সিমন্সের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে এর চেয়ে বেশি কিছু আসলে জানার ছিল না। গলে দারুণ খেলে ড্র করে কলম্বো এসেছেন ক্রিকেটাররা। আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠের প্রেসবক্সে আজ ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের কোচ সিমন্সের কথাতেও সেটাই প্রকাশ পেল।
আরও অনেক প্রশ্নের সঙ্গে ওপরের প্রথম প্রশ্নটির জবাবেও স্বস্তির কথাই বলেছেন কোচ, ‘ও (নাজমুল) ঠিক আছে। আঙুলে হালকা ব্যথা পেয়েছে, টেপ পেঁচিয়ে খেলতে পারবে। খেলতে কোনো সমস্যা হবে না।’ বাকি দুই প্রশ্নের জবাবেও ফুটে উঠল গলের ড্র থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস।
অধিনায়ক নাজমুলের আঙুলের চোট যে গুরুতর কিছু ছিল না, সেটা কাল তিনি নিজেই জানিয়েছেন। ক্যাচ অনুশীলনের সময় পুরোনো ব্যথায় বল লেগেছিল। তবে পরে তাঁর ব্যাটিং অনুশীলন না করার সঙ্গে নতুন করে পাওয়া ব্যথার সম্পর্ক ছিল না। মাঠে এসে বাস থেকে নামার সময়ই ঠিক হয়েছিল, যেহেতু আঙুলে ব্যথা, ব্যাটিং অনুশীলনের দরকার নেই। অবশ্য আজ দুপুরেও সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ক্যাচ অনুশীলনের সময় আবার সেই আঙুলেই বল লেগেছে নাজমুলের। পরে অনুশীলন থেকে উঠে গেলেও জানা গেছে, এটিও তাঁর না খেলার মতো গুরুতর নয়।
সিমন্স আজ উইকেট দেখেছেন সংবাদ সম্মেলনের পর। তবে গতকালের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত উইকেটটা ভালোই মনে হচ্ছে। গতকাল যা দেখেছি, সেটা বেশ ভালো লেগেছে।’
আমরা গলে যেভাবে লড়াই করেছি, এখানেও তেমনি খেলতে চাই। কিছু ছোটখাটো জায়গায় উন্নতির সুযোগ আছে, সেটা করাটা জরুরিও। যেভাবে প্রথম টেস্টে খেলেছি, সেই মান ধরে রাখা কিংবা আরও ভালো কিছু করা দরকার।ফিল সিমন্স, প্রধান কোচ, বাংলাদেশ
এসএসসির উইকেটের ইতিহাসও জোরালোভাবে ব্যাটসম্যানদেরই পক্ষে। কলম্বোর এ মাঠেই ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা মাহেলা জয়াবর্ধনের ৩৭৪ রানের সেই ইনিংস, যেটি এখনো টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। সেই টেস্টের তৃতীয় উইকেটে মাহেলা–কুমার সাঙ্গাকারার (২৮৭) ম্যারাথন ৬২৪ রান টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যেকোনো জুটিতে সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
সিমন্সের আগে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা এসেও আজ এসএসসির উইকেটের ব্যাটিং–গুনগানই গেয়ে গেছেন। স্পিনাররা সহায়তা পেলেও সেটা হয়তো টেস্টের শেষ দু–এক দিনই পাবেন। এসএসসিতেও গলের পুনরাবৃত্তি দেখা গেলে তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সিমন্সের প্রাথমিক লক্ষ্যও সেটা, ‘আমরা গলে যেভাবে লড়াই করেছি, এখানেও তেমনি খেলতে চাই। কিছু ছোটখাটো জায়গায় উন্নতির সুযোগ আছে, সেটা করাটা জরুরিও। যেভাবে প্রথম টেস্টে খেলেছি, সেই মান ধরে রাখা কিংবা আরও ভালো কিছু করা দরকার।’
অসুস্থতা থেকে ফেরা মেহেদী হাসান মিরাজের কলম্বো টেস্টের একাদশে থাকাটা ওপেন সিক্রেট। এই টেস্টে আর কেউ খেলুক না খেলুক, মিরাজ যে খেলবেন তা মোটামুটি নিশ্চিত। যদিও মিরাজের খেলা নিয়ে এক প্রশ্নে সিমন্স প্রশ্নকর্তার উদ্দেশে রসিকতা করে বলেন, ‘মিরাজ এই টেস্টে খেলছে, সেটা তাহলে আপনি এখনই নিশ্চিত হয়ে গেছেন!’
পরের কথায় অবশ্য সিমন্স নিজেও দিয়েছেন সেই নিশ্চয়তা, ‘মিরাজ এখন বিশ্বের দুই নম্বর র্যাঙ্কিংয়ে (টেস্ট অলরাউন্ডার)। সে ব্যাটিং ও বোলিং দুই ক্ষেত্রেই দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’ সঙ্গে অন্যদেরও জাগিয়ে রাখতে বলেছেন, ‘তবে কেবল তার ওপর নির্ভর করা যাবে না, প্রত্যেককে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। মিরাজ তার কাজ করবে, কিন্তু বাকি দলেরও এগিয়ে আসা দরকার।’
মিরাজ খেললে গলে ৫ উইকেট পাওয়া আরেক অফ স্পিনার নাঈম খেলবেন কি না, সে প্রশ্ন আসেই। জবাবটা একটি ‘যদি’–‘কিন্তু’ রেখেই দিয়েছেন কোচ, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন। গলে নাঈম অসাধারণ খেলেছে, তাকে বাদ দেওয়া কঠিন হবে। কিন্তু সবাই জানে দলে থাকা না-থাকা নির্ভর করে কন্ডিশনের ওপর এবং দলের প্রয়োজনের ওপর।’
দ্বিতীয় একাদশটা ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা আজ অনুশীলনের পরই। সিমন্স বলেছেন, ‘উইকেট দেখে বিকেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগে কন্ডিশন দেখব, তারপর ঠিক করব বোলিং কম্বিনেশন—তিনজন পেসার খেলাব, না তিনজন স্পিনার।’
গলের মতো এখানেও আমরা জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামব। আমার মানসিকতা সব সময়ই এমন—কীভাবে জেতা যায়, সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
এসএসসির কন্ডিশন মাথায় রেখে অবশ্য তিন স্পিনার আর দুই পেসারের কম্বিনেশনে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মিরাজের সঙ্গে অন্য দুই স্পিনার নাঈম হাসান আর তাইজুল ইসলামকেও খেলাতে পারে বাংলাদেশ। সঙ্গে দুই পেসার, তবে হাসান মাহমুদের সঙ্গে নাহিদ রানার পরিবর্তে আসতে পারেন খালেদ আহমেদ।
শ্রীলঙ্কায় এসে দ্রুতই খেলার মধ্যে ঢুকে যাওয়ার মানসিকতা বাংলাদেশ দল ঢাকা থেকেই নিয়ে এসেছিল। গল টেস্টের পারফরম্যান্স আর টেস্টটা ড্র করা দলের মানসিকতা আরও ইতিবাচক করে তুলেছে। কোচও সরাসরিই বলে দিলেন জয়ের লক্ষ্যের কথা, ‘শ্রীলঙ্কা ভালো ক্রিকেট খেলছে—তাদের হারানো সহজ হবে না। কিন্তু গলের মতো এখানেও আমরা জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামব। আমার মানসিকতা সব সময়ই এমন—কীভাবে জেতা যায়, সেটা খুঁজে বের করতে হবে।’
গলের অসমাপ্ত কাজটা কি কলম্বোতে করতে পারবে বাংলাদেশ?
