‘এ রকম জয় আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়’

বাংলাদেশের প্রথম টি–টোয়েন্টি জয়ে দারুণ ব্যাটিং করেছেন তাওহিদ হৃদয়ছবি: এএফপি

তিনটা বল আগে-পরে কী ভিন্ন ছবি!

শেষ ওভারের প্রথম বলেই মেহেদী হাসান মিরাজ যখন করিম জানাতকে দুর্দান্ত এক কাভার ড্রাইভে চার মারলেন, বাংলাদেশের রান হলো ১৫৩। হাতে তখনো ৫ উইকেট। বলও বাকি ৫টা। জিততে লাগে আর মাত্র ২ রান। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তখনই উদ্‌যাপন শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সমর্থকেরা কী আর তখন জানেন, পরের তিন বলে এত নাটক হবে!

করিম জানাতের পরের বলে মিরাজ আউট হয়ে গেলেন মিডউইকেটে মোহাম্মদ নবীকে ক্যাচ দিয়ে। পরের বলে তাসকিন আহমেদ কট বিহাইন্ড, এরপরের বলে নাসুম আহমেদও ক্যাচ দিলেন ডিপ থার্ডম্যানে। জানাতের হ্যাটট্রিক! হঠাৎ করেই ম্যাচের রং গেল বদলে। জিততে তখনো বাংলাদেশের ২ রান লাগে, হাতে ২ উইকেট, বলও ২টি।

আরও পড়ুন
ম্যাচ জয়ের পর বাংলাদেশেরে দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান তাওহিদ হৃদয় ও শরীফুল ইসলামের উচ্ছ্বাস
ছবি: এএফপি

শরীফুল অবশ্য আর বিপদ হতে দেননি। পঞ্চম বলেই জানাতকে পয়েন্ট দিয়ে দারুণ এক চার মেরে নিজে উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন, ভাসিয়েছেন বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম ও গ্যালারিকেও। তবে মাঝের ওই তিন বলে যা হয়েছে, তাতে আসলেই ম্যাচ জেতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের জয়ের নায়ক তাওহিদ হৃদয়। ৩২ বলে ২ ছক্কা ও ৩ চারে অপরাজিত ৪৭ রান করে ম্যাচসেরা হওয়া হৃদয়ের শেষ ওভারে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে নাকি কিছুটা অসহায় লাগছিল। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমার খুব নার্ভাস লাগছিল স্ট্রাইকে না যেতে পেরে। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে স্ট্রাইক পেলে ম্যাচটা বের করে নেব।’

ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত তো বাংলাদেশ বের করে নিয়েছেই এবং সেখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা হৃদয়ের সঙ্গে আরেক ব্যাটসম্যান শামীম হোসেনের। তাড়া করতে নেমে এ দুজন পঞ্চম উইকেটে গড়েছেন ৪৩ বলে ৭৩ রানের দুর্দান্ত এক জুটি। ৬৪ রানে ৪ উইকেট পড়ে গেলেও এ দুজনের জুটিতেই ম্যাচটা হাত থেকে বেরিয়ে যায়নি বাংলাদেশের। ব্যাটিংয়ের সময় শামীমের সঙ্গে কী কথা হচ্ছিল, সেটা জানাতে গিয়ে হৃদয় বলেছেন, ‘আমরা শুধু চাইছিলাম প্রান্ত বদল করে খেলতে এবং ম্যাচটাকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে।’ শেষ ওভারে বেশ চাপে পড়ে গেলেও এভাবে ম্যাচ জেতার একটা ইতিবাচক দিকও দেখছেন হৃদয়, ‘এ রকম জয় আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।’

আরও পড়ুন
শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন আফগানিস্তানের করিম জানাত
ছবি: এএফপি

হৃদয়ের মতোই শেষ ওভারে কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। তবে একই সঙ্গে সাকিব জয়ের ব্যাপারেও ছিলেন বেশ আত্মবিশ্বাসী। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘কিছুটা নার্ভাসনেস তো ছিলই। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল (জেতার); কারণ, আমাদের টেল এন্ডাররাও ব্যাট করতে পারে। আজ শরীফুলের পালা ছিল ম্যাচটা শেষ করে আসার।’ শেষের এই নাটকীয়তাটুকু হয়েছে বলেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এত রোমাঞ্চকর, এমন বলেছেন সাকিব।

শেষ দিকে এমন কাছে গিয়েও ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই হতাশ আফগানিস্তান অধিনায়ক রশিদ খান। টসের পর অবশ্য তিনি বলেছিলেন, এই উইকেটে ১৫০ রান করে জেতার সামর্থ্য তাঁদের আছে। আফগানিস্তান করেছিলও ১৫৪ রান। তবে শেষ পর্যন্ত এই রানটা যথেষ্ট প্রমাণ করতে পারেননি আফগান বোলাররা, রশিদ নিজেও যাঁদের একজন। তবে এর জন্য বোলারদের খুব একটা দায় দিতে রাজি নন রশিদ। তাঁর দাবি, বৃষ্টির পর এই মাঠে বোলিং করা খুবই কঠিন হয়ে গিয়েছিল। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কিছুটা আক্ষেপের সুরেই রশিদ বলেছেন, ‘মাঠ আসলে খুবই ভেজা ছিল। আমাদের ৫০ ভাগ শক্তি চলে গেছে ভেজা বলের কারণে। এমনিতে আমাদের বোলাররা ভালো বোলিংই করেছে।’

১৫ রান যথেষ্ট মনে করলেও ব্যাটসম্যানদের কাছে আরও কিছু বেশি রানের প্রত্যাশা ছিল বলে জানিয়েছেন রশিদ, ‘আমার মনে হয়, আমাদের বোলিং ইউনিটের জন্য ১৫০ যথেষ্ট রান ছিল। তবে প্রতিপক্ষের একটা ভালো ইনিংসই যেকোনো ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে পারে। যদি আমরা শুরুর দিকে আরেকটু নিয়ন্ত্রিত শট খেলতে পারতাম, আরও কিছু রান বেশি হতো, সেটা কাজে লাগত হয়তো।’