বাবার ‘কার্বন কপি’ রকি বাবার রেকর্ড ভেঙে খেলছে বিখ্যাত বাবার অধীনেই

অ্যান্ডু ফ্লিনটফের ছেলে রকি ফ্লিনটফফেসবুক

ল্যাঙ্কাশায়ারে জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং ক্রিকেটের প্রথম পাঠ। ডানহাতি ফাস্ট মিডিয়াম পেসার, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। হুক খেলেন দুর্দান্ত। পদবি ‘ফ্লিনটফ’।
এটুকু পড়ে অনেকেই স্মৃতির ভেলায় ভেসে ফিরে যাবেন এই শতাব্দীর শুরুর দিকে। চোখের সামনে ভেসে উঠবে সাড়ে ৬ ছয় ফুট উচ্চতার এক দুর্দান্ত অলরাউন্ডারের মুখ, ইংল্যান্ডের ২০০৫ অ্যাশেজ জয়ের নায়ক যিনি—অ্যান্ডু ফ্লিনটফ।

নাহ্‌, শুরুতে যার কথা বলা হয়েছে, সেই লোকটার প্রথম নাম ‘অ্যান্ড্রু’ নয়, ‘রকি’! বয়স মাত্র ১৬। তবে পদবি যেহেতু এক, বুঝতেই পারছেন, দুজনের মধ্যে সম্পর্ক একটা আছে। হ্যাঁ, রকি কিংবদন্তি ইংলিশ অলরাউন্ডার অ্যান্ডু ফ্লিনটফেরই ছেলে।

আরও পড়ুন

বাবার ক্রোমোজম পেলেও সব ছেলেই বাবার মতো হয় না। কিন্তু রকিকে এরই মধ্যে অনেকেই মনে করছেন অ্যান্ড্রুর কার্বন কপি। বাবার মতোই অলরাউন্ডার, তার ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে অনেকেরই শুরুর দিকের ফ্লিনটফকে মনে পড়বে।

ক্যারিয়ারের শুরুটাও তো প্রায় বাবার মতোই হতো। ঘরের ক্লাব ল্যাঙ্কাশায়ারের বয়সভিত্তিক দল হয়ে দ্বিতীয় একাদশে অভিষেক এ বছরের এপ্রিলে, ১৬তম জন্মদিনের দুই দিন আগে। ১৬ বছর ১৬ দিন বয়সে ল্যাঙ্কাশায়ারের দ্বিতীয় একাদশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিটাও পেয়ে যায়, হয়ে যায় ক্লাবটির ইতিহাসেই দ্বিতীয় একাদশের হয়ে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। আগের রেকর্ডটা কার ছিল জানেন? রকির বাবা অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের, ১৯৯৪ সালে যিনি ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৬ বছর ২৬৬ দিন বয়সে।

বাবা অ্যান্ড্রু ও ছেলে রকি
এক্স

এরপর এ বছরের জুনেই ল্যাঙ্কাশায়ারের সঙ্গে প্রথম পেশাদার চুক্তি, জুলাইয়ে ল্যাঙ্কাশায়ারের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক, আগস্টে প্রথম শ্রেণির অভিষেক হলো, সেটাও ল্যাঙ্কাশায়ারের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে।

তত দিনে অবশ্য ইংল্যান্ড যুব দলের হয়েও রেকর্ড গড়া হয়ে গেছে রকির। জুনেই ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলে প্রথম ডাক পেয়েছিল, জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা যুব দলের বিপক্ষে পেয়ে যায় ক্যারিয়ারের প্রথম যুব ওয়ানডে সেঞ্চুরি, সেদিন তার বয়স ছিল ১৬ বছর ১০২ দিন। ইংল্যান্ড যুব দলের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ডে ইয়ান বেলকে পেছনে ফেলে দিয়েছে রকি। ১৯৯৯ সালে বেল ইংল্যান্ড যুব দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৬ বছর ৩১৩ দিন বয়সে।

আরও পড়ুন

যুব দল থেকে ইংল্যান্ড ‘এ’ দল লায়নসে যাওয়ার অপেক্ষাটা যে খুব বেশি দীর্ঘায়িত হবে না, সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। তবে রকি লায়নসে ডাক পেল খুব নাটকীয়ভাবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফররত ইংল্যান্ড লায়নসের প্রাথমিক দলে রকি ছিল না।

কিন্তু ইসিবির ক্রিকেট পরিচালক রব কি এবং জাতীয় দলের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম নতুনদের সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। ধারণা করা হচ্ছে, মূলত এ দুজনের চাওয়াতেই শেষ সময় লায়নস দলে ডাকা হয় রকিকে, যে কিনা কাকতালীয়ভাবে সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকাতেই ছিল ইংল্যান্ড যুব দলের সঙ্গে।

ব্যস, তাতেই আরেকটা বিরল ঘটনার সাক্ষী হলো ইংল্যান্ড ক্রিকেট। ‘এ’ দলে এখন বাবা অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের অধীনে খেলছে ছেলে রকি! এই গ্রীষ্মে ‘এ’ দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অ্যান্ডুরও এটি প্রথম মিশন।

‘এ’ দলে শুরুটা অবশ্য খুব চমকে দেওয়ার মতো হয়নি রকির। ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিল, টিকেছিল মাত্র ৩ বল। একটা চার মেরেই আউট হয়ে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের সঙ্গে চার দিনের ম্যাচে দ্বিতীয় দিন শেষেই প্রথম ইনিংসে ১৩৩ রানে পিছিয়ে পড়েছে লায়নসরা। দ্বিতীয় ইনিংসে নিশ্চয়ই রকির কাছে আরও ভালো কিছু চাইবেন বাবা অ্যান্ড্রু।

আরও পড়ুন

কোচ বাবার অধীনে ছেলের খেলার ঘটনা অবশ্য ইংল্যান্ড দলে এটাই প্রথম নয়। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক ও উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান অ্যালেক স্টুয়ার্ট সারে ও ইংল্যান্ড—দুই দলেই খেলেছেন বাবা মিকি স্টুয়ার্টের অধীনে। সারেতেই আরেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান মার্ক বুচার খেলেছেন বাবা অ্যালান বুচারের অধীনে।