লিটন–জাকেরদের ব্যাটিং-ব্যর্থতায় এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হার বাংলাদেশের

টানা দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে হেরে সিরিজও হেরেছে বাংলাদেশ। আজ চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামেপ্রথম আলো
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৪৯/৯। বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৫/৮। ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪ রানে জয়ী।

তানজিদ হাসান আউট হওয়ার পরই মাঠ ছাড়তে শুরু করলেন দর্শকদের কেউ কেউ। অথচ তখনো ম্যাচের মূল রোমাঞ্চ বাকি। বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনাও বেশ জোরালো। ৬ উইকেট হাতে রেখে ১৭ বলে ৩৩ রানের সমীকরণটা তো আর তেমন কঠিন কিছু ছিল না।

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়াম থেকে দর্শকদের খেলা অসমাপ্ত রেখেই বাড়ির পথ ধরার কারণ বুঝতে একটু পেছনেই ফিরতে হবে। ওই সময় তানজিদের ব্যাটিং সঙ্গী জাকের আলীর মুখোমুখি হওয়া প্রায় প্রতিটি বলেই গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল দুয়োধ্বনি। তানজিদের পর যিনি ব্যাটিংয়ে এসেছিলেন, সেই শামীম হোসেনের সাম্প্রতিক ফর্মও খুব একটা আস্থা দিতে পারছে না। প্রথম ম্যাচের পর তাঁর নাম উল্লেখ করে হতাশার কথা জানিয়েছিলেন খোদ অধিনায়ক লিটন দাসও।

সবাইকে ভুল প্রমাণ করার সেই সুযোগ আজ কাজে লাগাতে পারেননি দুজনের কেউই। একাদশে ফেরা জাকের করেছেন ১৮ বলে ১৭, শামীম আউট হয়েছেন ২ বলে ১ রান করে। ক্যারিবীয়ানদের একের পর এক ক্যাচ মিসে লম্বা সময় জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখা বাংলাদেশ আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে হেরেছে ১৪ রানে।

ম্যাচশেষে খেলোয়াড়েরা সাইডলাইন ছেড়ে মাঠে গেছেন। একা বসে আছেন কোচ ফিফ সিমন্স
শামসুল হক

এক ম্যাচ বাকি থাকতে নিশ্চিত হয়ে গেছে সিরিজ হারও। টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের টানা চারটি সিরিজ জয়ের ধারাবাহিকতাও শেষ তাতে। মাঝে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে একটি ম্যাচ জেতা ওয়েস্ট ইন্ডিজ তার আগে–পরে টি–টোয়েন্টিতে হেরেছে সাতটি সিরিজ। জুনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটি তিন ম্যাচের হলেও বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল বাকি দুটি ম্যাচই।

আজ বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ শুরুই হয়েছিল হতাশা দিয়ে। তানজিম হাসানের করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের প্রথম বলেই স্লিপে দাঁড়ানো তানজিদ হাসানের দিকে যেতে থাকা বলটা ডাইভ দিয়ে ধরতে গিয়ে ফেলে দেন উইকেটকিপার লিটন দাস, বেঁচে যান ব্রেন্ডন কিং। অবশ্য পরের ওভারেই তাঁকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের দুঃখটা বাড়তে দেননি পেসার তাসকিন আহমেদ।

ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ
প্রথম আলো

ওই আনন্দের পর আর উইকেটের দেখা মিলছিল না। শাই হোপ–অ্যালিক অ্যাথানেজ মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের গতি যেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাতে রানটা দুই শ পেরিয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল।

১১ ওভারে ক্যারিবীয়দের রান ছিল ১০৫। হোপ, অ্যাথানেজ—দুজনই ততক্ষণে ৫০ পেরিয়ে গেছেন, কিন্তু ব্যাটিংটা বিস্ফোরক হয়ে ওঠার আগেই তাঁদের থামিয়ে দিতে পেরেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। শুরুটা করেছিলেন নাসুম আহমেদ।

শতরানের জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ
প্রথম আলো

পরপর ২ বলে অ্যাথানেজ ও রাদারফোর্ডকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। পরের ওভারে শাই হোপকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। শেষ দিকে মোস্তাফিজও একবার জাগিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা।

একপর্যায়ে ১২ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই শ পেরিয়ে যাওয়ার পথে থাকা দলটাই শেষ পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি দেড় শ রান। চট্টগ্রামের ব্যাটিং–সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্যটা কঠিন ছিল না।

কিন্তু একমাত্র তানজিদ হাসান ছাড়া আর কারও ব্যাটিংয়েই দেখা যায়নি আত্মবিশ্বাসের ছাপ। সব মিলিয়ে ইনিংসে চারবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ক্যাচ ছেড়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডাররা। সেই সুযোগও তানজিদ ছাড়া কাজে লাগাতে পারেননি আর কেউ।

তানজিদের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৬১ রান
প্রথম আলো

আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে নবম ফিফটি পেয়েছেন আজ তানজিদ। ৩টি করে চার-ছক্কায় ৪৮ বলে ৬১ রান করে আউট হয়েছেন ১৮তম ওভারে। রোমারিও শেফার্ডের বলে ব্রেন্ডন কিংয়ের হাতে ক্যাচ দেন তানজিদ, তাতে প্রায় সব সম্ভাবনাই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ বলে ২৩ রান আসে অধিনায়ক লিটন দাসের ব্যাট থেকে। ১৪ বলে ১২ রান করেন আরেক মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান তাওহিদ হৃদয়।

শেষটা ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা দিয়ে হলেও বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আশা জাগিয়েছিল, বাংলাদেশ সিরিজে ফিরবে। সে আশা ভেঙে যাওয়ার পর এখন শুক্রবারের শেষ টি–টোয়েন্টিতে ধবলধোলাই এড়ানোই লক্ষ্য লিটনদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৪৯/৯ (হোপ ৫৫, অ্যাথানেজ ৫২, চেজ ১৭*; মোস্তাফিজ ৩/২১, রিশাদ ২/২০, নাসুম ২/৩৫)। বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (তানজিদ ৬১, লিটন ২৩, জাকের ১৭; আকিল ৩/২২, শেফার্ড ৩/২৯, হোল্ডার ২/২০)। ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রোমারিও শেফার্ড। সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২–০–তে এগিয়ে।
আরও পড়ুন