সাদমান–এনামুলে দারুণ শুরুর পর শেষ সেশনে পুরোনো ‘রোগ’

তাড়াহুড়া করার খেসারত দিয়ে আউট মুশফিক। চোখেমুখে হতাশাটা স্পষ্টশামসুল হক

সাগরিকার সূর্য যত হেলে পড়ল পশ্চিমে, ততই যেন অমনোযোগী হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। নয়তো মাসাকেসার বলে অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের শর্ট মিডউইকেটে তুলে দেওয়া ক্যাচ কিংবা মুশফিকুর রহিমের তাড়াহুড়ো করে রান নিতে গিয়ে রান আউট হওয়ার ব্যাখ্যা কী?

উত্তরটা হয়তো দিতে পারবেন না তাঁরাও। চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে রঙিন একটা দিনের শুরু যে শেষে এমন হতাশার সাদা–কালো হয়ে গেল, সেই দায় তো ব্যাটিংয়ের পুরোনো রোগের নতুন করে আর্বিভাবে। অথচ সাদমান ইসলাম এবং এনামুল হকের বেঁধে দেওয়া ছন্দে এগিয়ে যেতে পারলে দিনটা শেষ হওয়ার কথা ছিল দাপট দেখিয়ে।

আরও পড়ুন

চেনা ছন্দটা সাদমান খুঁজে পান না সবসময়— অথবা তাঁর ঢিমেতালের ব্যাটিং ভালো লাগে না কারও কারও। কিন্তু আজ সাদমান যখন ড্রেসিংরুমে ফেরার পথ ধরলেন, তখন তাঁর পিঠ চাপড়ে দেন সতীর্থরা। দর্শকদের অভিবাদনেও ভেসেছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন, নির্বিষ বোলিংয়ের বিপক্ষে খুব বড় কিছু নয় বটে, কিন্তু ১৬ চার ও ১ ছক্কায় তাঁর ১২০ রানের ইনিংসটি অবশ্যই স্বস্তির।

এনামুল হককে নিয়ে সাদমান যা করেছেন, এমন একটা কিছুর জন্য বাংলাদেশের অপেক্ষা ছিল দীর্ঘ ২৮ মাসের। কতবার বদলে গেছে সঙ্গী, কখনো পুরো জুটিই— কিন্তু উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না কিছুতেই। তিন বছর পর টেস্ট খেলতে নামা এনামুল হককে নিয়ে কাজটা আজ করেছেন সাদমান। ৩২ ইনিংস পর সেঞ্চুরি পেরোনো উদ্বোধনী জুটিটি থেমেছে ১১৮ রানে, তবে তাঁর আগে তাঁরা গড়ে দিয়ে গেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৩ উইকেট হাতে রেখে ৬৩ রানে এগিয়ে থাকার ভিত। দিনের শেষ সেশনে এসে পুরোনো সেই হতশ্রী ব্যাটিংয়ে ৪ উইকেট না হারালে যা আরেকটু উজ্জ্বলই মনে হতো। ৭ উইকেটে ২৯১ রান তুলে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ।

সেঞ্চুরি তুলে নেন সাদমান
শামসুল হক

সাদমান ইসলামের ব্যক্তিগত অপেক্ষাটা যদিও ছিল জুটির চেয়েও দীর্ঘ— প্রায় চার বছর আগে হারারেতে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। এরপর তিন অঙ্কের দেখা নেই ২৬ ইনিংস। মাঝের এ সময়ে বাদ পড়েছেন, ফিরেও এসেছেন এবং বাদ পড়ার আওয়াজও উঠেছে। এনামুলের একাদশে সুযোগ পেয়ে নিজের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহটা পাওয়ার বড় একটা অবদানও আছে সাদমানের লম্বা ইনিংসে।

আরও পড়ুন

কথাটা শুনে কেউ হয়তো স্কোরকার্ডটা দেখতে চলে যাবেন এখনই— এনামুল আসলে ৮০ বলে ৩৯ রানই করেছেন, কিন্তু টেস্টে এটাই তাঁর সর্বোচ্চ। এই সংস্করণে আগে যে পাঁচটি ম্যাচ তিনি খেলেছেন, তাতে তাঁর ব্যাট থেকে সবমিলিয়ে এসেছে ১০০ রান, ২৩ রানের বেশি করতে পারেননি কখনো। আজ ব্লেসিং মুজারাবানির বলে আম্পায়ারস কলে আউট হয়ে যাওয়ার পর নিশ্চয়ই সর্বোচ্চটাকে আরেকটু বড় করতে না পারার আফসোসই সঙ্গী হয়েছে তাঁর।

স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি করে দেওয়ার পর মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে গ্যালারিতে দর্শক বেড়েছে, তাঁদের সবচেয়ে আনন্দের সময়টা কেটেছে প্রথম সেশনে এনামুল–সাদমানের কল্যাণে। প্রথম বলেই মুজারবানিকে আউট করার পর ২২৭ রানেই জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংস থামিয়ে দিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। সাদমান–এনামুল জুটিতে ওই সেশনে আর উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ।

ওপেনিংয়ে ১১৮ রানের জুটি গড়েন সাদমান–এনামুল
শামসুল হক

বড় রানের স্বপ্নটা বোনা তাই অস্বাভাবিকও ছিল না। কিন্তু শেষ বিকেলের হেয়ালি ব্যাটিংয়ে তা আর হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আফসোসটা হয়তো সঙ্গী হয়েছে মুশফিকুর রহিমেরই— ফর্ম নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার খেলছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যেই। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে এক রান নিতে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়েও আর ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি, থামতে হয় ৫৯ বলে ৪০ রান করে।

তাঁর বিদায়ের পর বাংলাদেশ দিনটা শেষ করেছে তিন শ ছুঁইছুঁই রান নিয়ে— ক্রিজে ৩৭ বলে ১৬ রান করা মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গী ১১ বলে ৫ রান করা তাইজুল ইসলাম। দারুণ একটা শুরুর পর বাকি সময়ের পারফরম্যান্সের দিনটাকে খারাপ না বলে আর উপায় কী!