তাইজুলকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত বোলার’ বললেন তামিম
চট্টগ্রাম টেস্টে আজ প্রথম দিনে জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে ৬০ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেনতাইজুল ইসলাম। টেস্টে এ নিয়ে ১৬তমবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার। প্রথম দিনের খেলা শেষে তাইজুলের প্রশংসা করে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন তামিম ইকবাল।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের পেজে তাইজুলের একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত (আন্ডাররেটেড) বোলার। এখন খেলা অন্য বোলারদের পরিসংখ্যান দেখুন, তাহলে আমার কথাটা বুঝতে পারবেন। আরেকবার ৫ উইকেট নিয়ে দারুণ খেলেছ তাইজুল।’
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে টেস্ট ও ডিসেম্বরে ওয়ানডে অভিষেক তাইজুলের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ২০১৯ সালে। ওয়ানডে (২০) ও টি-টোয়েন্টির (২) চেয়ে টেস্ট ম্যাচই (৫২) বেশি খেলেন তাইজুল। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি টেস্টে প্রথম দিনের পারফরম্যান্সসহ মোট ৫৩ টেস্টে এ পর্যন্ত ২২৪ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। তাঁর টেস্ট সংস্করণের পারফরম্যান্সটা যাচাই করে দেখা যায়।
এখনো যাঁরা খেলছেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নাথান লায়নের। অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনারের টেস্ট অভিষেক ২০১১ সালে। তাইজুলের টেস্ট অভিষেকের সময় থেকে লায়নের পারফরম্যান্স— ১০৩ টেস্টে ২৯.৪৮ গড়ে ৪৪১ উইকেট। মোট ২৪ বার ৫ উইকেট নিলেও তাইজুলের অভিষেকের পর থেকে ১৯ বার ৫ উইকেট নেন লায়ন। তবে অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলায় লায়ন এ সময়ে তাইজুলের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। বোলিং গড় এবং স্ট্রাইকরেটে লায়ন ও তাইজুলের মাঝে ব্যবধান বেশি না। তাইজুলের বোলিং গড় ৩১.৫৬, স্ট্রাইক রেট ৬১.৯, যেখানে লায়নের স্ট্রাইকরেট ৬১.৬ ও গড় ৩০.১৯।
ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন গত বছর ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়েন। টেস্টে তার অভিষেক ২০১১ সালে। তাইজুলের টেস্ট অভিষেক থেকে এই সংস্করণে ৮৫ ম্যাচে ২২.৮৪ গড়ে ৪৩০ উইকেট নেন অশ্বিন। এ সময়ে ২৮ বার পেয়েছেন ৫ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার মতো ভারতও বেশি বেশি টেস্ট খেলায় স্বাভাবিকভাবেই এ সময়ে তাইজুলের তুলনায় বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন অশ্বিন।
ভারতের আরেক স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। তাইজুলের অভিষেকের দুই বছর আগে টেস্টে অভিষেক জাদেজার। তাইজুলের অভিষেকের সময় থেকে এ পর্যন্ত ৬৮ টেস্টে ২৭৮ উইকেট নিয়েছেন জাদেজা। তবে তাঁর চেয়ে এ সময়ে বেশি সংখ্যকবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। জাদেজা এ সময়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৩ বার, তাইজুল নিয়েছেন ১৬ বার।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের বাইরে থাকা সাকিব আল হাসানকেও এই হিসাবে আনা যায়। ২০০৭ সালে সাকিবের টেস্ট অভিষেক। তবে তাইজুলের অভিষেক থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ টেস্ট খেলে ১২৪ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন ৮ বার। সাকিব এখনো টেস্ট থেকে অবসর নেননি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংসদ সদস্য সাকিব রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ জাতীয় দলে আর ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
২০২৩ সালে টেস্ট ছেড়ে দেওয়া ইংলিশ স্পিনার মঈন আলী ২০১৪ সালে এই সংস্করণে অভিষিক্ত হওয়ার পর ৬৮ টেস্টে নিয়েছেন ২০৪ উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন পাঁচবার। মেহেদী হাসান মিরাজ ২০১৬ সালে টেস্ট অভিষেকের পর এ পর্যন্ত ৫৩ ম্যাচে নিয়েছেন ২০০ উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১২ বার। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশব মহারাজ ২০১৬ সালে অভিষিক্ত হওয়ার পর ৫৭ ম্যাচে নিয়েছেন ১৯৮ উইকেট। মহারাজ এ সময়ে ইনিংসে ৫ উইকেট নেন ১১ বার।
তাইজুল ঘরের মাঠে বেশি কার্যকর। ঘরের মাঠে টেস্টও খেলেছেন বিদেশের তুলনায় অনেক বেশি। ঘরে ৩৭ টেস্টে তাঁর শিকার ১৭৭ উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১২ বার। ঘরের বাইরে ১৬ টেস্টে তাঁর শিকার ৪৭ উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট ৪ বার।
টেস্ট অভিষেকের পর থেকে ঘরের মাঠে উইকেট নেওয়ায় স্পিনারদের মধ্যে শীর্ষ পাঁচে আছেন তাইজুল। তালিকার চারে তাঁর অবস্থান। এ সময় ঘরের মাঠে ৫০ টেস্টে ২৮৮ উইকেট নিয়ে শীর্ষে অশ্বিন। ২০ বার পেয়েছেন ৫ উইকেট।
দ্বিতীয় লায়ন ঘরের মাঠে ৫৬ টেস্টে এ সময়ে নিয়েছেন ২১৩ উইকেট। ৮ বার নিয়েছেন ৫ উইকেট। ৪৪ টেস্টে ২১১ উইকেট নিয়ে তিনে জাদেজা। ৫ উইকেট নিয়েছেন ১২বার। তাইজুল ৩৭ টেস্টে ১৭৭ উইকেট নেওয়ার পথে ৫ উইকেট পেয়েছেন জাদেজার সমান ১২ বার। ২৭ ম্যাচে ১১৪ উইকেট নিয়ে তালিকার পাঁচে মেহেদী হাসান মিরাজ। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ৯ বার।