ভারতের ছেলে ও মেয়ে ক্রিকেটাররা কি সমান বেতন পান
চলমান নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের টানা তিন হারের পর দেশটির ছেলে ও মেয়েদের জাতীয় দলের সমান পারিশ্রমিক পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সমর্থকদের একাংশ।
বিসিসিআই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড। ২০২২ সালের অক্টোবরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তৎকালীন সচিব জয় শাহ ঐতিহাসিক এক ঘোষণা দিয়েছিলেন। বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নারী ক্রিকেটারদের ছেলেদের সমান ম্যাচ ফি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বর্তমান আইসিসি চেয়ারম্যান।
এত দিন পর বিষয়টি সামনে টেনে এনেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে। কারণ? চলমান নারী বিশ্বকাপে ভারতের বাজে পারফরম্যান্স। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানকে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে হারমানপ্রীত কৌরের দল। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এমন বাজে পারফরম্যান্সের পর ভারতের ছেলে ও মেয়েদের জাতীয় দলের সমান পারিশ্রমিক পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সমর্থকদের একাংশ।
প্রশ্ন হচ্ছে, সত্যিই কি ভারতের নারী ও পুরুষ দলের ক্রিকেটাররা সমান পারিশ্রমিক পান?
২০২২ সালের অক্টোবরে জয় শাহর সেই ঘোষণা অনুযায়ী, ভারত জাতীয় নারী দলের খেলোয়াড়েরা টেস্টে ১৫ লাখ রুপি করে ম্যাচ ফি পান। ওয়ানডেতে পান ৬ লাখ রুপি এবং টি–টোয়েন্টিতে ৩ লাখ রুপি। ভারতের জাতীয় পুরুষ দলের ক্রিকেটাররাও মেয়েদের সমান ম্যাচ ফি পান।
ম্যাচ ফি সমান হলেও বোর্ডের সঙ্গে বাৎসরিক চুক্তি থেকে আয়ের হিসাবে ভারত নারী জাতীয় দল পুরুষদের তুলনায় বেশ পিছিয়ে।
বিসিসিআইয়ে মেয়েদের চুক্তিপত্রে তিনটি ক্যাটাগরি—এ, বি ও সি। অন্যদিকে ছেলেদের চুক্তিপত্রে ক্যাটাগরি চারটি—এ+, এ, বি ও সি। এই চার ক্যাটাগরির মধ্যে এ+ সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের গ্রেড।
২০২৪–২৫ মৌসুমে বিসিসিআইয়ের চুক্তিতে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, যশপ্রীত বুমরা ও রবীন্দ্র জাদেজাকে ‘এ+’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মেয়েদের চুক্তিতে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের ক্যাটাগরি ‘এ’তে অর্ন্তভুক্ত করা হয় স্মৃতি মান্ধানা, হারমানপ্রীত কৌর ও দীপ্তি শর্মাকে।
কেন্দ্রীয় চুক্তিতে পারিশ্রমিকের ফারাক
বিসিসিআইয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুযায়ী, ছেলেদের এ+ ক্যাটাগরিভুক্ত খেলোয়াড়েরা বছরে বোর্ডের কাছ থেকে ৭ কোটি রুপি পারিশ্রমিক পান। এরপর এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে পারিশ্রমিক যথাক্রমে ৫ কোটি, ৩ কোটি ও ১ কোটি রুপি।
মেয়েদের এ ক্যাটাগরিতে পারিশ্রমিক ৫০ লাখ রুপি। বি ক্যাটাগরিতে ৩০ লাখ এবং সি ক্যাটাগরিতে ১০ লাখ রুপি।
অর্থাৎ ছেলেদের এ+ ক্যাটাগরিতে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিকের সঙ্গে মেয়েদের এ ক্যাটাগিরতে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিকে ফারাকটা ৬ কোটি ৫০ লাখ রুপি।
ইন্ডিয়া টুডে পারিশ্রমিকের এই ফারাকের ব্যাখ্যায় বলেছে, বাণিজ্যিকভাবে ভারত পুরুষ জাতীয় দলের গ্রহণযোগ্যতা নারী দলের তুলনায় অনেক বেশি। এর পাশাপাশি বড় টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্সেও ছেলেদের দল অনেক এগিয়ে।
অস্ট্রেলিয়ার পর ভারত ছেলেদের জাতীয় দল আইসিসি ইভেন্টে ট্রফি জয়ে সবচেয়ে সফল। কিন্তু ভারত মেয়েদের জাতীয় দল এখনো বৈশ্বিক শিরোপা জিততে পারেনি। এর পাশাপাশি আইপিএলের প্রভাব তো আছেই। সম্প্রচার স্বত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এনএফএলের পরই আইপিএল বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলাধুলার ইভেন্ট।
ভারতে উঠে আসছে মেয়েদের ক্রিকেট
২০২৩ সালে বিসিসিআই উইমেনস ক্রিকেট লিগ (ডব্লুপিএল) চালুর পর ভারতে মেয়েদের ক্রিকেটের পালে জোর হাওয়া লাগে। ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার করায় স্মৃতি মান্ধানা, হারমানপ্রীতরা ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে তারকা ইমেজ পেয়ে গেছেন।
২০২০ সালে ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারত নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আনজুম চোপড়া বলেছিলেন, মেয়েরা একটি আইসিসির বড় ইভেন্ট জিতলেই ছেলেদের দলের সঙ্গে পারিশ্রমিকের পার্থক্য বেশ কমে আসবে।
আনজুম চোপড়া বলেছিলেন, ‘মেয়েদের বিশ্বসেরা—যেটা অস্ট্রেলিয়া—ক্রিকেট দল কী পাচ্ছে, সেটার সঙ্গে সবার আগে তাদের তুলনা করা উচিত। ছেলেদের সঙ্গে তুলনার চেয়ে এটা আমার কাছে ন্যায্য বলে মনে হয়। ছেলেদের ক্রিকেট হলো শীর্ষবিন্দু, কারণটা ভারত ছেলেদের দলের পারফরম্যান্স। আমাদের ভুবনে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পায়। মেয়েদের অস্ট্রেলিয়া দল তাদের ছেলেদের দলের সমান পারিশ্রমিক পায়। কিন্তু মেয়েদের অস্ট্রেলিয়া দল টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জিতেছে। তাই আগে আমাদের নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত...ভারতের মেয়েরাও সমান পারিশ্রমিক পেতে পারে। যে কারণে আমরা পাচ্ছি না তা হলো, আমরা এখনো বিশ্বকাপ জিততে পারিনি।’