রানে ফিরে লিটন: ‘আমি কখনো পঞ্চাশের জন্য খেলি না’

সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস অধিনায়ক লিটন দাসবিসিবি

এবারের বিপিএলে প্রথম ৫ ম্যাচে লিটন দাসের রান মাত্র ৩৭, গড় ৭.৪০। স্ট্রাইক রেটও (৭৫.৪১) ছিল টি-টোয়েন্টির জন্য দৃষ্টিকটু।

সেই লিটনের ব্যাট থেকেই আজ এল ৩০ বলে ৪৫ রানের ইনিংস। ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজানো ইনিংসে ছিল লিটনকে চেনা রূপে ফেরার আভাসও।

নিজের রানে ফেরার দিনে দল জিতলে তো কথাই নেই। শক্তিশালী খুলনা টাইগার্সকে ৩৪ রানে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার তিনে উঠে এসেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। অধিনায়ক হিসেবে লিটনের জন্য আজ যেন সব বক্সেই টিক চিহ্ন পাওয়ার দিন।

লিটনও এমন দিনের অপেক্ষায় ছিলেন। বিপিএল যেহেতু লম্বা টুর্নামেন্ট, একটা পর্যায়ে এসে তিনি রানে ফিরবেন, এই আত্মবিশ্বাস ছিল।

ম্যাচ শেষে বিজয়ী অধিনায়ক হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, ‘আমার কাছে এই জিনিসটা কখনো চাপ হিসেবে আসেনি। দল থেকেও কোনো ধরনের চাপ বা এমন কিছু ছিল না। আর আমি জানি, এটা লম্বা টুর্নামেন্ট। একটা ম্যাচই লাগে একজন ব্যাটসম্যানের জন্য মোমেন্টাম বদলাতে।’

খুলনার বিপক্ষে আজ ৩০ বলে ৪৫ রান করেছেন লিটন
শামসুল হক

তবে রান না পাওয়ায় কিছুটা আক্ষেপ তো ছিলই লিটনের, ‘ব্যাটসম্যান হিসেবে আমার কাজই হলো রান করা। প্রথম পাঁচ ম্যাচে রান করতে পারিনি, আফসোস তো ছিলই যে আমি যে ধরনের ক্রিকেটার, রান করতে পারছি না। এখনো আমার খেলায় উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে। লম্বা টুর্নামেন্ট, অনেক ম্যাচ বাকি। দল আমার কাছে পারফরম্যান্স চায়, আমিও সেটা চেষ্টা করব।’

আজ ইনিংসটাকে দীর্ঘ করারও সুযোগ ছিল লিটনের। এবারের বিপিএলে নিজের প্রথম অর্ধশতও হতে পারত। নাসুম আহমেদের দুর্দান্ত আর্ম ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ায় তা হয়নি। তবে এ নিয়ে লিটনের আক্ষেপ নেই, ‘আমি কখনো পঞ্চাশের জন্য খেলি না। আমার মনে হয় না, একটা পঞ্চাশ হলে আমি লিটন দাস বদলে যাব। আবার না হলে বদলাব না।’

সংবাদ সম্মেলনে এসেছে এবারের বিপিএলে বড় রান না হওয়ার প্রসঙ্গও। রান না হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে লিটনের উত্তর, ‘সব সময় যে উইকেটের দোষ, তা কিন্তু নয়। যারা হিসেব করে ঝুঁকি নিয়ে ক্রিকেট খেলতে পারে, তারা কিন্তু এই মাঠেও...(রান করতে পারবে)। আজকের পরিস্থিতি এমন ছিল, এখানেও কিন্তু ১৭০ রান হওয়ার মতো ছিল। তখন আমরা কেউই উইকেটকে দোষ দিতাম না। আমরা যেকোনো কারণেই হোক পারিনি।’

রিজওয়ানকে নিয়ে কুমিল্লাকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন লিটন
প্রথম আলো

লিটন এরপর বলেছেন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এক সীমাবদ্ধতার কথা, ‘মাঝের ওভারে আমরা রান বের করতে পারিনি। হয়তো ব্যাটসম্যান হিসেবে আমাদের কিছু ঘাটতি আছে। বাংলাদেশ দলেও আমরা এর ভুক্তভোগী। আমরা পাওয়ারপ্লেতে ভালো শুরু করলে মাঝের ওভারে আমরা খেলতে পারি না। আবার কোনো সময় মাঝখানে খেলতে পারলে শেষটা করতে পারি না। এখনো আমরা শেখার প্রক্রিয়ায় আছি। এমন না যে আমরা টি-টোয়েন্টিতে খুব ভালো দল। তবে এই বিপিএলের ম্যাচগুলো চলতে চলতে আমরা শিখে যাব, কীভাবে মাঝের ওভারে ক্রিকেট খেলতে হয়।’

আরও পড়ুন

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে আজকের ম্যাচের উদাহরণ টেনেছেন তিনি, ‘আমরা মাঝের ওভারে খুব একটা ভালো ক্রিকেট খেলিনি। আমরা সবাই বড় বড় শট খেলার চেষ্টা করছি। এখানে ১-২ করে খেলার পথও আছে। বড় বড় ক্রিকেটাররা ১-২ করে করে খেলাটা বানিয়ে নেয়। যেখানে হয়তো আমাদের ঘাটতি আছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি।’

নাসুমের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন লিটন
প্রথম আলো

এবারের বিপিএলে বেশির ভাগ দলের ব্যাটিং অর্ডারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় খেলছেন বিদেশি খেলোয়াড়েরা। টপ অর্ডারে মেরে খেলার দায়িত্বটা বিদেশি খেলোয়াড়দের, ধরে খেলার কাজটা করবেন স্থানীয়রা। মাঝের ওভারেও ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিংয়ের জন্য আছেন স্থানীয়রা। আর ডেথ ওভারে দ্রুত রান তুলতে হবে? তখন ডাক পড়বে বিদেশি ফিনিশারদের।

স্থানীয় ব্যাটসম্যানরা যে তাঁদের দায়িত্বটা ঠিকমতো পালন করতে পারছেন না, তা তো লিটনই বলে দিলেন।