মারা গেলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম আদিবাসী খেলোয়াড় টমাস

ফেইথ টমাস (১৯৩৩-২০২৩)ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

১৯৫৮ সালে ইংল্যান্ড নারী দলের বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলেছিলেন ফেইথ টমাস। অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের টেস্ট ক্রিকেটের ৪৮তম খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। তবে ওই একটি টেস্টই টমাসকে পৌঁছে দেয় ইতিহাসের পাতায়। অস্ট্রেলিয়ার শুধু কোনো ক্রিকেট দল নয়, যেকোনো খেলাতেই জাতীয় দলে ডাক পাওয়া প্রথম আদিবাসী খেলোয়াড় ছিলেন টমাস।

সেই টমাস গত শনিবার মারা গেছেন ৯০ বছর বয়সে। সংবাদমাধ্যমগুলোতে তাঁর মৃত্যুর খবর এসেছে অবশ্য আজ। খেলোয়াড়ি জীবনে ফাস্ট বোলার টমাস এমনিতে পেশায় ছিলেন নার্স। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের সঙ্গে নার্সিং পেশাতেও টমাস এক কিংবদন্তির নাম।

অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ‘স্টোলেন জেনারেশন’ বা চুরি যাওয়া প্রজন্মের একজন ছিলেন টমাস। সরকারের নীতি অনুযায়ী, আদিবাসী পরিবারের কাছ থেকে সন্তান ছিনিয়ে নিয়ে একটা প্রজন্মকে বড় করা হয়েছিল শ্বেতাঙ্গ পরিবারে।

১৯৩৩ সালে নিপাবুন্নায় জন্ম নেওয়া টমাসের মূল নাম ছিল টিন্নিফা। তাঁর মা ছিলেন আদিবাসী, বাবা ছিলেন পোলিশ। টমাসের বেড়ে ওঠা ফেইথ কোল্টহার্ড নামে, সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স রেঞ্জার্সের কোর্নে। ছোটবেলায় ঘরে বানানো ব্যাট ও পাথর দিয়ে ক্রিকেট খেলতেন টমাস।

ক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ক্রিকেট খেলার শুরু প্রসঙ্গে টমাস বলেছিলেন, একবার তাঁর চোখে এসে বল লেগেছিল। ক্ষুব্ধ টমাস এরপর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তিনি এর পর থেকে এমন জোরে বল করবেন যে সেটি থেকে ব্যাটারদের নিজেকে রক্ষা করতে হবে।

অ্যাডিলেডে হাইস্কুল শেষ করার পর নার্সিং পড়া শুরু করেন। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী নার্সদের শুরুর দিকের একজন তিনি। নার্সিংয়ের সময়ই আবারও ক্রিকেটে আসেন টমাস, এক সহকর্মীর আমন্ত্রণে তাঁদের দলের পরের ম্যাচে খেলেন। দ্বিতীয় ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেন টমাস। রান-আপ লম্বা ছিল না মোটেও, তবে ব্যাটারদের ভড়কে দিতে টমাসের গতি যথেষ্ট ছিল।

আরও পড়ুন

রাজ্যদলের হয়ে তিনটি ম্যাচ খেলার পরই জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যান। সে বছর অস্ট্রেলিয়ান একাদশে ডাক পেয়ে প্রথমবারের মতো ট্রেনে করে অ্যাডিলেড থেকে ব্রিসবেন গিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচেই সবাইকে মুগ্ধ করেন টমাস। ইংল্যান্ড অধিনায়ক ম্যারি ডুগানকে বোল্ড করেছিলেন, স্টাম্প নাকি উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে গিয়েছিল। ডুগান বোল্ড হওয়ার পর হাসতে হাসতে বলেছিলেন, জীবনে এমন কিছু দেখেননি।

এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টও খেলে ফেলেন। ড্র হওয়া সে ম্যাচে কোনো উইকেট পাননি। এরপর ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড সফরের দলে ডাক পেয়েছিলেন। তবে নার্সিং পেশা ছেড়ে লম্বা সময়ের জন্য সমুদ্রযাত্রা করে যেতে চাননি বলে সে ডাক উপেক্ষা করেছিলেন।

১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকে গর্ভবতী অবস্থায় নিজের শেষ ম্যাচটি খেলেন টমাস। বার্নার্ড টমাসকে বিয়ে করার পর ফেইথ কোল্টহার্ডের নাম হয় ফেইথ টমাস। অস্ট্রেলিয়ায় অবশ্য ‘আন্টি টমাস’ নামেও পরিচিত তিনি। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ও আদিবাসী সম্প্রদায়ে অবদানের জন্য টমাসকে অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া খেতাবে ভূষিত করা হয়।

আরও পড়ুন

১৯৯৬ সাল পর্যন্ত একমাত্র আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন টমাস, ওই বছর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয় জেসন গিলেস্পির। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় নারী আদিবাসী হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলেন অ্যাশলেই গার্ডনার।

তাঁর স্মরণে নারী বিগ ব্যাশের দল অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স প্রতিবছর পার্থ স্কর্চার্সের বিপক্ষে ফেইথ টমাস ট্রফির ম্যাচ খেলে।

টমাসের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী নিক হকলি বলেছেন, ‘ফেইথ টমাস ক্রিকেট ও সম্প্রদায়ে  অসাধারণ ও অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। তাঁকে জানার সৌভাগ্য যাঁদের হয়েছিল বা যাঁরা তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন, সবার জন্যই এটি অনেক দুঃখের দিন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করা প্রথম আদিবাসী নারী হিসেবে ফেইথ সবার জন্যই প্রেরণা ছিলেন। আমাদের খেলায় গভীর এক ছাপ রেখে গেছেন তিনি।’