জাতীয় দলে অস্থিরতা কমানোর ওষুধ কী
মাঠে পারফরম্যান্স নেই, বাইরে সমালোচনার ঝড়। টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, কাঠগড়ায় উঠছেন কোচিং স্টাফের সদস্যরাও। সব মিলিয়ে অস্থির এক সময়ই কাটছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। তবে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় দলকে ঘিরে থাকা এই অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে চাইছে বিসিবি।
সেটির প্রথম ধাপ হিসেবে কাল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের জন্য অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে নাজমুল হোসেনের নাম। গত জুনে ওয়ানডে সংস্করণে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর নিজেই টেস্ট ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব না করার ঘোষণা দেন নাজমুল। তিন সংস্করণে তিন অধিনায়ক—বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত ছিলেন না তিনি।
নাজমুল টেস্ট নেতৃত্ব ছাড়তে পারেন, সেই সময় এমন খবর জানার পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় বিসিবি। শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগের সংবাদ সম্মেলনে এ সংস্করণে নেতৃত্ব ছাড়ার কথা জানিয়ে দেন নাজমুল। টেস্ট দলের নতুন নেতৃত্বের আলোচনার শুরুতে লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত নাজমুলকেই আবার দায়িত্বে রাখার সিদ্ধান্ত নিল বিসিবি।
বিসিবির এক সূত্র গতকাল প্রথম আলোকে জানিয়েছে, নাজমুলকে রাজি করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় সহসভাপতি ফারুক আহমেদকে। নাজমুলের সঙ্গে গত পরশু রাতে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে হতাশার কথা জানান নাজমুল। দল পরিচালনায় তাঁকে সম্ভাব্য সব ধরনের স্বাধীনতা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পরই টেস্ট দলের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে রাজি হন তিনি।
নাজমুলকেই কেন আবার দায়িত্ব দেওয়া হলো, জানতে চাইলে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমূল আবেদীন কাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, তার মধ্যে টেস্ট দলটাকে গুছিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো মেধা আছে। সে দলের অন্যতম সেরা পারফরমারও।’
তবে নাজমুল আপাতত শুধু টেস্ট অধিনায়কত্বই পাচ্ছেন। হঠাৎ তাঁকে সরিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে ওয়ানডে অধিনায়ক করাটা ‘ভুল’ ছিল বলে মনে করে বোর্ডের একটি পক্ষ। সেই ভুল শোধরাতে গিয়ে মিরাজকে সরিয়ে দিয়ে আরও একটি ‘ভুল’ করতে চাইছে না বোর্ড। কারণ, এতে দলে অস্থিরতা আরও বাড়ার শঙ্কা আছে।
নাজমুলও বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন বলে জানা গেছে। দলের অস্থিরতা নিয়ে বোর্ডকে নাজমুলও তাঁর দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন। ড্রেসিংরুমে একটি ইতিবাচক সংস্কৃতি তৈরি করতে বোর্ডের কাছে সমর্থন চেয়েছেন। নাজমুলকে টেস্টের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে বোর্ড যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সেখানে নাজমুল বলেছেন, ‘বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করে যেতে পারাটা আমার জন্য সত্যিই সম্মানের। আমার নেতৃত্বের প্রতি বোর্ড যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে, তাতে আমি কৃতজ্ঞ।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কোচিং স্টাফের সদস্যদের নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। ব্যাটিং অর্ডারে বেশি অদলবদল নিয়ে অসন্তোষ আছে বোর্ডের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পরিচালকের। গত পরশু রাতে বোর্ডে থাকা চার সাবেক ক্রিকেটারের সভাতেও বিষয়টি এসেছে। তবে কোচদের ক্ষেত্রে বিসিবি ‘ধৈর্য’ ধরার সিদ্ধান্তেই আছে। হুট করেই বড় পরিবর্তন করতে চায় না তারা।
যদিও প্রয়োজন মনে করলে কোচিং স্টাফে বদলের বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন নাজমূল আবেদীন, ‘এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমরা খেলোয়াড়দের যেমন নিয়মিত মূল্যায়ন করি, প্রয়োজন হলে সেখানে বিকল্প নিয়ে আসি। কোচিং স্টাফের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য—সেটা প্রধান কোচ হোক, ব্যাটিং–বোলিং বা ফিল্ডিং কোচ হোক। এটা যে আমাদের মনিটরিংয়ের বাইরে আছে, তা নয়।’
কোচিং স্টাফে কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে নাজমূল আবেদীন যোগ করেন, ‘প্রয়োজনে আমরা অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেব। যদি মনে করি পরিবর্তন দরকার বা অন্যভাবে সাজানো দরকার, তাহলে তা করব।’
আপাতত জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে স্থিরতা ফেরানোই এখন বিসিবির মূল লক্ষ্য।