শুরুর পাঁচ ব্যাটসম্যান মিলে ১৯, ম্যাচের সঙ্গে সিরিজও হারল পাকিস্তান
আবদুল্লাহ শফিক ১, ইমাম-উল-হক ৩, বাবর আজম ১, মোহাম্মদ রিজওয়ান ৫, সালমান আগা ৯।
এই হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৯২ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের স্কোর!
সিরিজের দ্বিতীয় এই ওয়ানডেটা পাকিস্তান হেরেছে আসলে ১২ ওভারের মধ্যেই। ১১.৪ ওভারেই পাকিস্তানের স্কোর ৫ উইকেটে ৩২। এখান থেকে পাকিস্তান যে শেষ পর্যন্ত ২০৮ করতে পেরেছে, সেটাই তো ভাগ্য!
বাকিটা নিউজিল্যান্ডের সিরিজ জয়ের গল্প। নেপিয়ারে প্রথম ম্যাচ ৭৩ রানে জেতার পর আজ হ্যামিল্টনে দ্বিতীয় ম্যাচেও ৮৪ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজও নিজেদের করে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে শনিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ।
নিউজিল্যান্ডের জার্সিটাই এখন হয়তো পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত তিন মাসে এই জার্সি পরা খেলোয়াড়দের কাছে পাকিস্তান ঘরে হারছে, বিদেশে হারছে, আগে ব্যাট করে হারছে, পরে ব্যাট করে হারছে, টি-টোয়েন্টিতে হারছে, ওয়ানডেতে হারছে। যেন নিউজিল্যান্ডের জার্সি গায়ে কারা খেলছে, সেটা এখন বড় কথা নয়!
আজ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও তাড়া করতে নামা পাকিস্তান অলআউট হয়েছে ৪১.২ ওভারে ২০৮ রানে। সর্বোচ্চ ৮০ বলে ৭৩ রান এসেছে সাতে নামা বোলিং অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফের ব্যাট থেকে। হারিস রউফের কনকাশন সাব হিসেবে এগারোয় নামা নাসিম শাহর ব্যাট থেকে এসেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৪ বলে ৫১। অন্যরা ব্যর্থ আর সেই দায় টপ অর্ডারের ওপরই বেশি বর্তায়।
আবদুল্লাহ শফিক, বাবর আজম ও ইমাম–উল–হক ফিরেছেন ছয় ওভারের মধ্যে। ইমাম ও বাবর জ্যাকব ডাফির শিকার, শফিকের উইকেটটি উইল ও’রুর্কের। অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সালমান আগাও বেশিক্ষণ টিকতে না পারায় রান তাড়া ভালোভাবে শুরুর আগেই আসলে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে পাকিস্তান। পরের লড়াই ছিল স্কোর যতটা সম্ভব ভদ্রস্থ করার। তাইব তাহিরের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৫৫ বলে ৩৩ রানের জুটিতে সেটা করার চেষ্টা করেন ফাহিম। তবে পাকিস্তানের ইনিংসে সেরা জুটিটি এসেছে দশম উইকেটে, যা দেখে লজ্জা পেতে পারেন টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। ৩৮তম ওভারে বেন শিয়ার্সের বলে ফাহিম আউট হওয়ার আগে নাসিমের সঙ্গে গড়েন ৫৬ বলে ৬০ রানের জুটি।
পাকিস্তানের সিরিজ হার যা একটু নাসিম শাহই দেরি করাতে পেরেছেন। একাদশে না থাকা এই পেসার কনকাশন সাব হিসেবে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান ২৪.৪ ওভারে ও’রুর্কের বলে হারিস রউফ হেলমেটে আঘাত পাওয়ায়। উঠে আসা বল এড়াতে পারেননি এই পেসার। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে রউফ ফেরার পর ২৮.২ ওভারে আকিফ জাভেদ আউট হওয়ার পর কনকাশন সাব হিসেবে নামেন নাসিম। ৪ ছক্কা ও ৪ চারে ৪১ বলে ওয়ানডেতে নিজের প্রথম ফিফটিও তুলে নেন নাসিম। ৪২তম ওভারে ৪৪ বলে ৫১ রানে আউট হওয়ার আগে শেষ উইকেট জুটিতেও লড়াই করেন এই পেসার। সুফিয়ান মুকিমকে নিয়ে ২২ বলে গড়েন ৩৪ রানের জুটি। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মোহাম্মদ আমিরের পর পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডেতে এগারোয় নেমে ফিফটি পেলেন নাসিম।
সেডন পার্কে মেঘলা আবহাওয়ায় টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৭৮ বলে ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন মিচেল হে। শেষ ওভারে পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিমের মুখোমুখি হওয়ার আগে ৭২ বলে ৭৭ রানে অপরাজিত ছিলেন হে। শেষ ওভারে একাই ব্যাট করে একটি বল ডট দিয়েও দুই ছক্কা ও দুই চারে সব মিলিয়ে ২২ রান তুলতে পারেন। মাত্র একটি রানের জন্য সেঞ্চুরিটা তাঁর হলো না! পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া মুহাম্মদ আব্বাস খেলেন ৬৬ বলে ৪১ রানের ইনিংস। ওপেনার নিক কেলি করেন ২৩ বলে ৩১।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৯২/৮ (হে ৯৯*, আব্বাস ৪১, কেলি ৩১, নিকোলস ২২; সুফিয়ান ২/৩৩, ওয়াসিম ২/৭৮)।
পাকিস্তান: ৪১.২ ওভারে ২০৮ (ফাহিম ৭৩, নাসিম ৫১, তাহির ১৩, সুফিয়ান ১৩*; শিয়ার্স ৫/৫৯, ডাফি ৩/৩৫)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ৮৪ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মিচেল হে (নিউজিল্যান্ড)।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে নিউজিল্যান্ড ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে।