‘নব্বইয়ের দশকের পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা এই প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারেননি’
২৯ বছর পর কোনো বৈশ্বিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে গিয়ে ছয় দিনেই বিদায়—আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তানের গল্পটা এমনই। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ও ভারতের কাছে বাজেভাবে হেরেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে।
যেখানে পান থেকে চুন খসলেই ক্রিকেটারদের দিকে সমালোচনার তির ছোড়া হয়, সেখানে ঘরের মাঠে এত বড় টুর্নামেন্টে রিজওয়ান-বাবর-আফ্রিদিদের বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর সাবেকদের ক্ষুব্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতারের মতো কিংবদন্তিরা টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতে পাকিস্তান দলের সমালোচনা করছেনও। এমনকি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান জেলে থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার ও সাবেক প্রধান কোচ মোহাম্মদ হাফিজ ঢালাওভাবে বাবর-রিজওয়ানদের সমালোচনার পক্ষে নন। হাফিজের মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের বর্তমান দল ব্যর্থ হওয়ায় যাঁরা বাবর-রিজওয়ানদের একহাত নিচ্ছেন, তাঁরা দেশের হয়ে কিছুই জেতেননি, যা দেখে এই প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে।
‘আউটসাইড এজ’ নামে এক সরাসরি অনুষ্ঠানে হাফিজ এ কথা বলেছেন। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার, সাবেক অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক ও নারী দলের সাবেক অধিনায়ক সানা মির।
হাফিজ প্রথমে বলেছেন, ‘১৯৯০-এর দশকে যাঁরা খেলেছেন, আমি তাঁদের অনেক বড় ভক্ত। কিন্তু লিগ্যাসির কথা বলতে গেলে, তাঁরা পাকিস্তানের জন্য কিছুই রেখে যাননি। তাঁরা আইসিসির কোনো ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি—১৯৯৬, ১৯৯৯ ও ২০০৩ বিশ্বকাপে হেরে গেছেন। একবার ফাইনালে (১৯৯৯ বিশ্বকাপ) উঠেছিলেন, কিন্তু বাজেভাবে হেরে গেছেন।’
এরপর হাফিজ বলেছেন, ‘তাঁরা একেকজন মহাতারকা। কিন্তু আইসিসি ইভেন্ট জিততে না পারায় তাঁরা এই প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারেননি। এরপর পাকিস্তান ক্রিকেটে কঠিন সময় এসেছিল এবং আমাদের সেই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ২০০৭ সালে (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে) আমরা হেরে গিয়েছি। এরপর ২০০৯ সালে ইউনিস খানের অধিনায়কত্বে (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) জিতেছি। এটা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ছিল। দুভার্গ্যবশত এরপর পাকিস্তান ক্রিকেটে খারাপ ঘটনা ঘটে এবং আমরা এখনো সেই ক্ষত থেকে সেরে উঠতে পারিনি। তারপর আমরা ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতলাম এবং সেটা অনুপ্রেরণার অনেক বড় উৎস হয়ে উঠল। মানুষ (তরুণেরা) এখন বাবর আজমকে আদর্শ মনে করে। কারণ, ওই টুর্নামেন্টে সে বড় কিছু করতে না পারলেও সেই দলের অংশ ছিল।’
হাফিজের কথার জবাবে শোয়েব আখতার তাঁদের সময়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দেন, ‘ভারতের বিপক্ষে আমরা যে ৭৩ ওয়ানডে জিতেছি, (এর বেশির ভাগই) আমাদের সময়ে।’
এ কথা শুনে হাফিজ ১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জেতা পাকিস্তান দলের অবদানের কথা তুলতে ধরতে ও প্রশংসা করতে চাইলে শোয়েব আখতার তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এই ভিডিও এরই মধ্যে রেকর্ড হয়ে গেছে। তুমি বড় মাপের সব খেলোয়াড়কে নিয়ে তোমার মত তুলে ধরেছ। এখন আর কোনো কিছু লুকাতে পারবে না।’
নব্বইয়ের দশকের ক্রিকেটারদের নিয়ে হাফিজের মন্তব্য নিশ্চয় ওয়াকার ইউনিসের কানেও গেছে। কথাটা যে তাঁর ভালো লাগেনি, সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে কাল রাতে এক পোস্ট দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন।
নিজের এক্স হ্যান্ডলে ওয়াসিম আকরামের সঙ্গে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছেন ওয়াকার। ক্যাপশনে লিখেছেন ‘৯০–এর দশকের ছোকরা’। এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুজনের সম্মিলিত ম্যাচ, রান ও উইকেট সংখ্যা জানিয়ে লিখেছেন, ‘(এই অর্জন) খারাপ নয়’।
পাকিস্তান দলের পরবর্তী অভিযান নিউজিল্যান্ড সফর। ১৬ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ও তিনটি ওয়ানডে খেলবে পাকিস্তান। অন্তর্বর্তীকালীন কোচ আকিব জাভেদ এই সফরেও দায়িত্বে থাকছেন। তবে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়েছেন বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও নাসিম শাহ। ওয়ানডে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে শাহিন আফ্রিদিকে।