লায়নের স্বপ্নের ডেলিভারিতে ম্যাকগ্রা কেন চেয়ার ছুড়ে মারতে চাইলেন

প্রথম আলো গ্রাফিকস

বিবিসির হয়ে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। মাঠে বোলিংয়ে নাথান লায়ন। (১০ম) ওভারের তৃতীয় বলেই উইকেট নেওয়া এই অফ স্পিনার ওভারের শেষ বলটি করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ম্যাকগ্রা তখন জানতেন, তাঁর পেছনে পড়া শুধুই সময়ের ব্যাপার; কিন্তু সেটা যে তখনই ঘটবে, তা জানত কে!

লায়নের ডেলিভারিটাও ছিল দুর্দান্ত—বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে যেকোনো অফ স্পিনারের স্বপ্নের ডেলিভারি। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকালের অন্যতম সেরা পেসারকে পেছনে ফেলতে অমন একটা ডেলিভারি যেন কিংবদন্তির প্রতি একদম যথাযথ নৈবেদ্য।

ক্রিকেটীয় ভাষায় বলতে পারেন ‘পিচ অব আ ডেলিভারি!’

বলটা পড়ল মাঝ স্টাম্প বরাবর ভালো লেংথে। তাতে বেন ডাকেট সামনের পা চম্বুকের মতো চলে এল সামনে, কারণ ফ্রন্টফুট ডিফেন্স করতে হতো। কিন্তু বল বেশ খানিকটা বাঁক নিয়ে ডাকেটের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে ফেলে দেয় অফ স্টাম্পের বেলস। হতভম্ব ডাকেট চারপাশটা একটু দেখে ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটা ধরার সময় ধারাভাষ্যকক্ষে সত্যটা বলে দেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ‘ডাকেটকে বিভ্রান্ত মনে হচ্ছে।’

অর্থাৎ লায়ন আসলে এক ডেলিভারিতে দুই ‘শিকার’ করলেন—ডাকেট ও ম্যাকগ্রা!

ডাকেটের ব্যাপার তো বলাই হলো। ওই ওভারের তৃতীয় বলে ওলি পোপ ‘আত্মাহুতি’ দেওয়ায় ম্যাকগ্রাকে ছুঁয়ে ফেলেন লায়ন। টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ম্যাকগ্রা ও লায়নের উইকেটসংখ্যা তখন সমান—৫৬৩। এরপর কী ঘটতে পারে, সেটা দুই পক্ষেরই জানা ছিল। আর সেটাই ঘটল দুই বল পরই ডাকেটের আউটের মধ্য দিয়ে—ম্যাকগ্রাকে পেছনে ফেলে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এখন ‘গোট’ লায়ন।সামনে শুধুই শেন ওয়ার্ন।

আউট হয়ে হতভম্ব ডাকেট
এএফপি

ওদিকে বিবিসির ধারাভাষ্যকক্ষে বসে কারও পেছনে পড়া ম্যাকগ্রার সহ্য হবে কেন! ডাকেটের আউট হওয়া দেখেই চিরকালীন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মানসিকতার ‘পিজিয়ন’ হতাশায় দুই হাত প্রথমে মাথার ওপর তুললেন। এরপর পাশের চেয়ারটি তুলে ছুড়ে মারতে গিয়ে কী ভেবে রেখে দিলেন।

অবশ্য তারপরই কিংবদন্তির মুখে হাসি। অর্থাৎ লায়নের পেছনে পড়ায় ম্যাকগ্রা আসলে খুশিই হয়েছেন। কিন্তু পেসার হিসেবে নিজের জাতটা আবারও মনে করিয়ে দিতে ওই হতাশাপূর্ণ ভণিতাটুকুরও খুব দরকার ছিল। এই প্রজন্ম জেনে রাখুক, লায়ন কাকে টপকে গেলেন!

১২৪ টেস্টে ২৪৩ ইনিংসে বোলিং করে ২১.৬৪ গড়ে ৫৬৩ উইকেট। এমন এক ‘পাহাড়’ গড়ে ২০০৭ সালে অবসর নেওয়ার পর ১৮ বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়াটি আগলে রেখেছিলেন ম্যাকগ্রা। লায়ন তাঁর ক্যারিয়ারের ১৪১তম টেস্টে ২৬১তম ইনিংসে বোলিং করে ৫৬৪ উইকেট নিয়ে পেছনে ফেললেন তাঁকে।

এখন অন্তত বলাই যায়, ফেরাটাও কী দারুণ হলো লায়নের!

এবারের অ্যাশেজে পার্থে বোলিং করেছিলেন মাত্র ২ ওভার। ব্রিসবেনে দলেই জায়গা পাননি। গোলাপি টেস্টে শুধু পেসারদের খেলায় অস্ট্রেলিয়া। লায়ন তখন খেপেছিলেন। বাদ পড়াটা ‘নোংরা’ মনে হয়েছিল তাঁর নিজের কাছে। তবে অ্যাডিলেডের স্পিনবান্ধব উইকেটে তাঁকে দলে ফেরানোর বিকল্পও ছিল না অস্ট্রেলিয়ার। ফিরেই আজ টেস্টে দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট বোলিংয়ের ইতিহাসটা লিখলেন নতুন করে। তবে সে জন্য অপেক্ষায়ও থাকতে হয়েছে লম্বা সময়।

আরও পড়ুন

পাঁচ মাস ৫৬২ উইকেটে আটকে ছিলেন লায়ন। অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ তিন টেস্টের মধ্যে দুটিতেই খেলার সুযোগ পাননি। এর মধ্যে দুটি টেস্টই ছিল দিবা-রাত্রির গোলাপি বলে—যেখানে ‘অল পেস অ্যাটাক’ নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকেরা। এই তিন টেস্টের সময়কাল ধরে গত ১২ জুলাই (কিংস্টনে দিবা–রাত্রির টেস্ট) থেকে হিসাব করলে লায়ন টেস্ট ক্রিকেটে আসলে বোলিং করছেন মাত্র দুই ওভার (পার্থ টেস্ট)। উইকেট পাননি। কিন্তু অ্যাডিলেডে নিজের প্রথম ওভারেই পেলেন ২ উইকেট—টেস্ট ক্রিকেট সত্যিই রোমাঞ্চকর!

প্রয়াত ওয়ার্নকে ধরতে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে ৩৮ বছর বয়সী লায়নকে। ১৪৫ টেস্টে ২৭৩ ইনিংসে ২৫.৪১ গড়ে ৭০৮ উইকেট ওয়ার্নের। লায়ন এর আগে জানিয়েছেন, তিনি ইংল্যান্ডে অন্তত ২০২৭ অ্যাশেজ পর্যন্ত খেলতে চান।

৮৩ ওভারে ৮ উইকেটে ৩২৬ রানে অ্যাডিলেডে প্রথম দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। আজ আরও ৮.২ ওভার খেলে ৯১.২ ওভারে ৩৭১ রানে নিজেদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড এরপর তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম সেশন শেষ হওয়ার আগেই বিপদে পড়ে। এই সেশনে ১৪ ওভার ব্যাট করে ৫৯ রান তুলতেই জ্যাক ক্রলি (৯), ডাকেট (২৯) ও পোপকে (৩) হারায় ইংল্যান্ড।

ক্রলির উইকেটটি নেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। দ্বিতীয় সেশনে ইংল্যান্ডের ইনিংসে ১৭তম ওভারে জো রুটকেও (১৯) তুলে নেন কামিন্স। পঞ্চম উইকেটে স্টোকস ও ব্রুকের ৫৬ রানের জুটি ভাঙেন ক্যামেরন গ্রিন। ৪৫ রান করা ব্রুককে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৭ ওভারে ৫ উইকেটে ১২৭ রান তুলেছে ইংল্যান্ড। ক্রিজে আছেন বেন স্টোকস (১৯*) ও জেমি স্মিথ (০*)।