ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভেঙে দিতে বললেন আইসিসির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান
ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় ক্রিকেট দল গঠিত ১৪টি অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে। আইসিসিতে সদ্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়া গ্রেগ বার্কলে একটি কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্ন তুলেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দল ভেঙে দিয়ে ১৪টি অ্যাসোসিয়েশনের আলাদা আলাদা দল গঠনের সময়টা এখনই কি না?
ক্রাইস্টচার্চে ১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড টেস্ট চলাকালীন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন বার্কলে। গতকাল সাক্ষাৎকারটি নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে টেলিগ্রাফ।
সেই সাক্ষাৎকারে আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের দুর্দিন নিয়েও কথা বলেছেন বার্কলে। জাতীয় দলের খেলার মান পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে আর্থিকভাবেও দুর্দিন যাচ্ছে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের (সিডব্লুআই)। বিশেষ করে কোভিড মহামারির সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। ২০২৪ থেকে ২০২৭ পর্যন্ত আইসিসির মডেল অনুযায়ী, সংস্থাটির আয়ের ৫ শতাংশ অর্থও তারা পাবে না।
সাক্ষাৎকারে বার্কলে বলেছেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে তাকান। ওরা যা করেছে খেলাটির জন্য, সেটা আমি ভালোবাসি। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে কি টিকতে পারবে? তাদের জন্য প্রতিটি দ্বীপে ভাগ হয়ে যাওয়ার সময়টা কি এখনই?’
নিউজিল্যান্ডের এই ক্রিকেট প্রশাসক গত ৩০ নভেম্বর আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের মেয়াদ পূর্ণ করে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর জায়গা নিয়েছেন বিসিসিআইয়ের সাবেক সচিব জয় শাহ। গ্রেগ বার্কলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিষয়টি আরও বুঝিয়ে বলেছেন এভাবে, ‘ব্যাপার হলো তারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) কি (টেস্ট ক্রিকেট) চালিয়ে যেতে পারবে? আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ যে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করাটা তাদের জন্য এখন খুব কঠিন হয়ে গেছে। ব্যাপারটা যদি এভাবে ভাবেন, ক্রিকেট ছাড়া তাদের দ্বীপগুলোর মধ্যে আর কোনো কিছুতেই মিল নেই। তারপর নিজেদের একত্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হিসেবে ধরে রেখে তারা ক্রিকেটে যা অর্জন করেছে, সেটা অবিশ্বাস্য।’
বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টে ক্যারিবিয়ান এই দ্বীপগুলোর আলাদা হয়ে অংশ নেওয়ার ব্যাপারটি তুলে ধরেন বার্কলে। তিনি মনে করেন ক্রিকেটেও এমন ভবিষ্যৎ আসতে পারে, ‘অলিম্পিকসহ আরও কিছু একাধিক ইভেন্টের ক্রীড়া আসরে একটি বিষয় চোখে পড়ে বলে আমি মনে করি। গত বছর চীনে তারা এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট খেলেছে। আফ্রিকান গেমসও আছে, যেখানে ক্রিকেটও ছিল প্রথমবারের মতো। তারা প্যান আমেরিকান গেমসেও খেলতে চায়। তাহলে একাধিক ক্রীড়া ইভেন্টের আসরগুলোয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কি হয়? বার্মিংহামে কমনওয়েলথ গেমসে বার্বাডোজ শুধু তাদের অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছে। ভবিষ্যতে (ক্রিকেটে) কি হবে, এটা তার ছোট্ট ইঙ্গিত? আমি জানি না।’
একদিকে আপনার পূর্ণ সদস্যদেশ, অন্যদিকে সহযোগী দেশ। এগুলোর বিলোপ করে সামনে এগিয়ে যাও। কেউ হয়তো শীর্ষে থাকবে, কেউ ১২০তম। এসবের ওঠানামাও থাকবে। মাঠ ও মাঠের বাইরে মিলিয়ে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে র্যাঙ্কিং হোক। যত ওপরে উঠবেন, তত অর্থ পাবেন, তত আলোচনায় থাকবেন। পারফর্ম না করলে নিচে নেমে যেতে হবে।গ্রেগ বার্কলে, আইসিসির সাবেক চেয়ারম্যান
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট মর্যাদা ধরে রাখা তাদের স্বার্থে সেরা সিদ্ধান্ত হয় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ২০২০ সালে আইসিসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়া বার্কলে। আয়ারল্যান্ডের উদাহরণ টেনে তিনি বলেছেন, ‘কিছু অবকাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে ভাবা দরকার। কিছু দেশ টেস্ট ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করছে, যেটা তাদের হয়তো অনুচিত। আয়ারল্যান্ড কেন টেস্ট ক্রিকেট খেলছে? (আইসিসি থেকে) যে অর্থই তারা পাক, সেটা তৃণমূলে খাটিয়ে (খেলোয়াড় ও প্রতিযোগিতা) সংখ্যাটা বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। সংক্ষিপ্ত সংস্করণই হলো ছোটদের এই খেলায় আনার একমাত্র উপায়। শনিবার কিংবা রোববার তারা সারা দিন লাল বলের ক্রিকেট খেলবে না। এটা ঘটবে না। সেই চেষ্টাও অর্থহীন। যতবারই তারা টেস্ট খেলতে নামে, ততবারই প্রচুর অর্থ হারায়। এটা করার কী কারণ? এর কোনো মানে নেই। জিম্বাবুয়ে কেন টেস্ট খেলছে? তারা সম্প্রচার চুক্তিতেও লোকসান দেয়। এসবের কোনো মানে হয় না।’
আইসিসির অবকাঠামোগত পরিবর্তনের কথাও বলেছেন বার্কলে। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক এ সংস্থার পূর্ণ সদস্য (টেস্ট মর্যাদার) ১২টি দেশ। টেস্ট খেলুড়ে ছেলেদের জাতীয় দলও ১২টি। সহযোগী সদস্য দেশ ৯০টিরও বেশি। কিন্তু আইসিসির আয় করা অর্থের সিংহভাগ ভাগাভাগি হয় ১২টি পূর্ণ সদস্য দেশের মধ্যে। বার্কলে মনে করেন, পূর্ণ সদস্যপদের বিলোপসাধন করে রাজস্বের ভাগটা সম্পূর্ণ পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে দেওয়া উচিত।
বার্কলে এ নিয়ে বলেছেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলতে পারে, আমরা কেন পূর্ণ সদস্য থেকে ১৪টি অ্যাসোসিয়েশনে ভাগ হব (যদি দ্বীপগুলো ভাগ হয়)? কিন্তু ঠিকঠাক পরিচালনা করতে এটাই ভাবতে হবে। ক্রিকেট একটা অনন্য খেলা। একদিকে আপনার পূর্ণ সদস্যদেশ, অন্যদিকে সহযোগী দেশ। এগুলোর বিলোপ করে সামনে এগিয়ে যাও। কেউ হয়তো শীর্ষে থাকবে, কেউ ১২০তম। এসবের ওঠানামাও থাকবে। মাঠ ও মাঠের বাইরে মিলিয়ে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে র্যাঙ্কিং হোক। যত ওপরে উঠবেন, তত অর্থ পাবেন, তত আলোচনায় থাকবেন। পারফর্ম না করলে নিচে নেমে যেতে হবে।’