বুমরার সৌজন্যেই ৬ রানের লিড ভারতের
‘আরেকটি অনবদ্য ডেলিভারি। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ কোনাকুনি ভেতরে ঢুকে গেছে। খেলা অসম্ভব—যশপ্রীত বুমরার এমন ডেলিভারিটি উড়িয়ে দিল বেলস। বোল্ড হয়ে ফিরলেন ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যান জশ টাং। ভারতকে ৬ রানের লিড এনে দিলেন বুমরা!’
গতকাল হেডিংলি টেস্টের তৃতীয় দিনে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের শেষ বলটিকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন ক্রিকইনফোর ধারাভাষ্যকার। সত্যিই তাই, ‘জীবনের পর জীবন’ পেয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন, বল হাতে বুমরা ঝড় তুলতে না পারলে প্রথম ইনিংসে ভারতেরই পিছিয়ে থাকার কথা। ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে ১০০.৪ ওভারে ৪.৬১ গড়ে যেখানে ৪৬৫ রান তুলেছে, বুমরা সেখানে ২৪.৪ ওভারে মাত্র ৮৩ রান দিয়েছেন। ইকোনমি মাত্র ৩.৩৬, উইকেট নিয়েছেন পাঁচটি। বিদেশের মাটিতে ইনিংসে এটি বুমরার ১২তম ৫ উইকেট। বিদেশের মাটিতে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে তাঁর সমান ১২ বার ৫ উইকেট আছে আর শুধু কপিল দেবের। এরপর অনিল কুম্বলে (১০ বার)।
ভারতের বোলারদের মধ্যে অবশ্য সবচেয়ে কিপটে ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা, ২৩ ওভার বোলিং করে ২.৯৫ ইকোনমিতে দিয়েছেন ৬৮ রান। তবে তিনি কোনো উইকেট পাননি। প্রসিধ কৃষ্ণা তিন উইকেট নিয়েছেন, মোহাম্মদ সিরাজ দুটি। কিন্তু প্রসিধ ওভারপ্রতি দিয়েছেন ৬.৪০ রান করে, সিরাজের ইকোনমি ৪.৫১।
বুমরার এমন বোলিং ছাড়াই অবশ্য প্রথম ইনিংসে আরও বেশি রানে এগিয়ে থাকতে পারত ভারত। কিন্তু ভাগ্য তাদের পক্ষে ছিল না। পুরো ইনিংসে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা পাঁচ পাঁচটি জীবন পেয়েছেন। সেই জীবনগুলো এ রকম—ওলি পোপ ৬২ রানে ‘জীবন’ পেয়ে করেছেন ১০৬ রান, বেন ডাকেট ১৫ রানে ‘জীবন’ পেয়ে আউট হয়েছেন ৬২ রানে আর হ্যারি ব্রুক শূন্য, ৪৬ ও ৮২ রানে পেয়েছেন ‘জীবন’। শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হয়েছেন ৯৯ রানে।
ব্রুকের তিন ‘জীবনের’ দুটিই বুমরার বলে। শূন্য রানে তিনি বুমরার বলে ক্যাচ তুলেছিলেন, সেই ক্যাচ সিরাজ নিয়েছিলেনও। কিন্তু বুমরার বলটি ছিল ‘নো’। এরপর ৪৬ রানে জাদেজার বলে ক্যাচ ছাড়েন ঋষভ পন্ত আর বুমরার বলে ৮৬ রানে চতুর্থ স্লিপে ক্যাচ ছাড়েন যশস্বী জয়সোয়াল। সব মিলিয়ে ১ রানের জন্য ঘরের মাঠে সেঞ্চুরি মিস করা ব্রুক যেমন আক্ষেপ করতে পারেন, তেমনি শূন্য রানে ‘নো’ বলের কল্যাণে বেঁচে যাওয়ায় ৯৯ রানকে বোনাসও ভাবতে পারেন!
আউট হওয়ার আগে অবশ্য তিনটি ভালো জুটি গড়েছেন ব্রুক। পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক বেন স্টোকসের সঙ্গে ৫১, ষষ্ঠ উইকেটে জেমি স্মিথের সঙ্গে ৭৩ আর সপ্তম উইকেটে ক্রিস ওকসের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়েছেন তিনি। বাজবলের আরও একটি উদাহরণ তৈরি করে ব্রুক ৯৯ রানে পৌঁছেছিলেন ১১১ বলে। তিন অঙ্কেও পৌঁছাতে চেয়েছিলেন বড় শট খেলে। কিন্তু সেটাই কাল হয়েছে তাঁর। প্রসিধ কৃষ্ণার বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন সীমানার কাছে। ব্রুকের আউটের পর কার্সকে নিয়ে বাজবল খেলেছেন ক্রিস ওকস। ব্রাইডন কার্সের সঙ্গে অষ্টম উইকেট জুটিতে মাত্র ৪৪ বলে তুলেছেন ৫৫ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টির কারণে দিনের খেলা একটু আগেভাগে শেষ হওয়ার আগে ২ উইকেট হারিয়ে ৯০ রান তুলেছে ভারত। সব মিলিয়ে ৯৬ রানে এগিয়ে আছে তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৪৭১ ও ৯০/২ (জয়সোয়াল ৪, রাহুল ৪৭*, সুদর্শন ৩০, গিল ৬*; কার্স ১/২৭, স্টোকস ১/১৮)।
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১০০.৪ ওভারে ৪৬৫ (পোপ ১০৬, ব্রুক ৯৯, স্মিথ ৪০, ওকস ৩৮, কার্স ২২, স্টোকস ২০; বুমরা ৫/৮৩, প্রসিধ কৃষ্ণা ৩/১২৮, সিরাজ ২/১২২, জাদেজা ০/৬৮, শার্দূল ০/৩৮)।