পানিশূন্যতায় ভুগছে চট্টগ্রামের টেস্ট ভেন্যু: দিনে লাগে ৪ লাখ লিটার, পাচ্ছে ২ লাখ
মাসখানেক আগেও যদি কেউ চট্টগ্রামের টেস্ট ভেন্যু বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে (আগের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম) যেতেন, ধূসর মাঠ দেখে অবাক হয়ে ভাবতেন—এই মাঠে কীভাবে টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে দল!
এখন আর সেই ভাবনা আসবে না; কারণ, চট্টগ্রামের মাঠ অনেকটাই ঢেকেছে সবুজ ঘাসে। ২৮ এপ্রিল শুরু বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য স্পোর্টিং উইকেট বানানোর চিন্তা মাথায় রেখে উইকেটেও রাখা হয়েছে হালকা ঘাস। তবে পানির সংকটে ভুগতে থাকা স্টেডিয়ামটির এই চেহারা সাময়িক। পর্যাপ্ত পানির অভাবে জিম্বাবুয়ে টেস্টের পরই মাঠটা আবার নিতে পারে ধূসর চেহারা।
বাংলাদেশের সব টেস্ট ভেন্যুতে নিজস্ব পানির ব্যবস্থা থাকলেও ব্যতিক্রম চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়াম। মাঠটি সমুদ্রের খুব কাছে বলে সাধারণ পাম্প দিয়ে পানি তুললে লোনাপানি ওঠে, যেটি মাঠের জন্য ক্ষতিকর। মাঠ সবুজ রাখতে ছিটাতে হয় মিঠাপানি, যার জন্য স্টেডিয়ামে ডিপ টিউবওয়েল বসানো জরুরি। সে জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার কাছে আবেদনও করা হয়েছে বলে কাল প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির প্রধান মাহবুবুল আনাম। ওয়াসার অনুমতি মিললে মাঠের তিনটি স্থানে বোরিং করে মিঠাপানির সন্ধান করে উপযুক্ত জায়গায় ডিপ টিউবওয়েল বসানো হবে।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের মাঠে সমস্যা আছে আরও। ২০১১-১২ সালের পর আর এই মাঠে কোনো সংস্কারকাজ হয়নি, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পানিনিষ্কাশনব্যবস্থায়। নতুন ঘাস লাগানোও প্রয়োজন মনে করছেন মাঠসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তার আগপর্যন্ত ওয়াসা থেকে পানি কিনেই মাঠ ভেজানোর কাজ চালাতে হচ্ছে বিসিবিকে। কিন্তু সংকট সেখানেও। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, এই স্টেডিয়ামের জন্য প্রতিদিন চার লাখ লিটার পানির প্রয়োজন। ওয়াসার কাছ থেকে বিশেষ সরবরাহব্যবস্থায় সেই পানি কিনে নেওয়া হয়, যার মূল্য পড়ে প্রতি ১ হাজার লিটার বা ১ ইউনিটে ১৮ টাকা।
কিন্তু চট্টগ্রামের পানিসংকটের কারণে অনেক দিন ধরেই মাঠের জন্য চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে পারছে না ওয়াসা। মাঝে প্রতি ৮-১০ দিনে এক দিন হয়তো পানি দেওয়া গেছে। বাকি দিনগুলোতে শুষ্ক পড়ে থেকেছে মাঠ। জিম্বাবুয়ে টেস্ট উপলক্ষে অবশ্য সপ্তাহখানেক ধরে দৈনিক ২ লাখ লিটার পানি দিচ্ছে ওয়াসা। চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী ইফতেখার উল্লাহও কাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সাগরিকা স্টেডিয়ামে চাহিদার কাছাকাছি পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।’ সঙ্গে গত সপ্তাহে হওয়া দুই দিনের বৃষ্টি মিলিয়ে স্টেডিয়াম ফিরেছে কিছুটা সবুজ চেহারায়। এ ছাড়া মাঠের পাশের পুকুর থেকেও পাম্পের মাধ্যমে সাময়িক পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে তখন।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের মাঠে সমস্যা আছে আরও। ২০১১-১২ সালের পর আর এই মাঠে কোনো সংস্কারকাজ হয়নি, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পানিনিষ্কাশনব্যবস্থায়। নতুন ঘাস লাগানোও প্রয়োজন মনে করছেন মাঠসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে সবার আগে প্রয়োজন নিজস্ব পানির ব্যবস্থা। মাহবুবুল আনামও জোর দিচ্ছেন সেদিকে, ‘ডিপ টিউবওয়েল বসানোর অনুমতি চাওয়ার পাশাপাশি আমরা মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের দুজন অধ্যাপকের পরামর্শ নিচ্ছি। সাধারণ পাম্পের মাধ্যমে যে লোনাপানি আসে, সেটার বৈজ্ঞানিক সমাধানও খোঁজার চেষ্টা করব আমরা, যদি এই পানিটা লোনামুক্ত করে ব্যবহার করা যায়...। পাশাপাশি মাঠের জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের চিন্তাও আছে।’